১২
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় সময়ই রোগী ও স্বজনদের ভিড় লেগেই থাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বিশেষ করে জরুরি বিভাগের সামনে। রাজধানী কিংবা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা অন্যান্য যানবাহনে কিছুক্ষণ পর পর রোগী আসছেন তাদের কেউ মুমূর্ষু রোগী, কেউবা সড়ক দুর্ঘটনায় রক্তাক্ত হয়ে কিংবা অন্য কোন ভাবে আহত হয়ে, আবার কেউ ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে, আবার কেউ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আর সেবা দিতে গলদঘর্ম অবস্থা তৈরি হয় চিকিৎসক নার্সদের। অথচ এখানে নেই কোন হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা কিংবা টয়লেট। যদিও করোনাকালীন সময়ে জরুরী বিভাগের বাইরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ছিল কিন্তু এখন তার কোন অস্তিস্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে দূর-দুরান্ত থেকে আসা রোগী ও স্বজনদের একদিকে যেমন ভোগান্তি পোহাতে হয় তেমন অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
শুধু জরুরী বিভাগে নয় ঢামেকের বর্হিবিভাগ এবং নতুন ভবনের সামনেও করোনার সময়ে আলাদা বেসিন তৈরি করা হয়েছিল এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। পুরো হাসপাতালের কোথাও জীবাণুনাশক টানেল চোখে পড়েনি। একই অবস্থা রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও (বিএসএমএমইউ)।
সোমবার ঢামেকে জরুরী বিভাগ, ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে (ওসেক), ইমাজেন্সি অপারেশন রুম, এক্সরে রুম সিটি স্ক্যান রুম এবং অবজারবেশন রুম। তার বাহিরেই রোগীদের টিকিট কাউন্টার। আর রুম এক সাথে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু ঘুরে করোনার সময়ে নির্মিত হাত ধোয়ার বেসিন ও জীবাণুনাশকের কোন ব্যবস্থা দেখা যায়নি। আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা সাবান ব্যবহারের প্রশ্নই আসে না। এদিন দুপুরে ঢামেকের জরুরী বিভাগে সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুত্র আহত রোগীর স্বজন মুনজুর হোসেন নামে এক রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে করোনার সময়ে তিনটি বেসিন তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে এগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই। একই অবস্থা বর্হিবিভাগের সামনে।
জানা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন হাত ধোয়ার চর্চা নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের সর্বশেষ প্রকাশিত যৌথ পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির (জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম-জেএমপি) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হাত ধোয়া চর্চায় বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বনিন্ম। আর ৬৩ শতাংশ হাসপাতালে হাত ধোয়া বা জীবাণুমুক্ত করার কোনও ব্যবস্থা নেই। ৩৮ শতাংশ পরিবারের এখনো হাত ধোবার মৌলিক পরিবেশ নেই। বাড়ির বাইরে বিশেষ করে দেশের হাসপাতালগুলোতে এর ঘাটতি আরো ব্যাপক। ৩ শতাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিকে এর কোনো কিছুই নেই। এমনকি ২১ শতাংশ হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। গ্রামে ৪২ শতাংশ পরিবার হাত ধোয়ার থেকে সুবিধা বঞ্চিত। তাই সার্বিকভাবে হাত ধোয়ার চর্চা শতভাগ নিশ্চিত করতে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এই অবস্থায় আজ মঙ্গলবার ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস-২০২৪’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পরিছন্ন হাত কেন এখনো গুরুত্বপূর্ণ’?
চিকিৎসক বলছেন, করোনার সময়ে হাত ধোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু সেই প্রকোপ কমে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যসচেতনতা ‘উধাও’ হয়ে গেছে। অথচ বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে হাসপাতালসহ নানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল ও অন্যান্য জন পরিসরে হাত ধোয়ার অভ্যাস জরুরি। আগামীর যে কোন মহামারি থেকে বাঁচতে হলে হাত অবশ্যই ধোয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে। কারণ ঠিক হ্যান্ড ওয়াশিং পদ্ধতি ব্যবহার করলে ৮০ শতাংশ রোগ ঠেকানো যায়।
তারা জানান, শিশু কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক যে–ই হোন না কেন, নিয়মিত হাত ধোয়া সুস্থ রাখবে একজন মানুষকে। নানাবিধ কারণে হাত নোংরা হয়ে প্রতিদিন হাজারো জীবাণু মানবদেহে সংক্রমিত হয়। অবচেতনভাবে প্রতিনিয়ত আমরা হাত দিয়ে ক্রমাগত চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করে থাকি। হাত অপরিষ্কার থাকলে এমন স্পর্শের মাধ্যমে দেহের ভেতর জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। বিশেষ করে খাবার গ্রহণের আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শুধু হাত পানি দিয়ে ধুলেই যে জীবাণুমুক্ত হয়, তা নয়। সঠিকনিয়মে সাবান দিয়ে হাত না ধুলে নানারকম ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণু হাতেরমাধ্যমে খাদ্যের সাথে আমাদের দেহে প্রবেশ করে। যার ফলস্বরূপ ডায়রিয়া, কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জা এমনকি কোভিড-১৯ রোগের মতো নানাবিধ সংক্রামক রোগ হতে পারে, আর এই সকল রোগ থেকে বাঁচতে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার সু-অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। তেমনি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে হাত ধোয়া চর্চায় সর্বনিন্ম অবস্থানে আফগানিস্তান। ওই দেশের গড়ে ৪৮ শতাংশ পরিবারে হাত ধোবার মৌলিক পরিবেশ আছে। বাংলাদেশে এ হার ৬২ শতাংশ। শহরে ৬৮ শতাংশ ও গ্রামে ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ, গ্রামের ৪২ শতাংশ পরিবারে এখনো হাত ধোয়ার পরিবেশ পায় না।
সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান। ওই দেশের ৯৩ শতাংশ পরিবারের হাত ধোবার মৌলিক পরিবেশ আছে। শহরে ৯০ শতাংশ ও গ্রামে ৯৬ শতাংশ। পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় এ হার ৮৫ শতাংশ। ভারতের ৭৬ শতাংশ ও নেপালের ৬৪ শতাংশ।
সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাকলী হালদার বলেন, হাসপাতালে টয়লেটে পানি ও সাবানের ব্যবস্থা না থাকায় রোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। কারণ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন অসংখ্য রোগীকে স্পর্শ করেন। তাদের হাতে থাকা জীবাণু একজন রোগী থেকে অন্য রোগীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি হাসপাতালে সংক্রমণের একটি প্রধান কারণ। রোগীদের এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই তাদের জন্য এই সংক্রমণ আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, সুস্বাস্থ্যের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে হাত ধোয়া, হাত পরিষ্কার রাখা। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু সংক্রমণের হার আরও বেশি। খাবার খাওয়ার আগে যেমন হাত ধোয়া দরকার, তেমনি খাবার বানাতে বা পরিবেশন করতেও হাত ধোয়া জরুরি। আবার খাবার শেষে হাত ধুয়ে মোছার তোয়ালেটাও পরিষ্কার থাকা উচিত। যদিও গত দুই দশক ধরে দেশের মানুষকে খাবার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধুতে সচেতন করার প্রচেষ্টা চলেছে।
তিনি বলেন, রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধই সর্বদা উত্তম। করোনাভাইরাস সংক্রমণ সারা পৃথিবীর মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছে, হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করা কতটা জরুরি। শুধু ভালোভাবে হাত ধুয়েই কমপক্ষে ২০ ধরনের অসুস্থতা থেকে বাঁচা যায়। তবে হাত ধোয়ার সময় বিশেষ কিছু জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে যেমন যে কোনো সাবান দুই হাতে লাগিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় ধরে হাতের সামনে ও পেছন ভাগ, আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে, নখে ও কব্জিতে ভালোভাবে ঘষা উচিত। অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় নাকে-মুখে হাত দেওয়া বা হাত ভালোভাবে না ধুয়ে খাবার খেলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। ফলে বিভিন্ন পানি ও খাদ্যবাহিত রোগে মানুষ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
শুধু জরুরী বিভাগে নয় ঢামেকের বর্হিবিভাগ এবং নতুন ভবনের সামনেও করোনার সময়ে আলাদা বেসিন তৈরি করা হয়েছিল এবং সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। পুরো হাসপাতালের কোথাও জীবাণুনাশক টানেল চোখে পড়েনি। একই অবস্থা রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও বঙ্গবন্ধু শেখ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও (বিএসএমএমইউ)।
সোমবার ঢামেকে জরুরী বিভাগ, ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে (ওসেক), ইমাজেন্সি অপারেশন রুম, এক্সরে রুম সিটি স্ক্যান রুম এবং অবজারবেশন রুম। তার বাহিরেই রোগীদের টিকিট কাউন্টার। আর রুম এক সাথে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু ঘুরে করোনার সময়ে নির্মিত হাত ধোয়ার বেসিন ও জীবাণুনাশকের কোন ব্যবস্থা দেখা যায়নি। আর হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা সাবান ব্যবহারের প্রশ্নই আসে না। এদিন দুপুরে ঢামেকের জরুরী বিভাগে সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুত্র আহত রোগীর স্বজন মুনজুর হোসেন নামে এক রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে করোনার সময়ে তিনটি বেসিন তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে এগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই। একই অবস্থা বর্হিবিভাগের সামনে।
জানা গেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন হাত ধোয়ার চর্চা নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফের সর্বশেষ প্রকাশিত যৌথ পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির (জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম-জেএমপি) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, হাত ধোয়া চর্চায় বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বনিন্ম। আর ৬৩ শতাংশ হাসপাতালে হাত ধোয়া বা জীবাণুমুক্ত করার কোনও ব্যবস্থা নেই। ৩৮ শতাংশ পরিবারের এখনো হাত ধোবার মৌলিক পরিবেশ নেই। বাড়ির বাইরে বিশেষ করে দেশের হাসপাতালগুলোতে এর ঘাটতি আরো ব্যাপক। ৩ শতাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিকে এর কোনো কিছুই নেই। এমনকি ২১ শতাংশ হাসপাতালে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। গ্রামে ৪২ শতাংশ পরিবার হাত ধোয়ার থেকে সুবিধা বঞ্চিত। তাই সার্বিকভাবে হাত ধোয়ার চর্চা শতভাগ নিশ্চিত করতে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এই অবস্থায় আজ মঙ্গলবার ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস-২০২৪’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পরিছন্ন হাত কেন এখনো গুরুত্বপূর্ণ’?
