নিউজ ডেস্ক।।
বিশ্বজুড়ে শিশু মৃত্যুর অন্যতম সংক্রামক ব্যাধি হলো হাম। আর এ নিয়ে নতুন করে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনা পরবর্তী সময়ে সংক্রামক এই রোগের টিকার কভারেজ কমে গেছে। ফলে হামের কারণে ২০২৩ সালে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী ১০ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ হামে আক্রান্ত হয়েছেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে এক লাখ সাত হাজার ৫০০ মানুষের। যাদের মধ্যে অধিকাংশের বয়সই পাঁচ বছরের কম। হামের রোগী বৃদ্ধির জন্য গবেষণায় টিকার কভারেজকে দায়ী করা হয়েছে।
সিডিসির পরিচালক ম্যান্ডি কোহেন বলেন, “বিশ্বব্যাপী হামের সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে, যার ফলে জীবন ও স্বাস্থ্যকে বিপন্ন হচ্ছে। হামের টিকা, ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের সর্বোত্তম সুরক্ষা। রোগী কমাতে টিকার কভারেজ বাড়ানোর প্রচেষ্টায় আমাদের বিনিয়োগ চালিয়ে যেতে হবে।”
হামকে বিশ্বের অন্যতম সংক্রামক রোগ হিসেবে বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের জন্য হাম-রুবেলা টিকার দুই ডোজসহ কমপক্ষে ৯৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে কভারেজ করা প্রয়োজন। তবে ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী মাত্র ৮৩ শতাংশ শিশু নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিষেবার মাধ্যমে হাম-রুবেলা টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছে। ২০২২ সালেও এই পরিসংখ্যান ছিল অপরিবর্তিত। তবে করোনা মহামারীর আগে ৮৬ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে হাম-রুবেলা টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছিল।
এদিকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের তুলনায় দ্বিতীয় ডোজ প্রদানের হার আরও কম। গবেষণায় উঠে এসেছে, ২০২৩ সালে মাত্র ৭৪ শতাংশ শিশুকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, “হামের টিকা গত ৫০ বছরে অন্য যে কোনো টিকার চেয়ে বেশি জীবন বাঁচিয়েছে। আরো বেশি জীবন বাঁচাতে এবং এর ক্ষতি রক্ষা পেতে আমাদের অবশ্যই সবার জন্য টিকাদান নিশ্চিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এই মারাত্মক ভাইরাস থেকে বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষকে নিরাপদে রাখতে হবে।”
গবেষণায় দেখা গেছে, টিকাদানের কভারেজ কমে যাওয়ায় ২০২৩ সালে বিশ্বের অন্তত ৫৭টি দেশ হামের প্রাদুর্ভাবের সম্মুখীন হয়েছে। যদিও এক বছর আগে মাত্র ৩৬টি দেশে হামের প্রকোপ ছিল। এসময় আমেরিকা ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলে হামের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। তবে প্রাদুর্ভাবের অর্ধেকই ঘটেছে আফ্রিকা অঞ্চলে।
সংস্থাগুলো বলছে, মূলত যেসব দেশ এবং অঞ্চলগুলোতে হামে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর সম্ভাবনা কম ছিল, সেসব অঞ্চলেও মৃত্যুহার বেড়েছে। ওইসব অঞ্চলের উন্নত পুষ্টির অভাব এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিধি কমেছে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। এখনও অনেক শিশু এই প্রতিরোধযোগ্য রোগে মারা যাচ্ছে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে হামকে নির্মূল করার বৈশ্বিক যে লক্ষ্য ছিল, তা “হুমকির মধ্যে” রয়েছে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাগুলো।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, বিশেষ করে আফ্রিকা এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে, ভঙ্গুর ও সংঘাত-আক্রান্ত এলাকায় সব শিশুকে দুটি টিকার ডোজ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য জরুরি এবং লক্ষ্যযুক্ত প্রচেষ্টা পরিচালনার আহ্বান জানান গবেষকরা।