স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

দেশের স্বাস্থ্য খাতে আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে, তা সময়োপযোগী এবং বাস্তবতানির্ভর হলেও এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এমনকি সংবিধানে স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি, চিকিৎসা খরচ কমাতে আইন প্রণয়ন, ডিজিটাল হেলথ আইডি চালু, চিকিৎসক-রোগীর মানবিক যোগাযোগসহ —এ জাতীয় উদ্যোগ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, শক্তিশালী নীতিনির্ধারণ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মত তাদের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক দিকনির্দেশনা ও বাস্তবমুখী কৌশল ছাড়া এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশানুরূপ সুফল মিলবে না। তবু তারা মনে করেন, এ ধরনের উদ্যোগই দেশের স্বাস্থ্য খাতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের পথ দেখাতে পারে।

সোমবার (১২ মে) দুপুরে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত স্বাস্থ্য সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন

কর্মশালায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সংস্কার কমিশন ২০০টির বেশি সুপারিশ দিয়েছে। এর অনেকগুলো সময়োপযোগী ও গঠনমূলক। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে মাত্র ২০টি আইন বা রীতি পরিবর্তনের কথা। বাস্তবতা হলো, এসবের সঙ্গে আরও অন্তত ১২টি আন্তঃসম্পর্কিত আইন রয়েছে, যেগুলো সহজে বাস্তবায়নযোগ্য নয়। আমি বিশ্বাস করি, পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অন্তত ৪ থেকে ৫ বছর সময় লাগবে।

তিনি আরও বলেন, এ প্রতিবেদনে সেবার মান উন্নয়নের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এটি যদি সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে স্বাস্থ্য খাতে একটি আমূল পরিবর্তন আসবে। কিন্তু বাস্তবতায় আমরা আজও যেসব নীতি-কাঠামো অনুসরণ করি, তার ১০-২০ শতাংশ কার্যকরভাবে প্রয়োগ করলেও স্বাস্থ্য চিত্র অনেকটাই বদলে যেত।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ও জনস্বাস্থ্য গবেষক ডা. আহমদ এহসানূর রহমান বলেন, আমরা স্বাস্থ্যকে পণ্য নয়, বরং ‘পাবলিক গুড’ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছি। কমিশনের প্রস্তাবে স্বাস্থ্যকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং রোগীকেন্দ্রিক সেবা পদ্ধতি গড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত ৫০ বছরে জাতীয় সংসদে স্বাস্থ্য নিয়ে গুরুত্বসহকারে কোনো আলোচনা হয়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা বিশ্বাস করি, এখন সময় এসেছে স্বাস্থ্যকে জাতীয় অগ্রাধিকারের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের উপদেষ্টা ডা. ইয়াসমিন আহমেদ বলেন, প্রতিটি সুপারিশের বাস্তবায়নযোগ্যতা সমান নয়। কোন সুপারিশগুলো আগে বাস্তবায়ন করা উচিত, সেটি গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে হবে। কমিশনের স্ট্রাকচার এত বিস্তৃত যে এটা কার্যত একটি মন্ত্রণালয়ের মতো হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটি বাস্তবে কতটা প্র্যাকটিক্যাল হবে?

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের কাছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের যাওয়া সীমিত করার উদ্যোগ আদর্শ পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়েও ভাবার সুযোগ আছে।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের কার্যকরী সদস্য ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, সব সুপারিশ একসঙ্গে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কিছু সুপারিশ রয়েছে, যা ৬ মাসেই বাস্তবায়নযোগ্য। আবার কিছু সুপারিশের বাস্তবায়নে ১০ বছর সময় লাগতে পারে। সরকার চাইলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আগামী ৮-১০ মাসেই কিছু সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারে।

তিনি জানান, কমিশন ইতোমধ্যে তিনটি রাজনৈতিক দল ও ছয়টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এখন প্রয়োজন আলাদা একটি যাচাই-বাছাই কমিটি, যারা সুপারিশগুলো মূল্যায়ন করে বাস্তবায়নের কৌশল ঠিক করবে।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে— সংবিধানে স্বাস্থ্যকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি, ‘স্বাস্থ্য ফাইন্যান্সিং সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন, ‘হেলথ-কী’ নামে ডিজিটাল হেলথ আইডি চালু, ‘স্বাস্থ্য-সেতু’ নামে একীভূত জাতীয় স্বাস্থ্য তথ্য প্ল্যাটফর্ম গঠন, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, ডায়াগনস্টিক, জাতীয় রক্ত সঞ্চালন এবং ফার্মেসি –এই চারটি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা।

বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্য খাতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে হলে শুধু কমিশনের সুপারিশ যথেষ্ট নয়, এর জন্য দরকার রাজনৈতিক অঙ্গীকার, কার্যকর আইন প্রণয়ন ও শক্তিশালী প্রশাসনিক কাঠামো।

তাদের মতে, পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে একটি জনমুখী, দায়িত্বশীল ও মানবিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তবে এক্ষেত্রে নীতি-নির্ধারকদের সময়োপযোগী, সাহসী ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি, প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক শিশির মোড়লসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com