চিকিৎসক বলছেন, করোনার সময়ে হাত ধোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু সেই প্রকোপ কমে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যসচেতনতা ‘উধাও’ হয়ে গেছে। অথচ বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে হাসপাতালসহ নানা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল ও অন্যান্য জন পরিসরে হাত ধোয়ার অভ্যাস জরুরি। আগামীর যে কোন মহামারি থেকে বাঁচতে হলে হাত অবশ্যই ধোয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে। কারণ ঠিক হ্যান্ড ওয়াশিং পদ্ধতি ব্যবহার করলে ৮০ শতাংশ রোগ ঠেকানো যায়।
তারা জানান, শিশু কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক যে–ই হোন না কেন, নিয়মিত হাত ধোয়া সুস্থ রাখবে একজন মানুষকে। নানাবিধ কারণে হাত নোংরা হয়ে প্রতিদিন হাজারো জীবাণু মানবদেহে সংক্রমিত হয়। অবচেতনভাবে প্রতিনিয়ত আমরা হাত দিয়ে ক্রমাগত চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করে থাকি। হাত অপরিষ্কার থাকলে এমন স্পর্শের মাধ্যমে দেহের ভেতর জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। বিশেষ করে খাবার গ্রহণের আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শুধু হাত পানি দিয়ে ধুলেই যে জীবাণুমুক্ত হয়, তা নয়। সঠিকনিয়মে সাবান দিয়ে হাত না ধুলে নানারকম ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণু হাতেরমাধ্যমে খাদ্যের সাথে আমাদের দেহে প্রবেশ করে। যার ফলস্বরূপ ডায়রিয়া, কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জা এমনকি কোভিড-১৯ রোগের মতো নানাবিধ সংক্রামক রোগ হতে পারে, আর এই সকল রোগ থেকে বাঁচতে সঠিকভাবে হাত ধোয়ার সু-অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। তেমনি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে হাত ধোয়া চর্চায় সর্বনিন্ম অবস্থানে আফগানিস্তান। ওই দেশের গড়ে ৪৮ শতাংশ পরিবারে হাত ধোবার মৌলিক পরিবেশ আছে। বাংলাদেশে এ হার ৬২ শতাংশ। শহরে ৬৮ শতাংশ ও গ্রামে ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ, গ্রামের ৪২ শতাংশ পরিবারে এখনো হাত ধোয়ার পরিবেশ পায় না।
সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান। ওই দেশের ৯৩ শতাংশ পরিবারের হাত ধোবার মৌলিক পরিবেশ আছে। শহরে ৯০ শতাংশ ও গ্রামে ৯৬ শতাংশ। পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় এ হার ৮৫ শতাংশ। ভারতের ৭৬ শতাংশ ও নেপালের ৬৪ শতাংশ।
সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. কাকলী হালদার বলেন, হাসপাতালে টয়লেটে পানি ও সাবানের ব্যবস্থা না থাকায় রোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। কারণ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন অসংখ্য রোগীকে স্পর্শ করেন। তাদের হাতে থাকা জীবাণু একজন রোগী থেকে অন্য রোগীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি হাসপাতালে সংক্রমণের একটি প্রধান কারণ। রোগীদের এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই তাদের জন্য এই সংক্রমণ আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, সুস্বাস্থ্যের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে হাত ধোয়া, হাত পরিষ্কার রাখা। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু সংক্রমণের হার আরও বেশি। খাবার খাওয়ার আগে যেমন হাত ধোয়া দরকার, তেমনি খাবার বানাতে বা পরিবেশন করতেও হাত ধোয়া জরুরি। আবার খাবার শেষে হাত ধুয়ে মোছার তোয়ালেটাও পরিষ্কার থাকা উচিত। যদিও গত দুই দশক ধরে দেশের মানুষকে খাবার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধুতে সচেতন করার প্রচেষ্টা চলেছে।
তিনি বলেন, রোগের ক্ষেত্রে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধই সর্বদা উত্তম। করোনাভাইরাস সংক্রমণ সারা পৃথিবীর মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছে, হাত ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করা কতটা জরুরি। শুধু ভালোভাবে হাত ধুয়েই কমপক্ষে ২০ ধরনের অসুস্থতা থেকে বাঁচা যায়। তবে হাত ধোয়ার সময় বিশেষ কিছু জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে যেমন যে কোনো সাবান দুই হাতে লাগিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় ধরে হাতের সামনে ও পেছন ভাগ, আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে, নখে ও কব্জিতে ভালোভাবে ঘষা উচিত। অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় নাকে-মুখে হাত দেওয়া বা হাত ভালোভাবে না ধুয়ে খাবার খেলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও অন্যান্য জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। ফলে বিভিন্ন পানি ও খাদ্যবাহিত রোগে মানুষ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে।