হার্টের রিংয়ের বৈষম্যমূলক দাম কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট

হার্টের রিং কম খরচে সরবরাহ করা জরুরী: মানবাধিকার কমিশন

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক :

 হৃদরোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সবচেয়ে আধুনিক স্টেন্টের (হার্টের রিং) বৈষম‌্যমূলক দাম কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এ মর্মে রুল জারি করেছেন মহামান্য হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে আজ সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জে.বি. এম. হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। তাকে সহযোগিতা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাঈম সরদার ও ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার।

 

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর গত ১২ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে হার্টের রিংয়ের দাম ঠিক করে। আর ভারতের জাতীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ গত ৩১ মার্চ তাদের দেশে স্টেন্টের দাম ঠিক করে দেয়।

 

দুই দেশের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রায় সব মানের স্টেন্টের দাম বাংলাদেশে ভারতের চেয়ে সর্বোচ্চ তিন গুণ বেশি।

 

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেশে ২৭টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের জন্য স্টেন্টের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছে। অধিদপ্তরের প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে জাতীয় নীতিমালা বা মার্কআপ ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়েছে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠানের বেলায়। যুক্তরাষ্ট্রের এই চার প্রতিষ্ঠানের একই মানের স্টেন্টের মূল্য দাঁড়িয়েছে ভারতের প্রায় তিন গুণ।

 

চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে এইচআরএস কার্ডিয়াক কেয়ার লিমিটেড, ম্যাট্রোনিক বাংলাদেশ লিমিটেড,  মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লিমিটেড, ও ভাসটেক লিমিটেড। এরমধ্যে এইচআরএস কার্ডিয়াক কেয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের স্ত্রী খুরশীদ জাহান। আর বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিভিডি) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দিনের আত্মীয়-স্বজনরা জড়িত।

 

আমদানিকারক বাকি ২৩ প্রতিষ্ঠানের স্টেন্টের মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কআপ ফর্মুলা মানা হয়নি। তার পরও যে দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে তা ভারতে চলমান দামের চেয়ে সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেশি। কিন্তু ভারতের তৈরি দুটি ব্র্যান্ডের স্টেন্টের দাম ধরা হয়েছে ভারতে যে দামে বিক্রি হয় তার চেয়ে ১১ হাজার টাকা কম।

 

আবার বাংলাদেশে আয়ারল্যান্ডের তৈরি যে দুটি ব্র্যান্ডের স্টেন্ট সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সেগুলোর একটির দাম ভারতের দ্বিগুণ, অন্যটির তিন গুণ বেশি।

 

যেমন আয়ারল্যান্ডের অ্যাবোট ভাসকুলার কম্পানির তৈরি জিয়েন্স প্রাইম ব্র্যান্ডের একটি স্টেন্টের দাম ভারতে বাংলাদেশি টাকায় ২৯ হাজার ৯২৫ টাকা। বাংলাদেশে দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। একই দেশের বোস্টন সায়েন্টিফিকের তৈরি প্রোমুস এলিট ব্র্যান্ডের স্টেন্টের দাম বাংলাদেশে ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা। ভারতে সেটির দাম ২৯ হাজার ৯২৫ টাকা।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এই বৈষম্যমূল দামে অসন্তুষ্ট হয়ে ওশান লাইফ লিমিটেডসহ ১১টি আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে রোববার (১৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সাতটি প্রতিষ্ঠান ও এরকজন ব্যাক্তিকে রিটে বিবাদী করা হয়।

 

এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির বলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর যে দাম নির্ধারণ করেছে তা বৈষম্যমূলক। এরফলে চারটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যদের জন্য যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তারা ওই দামে হার্টের রিং আমদানীই করতে পারবেনা। ফলে বাজারে কেবল টিকে থাকবে চারটি প্রতিষ্ঠান। এরফলে বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি হয়। সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পরবে। আশা করছি বিবাদীরা যথাসমেয় রুলের জবাব দেবে। তিনি আরও বলেন, আবেদনকারী ১১টি প্রতষ্ঠানের ব্যবসা করার অধিকার রয়েছে। বৈষম্যমূলক দামের কারণে আবেদনকারীরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। একইসাথে যাদের হার্টের রিংয়ের প্রয়োজন তাদের অতি উচ্চমূল্যে রিং ক্রয় করতে হবে। তারাও তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।

 

এদিকে, হৃদ্‌রোগীদের জীবনদায়ী চিকিৎসার সামগ্রী করোনারি স্টেন্ট (হার্টের রিং) নির্ধারিত দামে সরবরাহ করার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। পাশাপাশি যেসব আমদানিকারক ‘সিন্ডিকেট’ করে অনৈতিক বাণিজ্য করছে এবং যেসব অসাধু চিকিৎসক অর্থের লোভে অযথা রোগীদের অস্ত্রোপচার করে হয়রানি করছেন, তাঁদের কঠোর শাস্তি দিতে বলেছে কমিশন।

 

সোমবার মানবাধিকার কমিশনের উপপরিচালক ফারহানা সাঈদের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

১২ ডিসেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফের স্বাক্ষর করা এক আদেশে ২৭টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। স্টেন্ট আমদানি প্রতিষ্ঠানভেদে খুচরা মূল্য সর্বনিম্ন ১৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

এদিকে ঔষধ প্রশাসন থেকে রিংয়ের দাম পুনর্নির্ধারণ করে দেওয়ায় আমদানিকারকেরা রিং সরবরাহ না করার হুমকি দিচ্ছে বলে মানবাধিকার কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অভিযোগ রয়েছে, রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির প্রতিষ্ঠান এবং কয়েকজন চিকিৎসক মিলে দেশে হার্টের রিংয়ের অনৈতিক বাণিজ্য করছেন। এ নিয়ে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই সিন্ডিকেট দেশে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি দামে রিং বিক্রি করছে। অন্যদিকে কিছু অসাধু চিকিৎসক অনৈতিকভাবে অযথা রোগীদের বর্ধিত মূল্যে অস্ত্রোপচার করছেন, যা রোগীদের জীবন নিয়ে খেলার শামিল।

কমিশন মনে করে, সমন্বিতভাবে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। হার্টের রিং কম খরচে সরবরাহ করা অত্যাবশ্যকীয়। পাশাপাশি কোনো সিন্ডিকেট যাতে জনস্বার্থবিরোধী অবস্থান নিতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। কোনো ধরনের সংকট যাতে রোগীদের ক্ষতিগ্রস্ত না করে, সে বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।

 

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com