নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেছেন, ইভিডেন্স বেইজড মেডিসিন বা প্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখা ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবহার প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা রাখবে। আর এই পদ্ধতির চর্চা দেশের চিকিৎসক সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে বিএমইউর ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইকিউএসি’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. নুরুন নাহার খানম। সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত পরিচালক ডা. দীন-ই-মুজাহিদ মোহাম্মদ ফারুক ওসমানী ও ডা. তারেক রেজা আলী।
অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অনেক ক্ষেত্রেই এখনো একক চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা ও অনুমানের ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে থাকে। এতে করে অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় ওষুধ, পরীক্ষা এবং ব্যয়বহুল চিকিৎসার বোঝা রোগীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন চর্চা শুরু হলে চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক গবেষণালব্ধ তথ্য ও সর্বশেষ ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন অনুসরণ করবেন। এর ফলে চিকিৎসার মান যেমন উন্নত হবে, তেমনি চিকিৎসা ব্যয়ও অনেকাংশে কমে আসবে।
তিনি আরও বলেন, একজন রোগী যদি একাধিক চিকিৎসকের কাছেও যান, তাহলেও যদি সবাই এভিডেন্স বেইজড চিকিৎসা চর্চা করেন, তাহলে রোগীর প্রেসক্রিপশন হবে অনেকটাই অভিন্ন, সঙ্গতিপূর্ণ ও বৈজ্ঞানিক। রোগীর ভোগান্তি কমবে, আবার দেশে চিকিৎসার ওপর আস্থা বাড়বে।
উপাচার্য বলেন, এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম কেবল একটি প্রজেক্ট নয়, বরং ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিত শক্ত করার একটি আন্দোলন। চিকিৎসকরা যত বেশি বিজ্ঞানভিত্তিক হবেন, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা তত বেশি মানবিক ও কার্যকর হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই কর্মশালার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি বিভাগের মোট ৮৫ জন শিক্ষক ও চিকিৎসককে এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ তথ্য কীভাবে ব্যবহার করা যায়, কীভাবে একাধিক স্টাডি, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও গাইডলাইন বিশ্লেষণ করে প্রেসক্রিপশন তৈরি করতে হয়—তা হাতে-কলমে শিখেছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে এখনো অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানা ওষুধ অকারণে প্রেসক্রাইব করা হয়। অনেক সময় রোগীকে শুধু ওষুধ লিখেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়—যার কোনো প্রমাণভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা থাকে না। এভিডেন্স বেইজড চিকিৎসা হলে এমন পরিস্থিতি অনেকটাই কমে আসবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্বব্যাপী প্রেসক্রিপশনের ৫০ শতােশের বেশি ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যার একটি বড় অংশ উন্নয়নশীল দেশে ঘটে। বাংলাদেশেও অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারের হার আশঙ্কাজনক। স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠেকাতে এভিডেন্স বেইজড মেডিসিন চর্চার বিকল্প নেই।
আইকিউএসি’র পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়কালে আইকিউএসি’র আয়োজনে স্ট্রাকচারড ক্লিনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট স্টেশন প্রিপারেশন, আউটকাম বেইজড কারিকুলাম, প্রশ্ন প্রণয়ন ও মূল্যায়ন, সরকারি ক্রয় বিধিমালা, ই-জিপি, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ও এভিডেন্স বেইজড মেডিসিনসহ মোট আটটি বিষয়ে প্রায় ৫০০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন বলেও জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ।