নিজস্ব প্রতবেদক।।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেছেন, দেশের বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিষয় ভিত্তিক প্রয়োজনীয় সংস্কার ও চিকিৎসা সেবার গুণগত মান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামো শক্তিশালীকরণের জন্য ১২ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হয়েছে এবং তাদের কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ৭০০ জনেরও বেশি নিহত এবং ১৯০০০ জন আহতের তালিকা পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি। তবে এটা চূড়ান্ত সংখ্যা নয় বলেও জানান স্বাস্থ্য সচিব।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ছাত্র জনতার জন্য ঢাকায় ১৩ টি হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে সারাদেশের আহত ছাত্র জনতার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন যাদের ঢাকায় রেফার করা হয়েছে তাদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য বিনামূল্যে এম্বুল্যান্সযোগে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হাসপাতালগুলোর ডেডিকেটেড অংশে স্থানান্তর করা হয়েছে যেখানে তাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে চিকিৎসা সম্পর্কিত অভিযোগ, পরামর্শ, তথ্য জানার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক হটলাইন খোলা হয়েছে। হটলাইনে আসা কলগুলো পর্যালোচনা করে সাথে সাথেই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আন্দোলনে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অনেক হাসপাতাল বিনামূল্যে আহতদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। যারা আহত হয়েছেন বিশেষত যারা চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, পায়ে আঘাত পেয়েছেন, অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য বিদেশ থেকে ডাক্তারদের মেডিকেল টিম আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এজন্য বিভিন্ন দেশ এবং বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত যাদের দেশে চিকিৎসা করতে হাসপাতাল অপারগতা প্রকাশ করেছে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে।
স্বাস্থ্য সচিব বলেন, আমরা আহতদের চিকিৎসার জন্য এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের চেষ্টা করেছি। আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা হলো ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হতে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডাটা এন্ট্রির মাধ্যমে সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। আমরা আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, আহতদের কেউ কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন এবং আমরা এর দায় জাতির সামনে এড়াতে পারব না। তাই আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি। আমরা আহত শিক্ষার্থীদের বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। এটি আমাদের এখতিয়ারভুক্ত না হলেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ফ্রি টিকিট দিয়েছে। কেউ না দিলেও আমরা ব্যবস্থা করে দেব।
তিনি আরও বলেন, কতজন আহত বা নিহত হয়েছেন তা নির্ধারণের জন্য একটি টাস্কফোর্স বা কমিটি গঠন করা হয়েছে। একজন সাবেক সিনিয়র স্বাস্থ্য সচিবের নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এই সংখ্যা জানার চেষ্টা করছেন।
এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা ক্যাবিনেটে পাঠাব। রোববারের মধ্যে এটার খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।
বন্যা এবং বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য সচিব বলেন, বন্যা পরিস্থিতিতে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ আক্রান্ত এলাকায় সরকারিভাবে প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম, পৌরসভায় তিনটা করে মেডিকেল টিম কাজ করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঔষধসহ মেডিকেল টিম দিয়ে বন্যার্তদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং কর্মীদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করেছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে আক্রান্ত এলাকায় ডায়রিয়া, চর্মরোগ ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। জেলা হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, কলেরা ফ্লুইড ইত্যাদি মজুদ রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে বেডের সক্ষমতার তিনগুণ বেশি রোগীও ভর্তি আছে। মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যখাতের জনবলের অপ্রতুলতাও রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত রোগীর চাপ। যার ফলে কোন কোন জায়গায় চিকিৎসা সেবার ব্যতয় ঘটেছে। যেটার সমাধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়াও ডেঙ্গুর বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান স্বাস্থ্য সচিব এম এ আকমল হোসেন।