নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দেশের স্বাস্থ্যখাতের সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ওস্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলমের অপসারণসহ দুই দফা দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন হাসপাতাল-স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। দ্রুততম সময়ে এসব দাবি মেনে না নিলে বৃহত্তর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুর থেকে এসব দাবিতে তারা স্বাস্থ্য অধিদফতর ঘেরাও করে কর্মসূচি পালন শুরু করেন।
চিকিৎসকদের দাবি, গত ১৫ বছরের শাসনামলে স্বাস্থ্য অধিদফরের সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে কর্মকর্তারা বিক্রি হয়ে অবৈধ নিয়োগ-পদোন্নতি দিয়েছে। তাই আমরা বর্তমান ডিজিসহ সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ চাই।
চিকিৎসকদের দুই দফা দাবিগুলো হলো- স্বাস্থ্য অধিদফরের ডিজিসহ দুর্নীতিবাজ সব কর্মকর্তাকে দ্রুততম সময়ে অপসারণ করতে হবে এবং অবৈধভাবে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন পাওয়া সবকিছু বাতিল করতে হবে।
এ ব্যাপারে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ডা. উম্মে তানিয়া নাসরিন বলেন, এডহক কর্মকর্তাদের এডহক সার্ভিসে অবৈধ স্থায়ীকরণ বাতিলসহ এতোদিন আমরা ৬ দফা দাবিতে আন্দোলন করে এলেও এখন আমাদের দফা দুটি। প্রথম দফাই হলো দুর্বৃত্তদের চাপের মুখে একদিন পরই শতাধিক অবৈধ পদায়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে আবারও তাদেরকে বৈধতা দেওয়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের পদত্যাগ। পাশাপাশি অধিদফতরের সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ চাই। আমাদের দ্বিতীয় দাবি হলো, সব ধরনের অবৈধ পদোন্নতি, নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের প্রত্যন্ত ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র পর্যন্ত পদায়ন হওয়া এই ক্যাডারের প্রায় ৩৫ হাজার কর্মকর্তা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল মেরুদণ্ড। ক্যাডার সার্ভিস গঠন হওয়ার পর থেকে বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে আমরা দেশের মানুষকে নিরবচ্ছিন্নভাবে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে আসছি এবং শত সীমাবদ্ধতা, বৈষম্য ও অপ্রাপ্তি স্বত্বেও আমরা দেশের জনগণকে সেবা প্রদানে কখনো পিছপা হইনি।সর্বশেষ দেশের কোভিড ক্রান্তিকালে ৩৯ বিসিএসের কর্মকর্তাসহ ৩৫ হাজার কর্মকর্তা চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত হয়ে প্রায় শতাধিক ক্যাডার কর্মকর্তা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বিগত কিছু বছর ধরে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, সরকারি চাকরিবিধির গুরুতর লঙ্ঘন ঘটিয়ে ক্যাডার পদগুলোতে ভিন্ন নিয়োগবিধির আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত এডহক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের পদায়ন ও পদোন্নতি দেওয়া শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু দুষ্কৃতকারী কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, আজ পর্যন্ত সহস্রাধিক অবৈধ পদোন্নতি, জনপ্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে প্রায় পাঁচ শতাধিক অবৈধ পদায়নসহ স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনিয়ম-দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। আমরা দেখেছি একদল চাকরিজীবী যারা তাদেরই নিয়োগবিধির শর্ত পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করে স্থায়ী হয়েছিল। অর্থাৎ তারা প্রথমবার প্রমার্জনা পেয়েছেন, যারা তাদের সমগ্র চাকরিজীবনে কখনো কোনো পরীক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেয়নি, যারা বিসিএস অনুত্তীর্ণ হয়েও ক্যাডার হয়েছে। এগুলো আমাদের স্বাস্থ্য ক্যাডারের সঙ্গে চরমতম অন্যায়। এই অন্যায় ও জুলুম আমরা মানি না, মানবো না।
চিকিৎসকরা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবং অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিচার বিভাগ থেকে সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, সেবা খাত- সবখানেই শীর্ষপদের অনেকেই পদত্যাগ করেছেন এবং নতুনভাবে সংস্কার শুরু করা হচ্ছে। এই অবস্থায় দেশের চিকিৎসা সেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে স্বাস্থ্যসেবাখাতকেও নতুনভাবে সংস্কার করা জরুরী হয়ে পড়ছে বলেও জানান চিকিৎসকরা।