নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার অগ্রভাগে থেকে নির্ভুল রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা সহায়তা ও বিভিন্ন ধরনের ডায়াগনোস্টিক সেবা দিয়ে থাকেন। কিন্তু পেশাগতভাবে তারা কয়েক যুগ ধরে অবহেলিত এবং বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন। যার বিরুপ প্রভাব পড়ছে চিকিৎসাক্ষেত্রে। গুণগত, মানসম্মত ও সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এমন পরিস্থিতিতে মান উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার কলেবর বৃদ্ধিতে ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাত্রছাত্রীরা।
বুধবরে (৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে ‘বৈষম্যাবিরোধী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, কেন্দ্রীয় সংসদ’ আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এসব দাবি জানান। আগামি সাত দিনের মধ্যে দাবি পূরণে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যের শিকার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সারাদেশে একযোগে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা।
‘বৈষম্যাবিরোধী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, কেন্দ্রীয় সংসদ’-এর আহ্বায়ক মো. আসাদুল সিকদারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মো. জীবান ইসলামের সঞ্চলানায় মানববন্ধনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই শতাধিক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা অংশ নেন।একই সময়ে রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, সিলেট, বরিশাল ও চট্রগ্রামে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্যখাতে টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিএসসি টেকনোলজিস্টদের কাজে লাগাতে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের অর্গানোগ্রামে কোন পদ নেই। সরকার জনগণের চিকিৎসাসেবার মত মৌলিক অধিকার পূরণে দক্ষ জনবল হিসেবে তৈরি করলেও তাদের কাজে লাগাতে পারছেনা। তারা (বিএসসি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট) উচ্চতর ডিগ্রিধারী হয়েও বেকার ঘুরছেন। ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে দেশের মানুষের গুণগত ও মানসম্মত সাশ্রয়ী স্বাস্থ্য সেবাও নিশ্চিত হচ্ছে না। ফলে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের পেশাগত সম্মান, ন্যায্য অধিকার এবং স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানাই।
আমাদের দাবিগুলো হলো-
1. মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দক্ষতা উন্নয়ন, মান নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি স্বতন্ত্র ‘মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসি পরিদপ্তর’ গঠন করতে হবে।
2. দেশের ‘ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি’ (আইএইচটি)সমূহকে মেডিকেল টেকনোলজি কলেজে রূপান্তর করে, ঢাকার আইএইচটিকে কেন্দ্র করে একটি স্বতন্ত্র মেডিকেল সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ বিষয়ভিত্তিক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের প্রভাষক হতে অধ্যাপক পর্যন্ত বিভিন্ন পদে পদায়ন করতে হবে।
3. মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দশম গ্রেড (দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদাসহ) বাস্তবায়ন পূর্বক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) নতুন পদ সৃষ্টি করে দ্রুত নিয়োগ প্রদান করতে হবে।
4. গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের জন্য নবম গ্রেডের পদ সৃষ্টি করে স্ট্যান্ডার্ড সেট আপ ও নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
5. মেডিকেল টেকনোলজি কাউন্সিল গঠন করে, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের জন্য প্রাইভেট সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
6. বিএসসি ও এমএসসি কোর্সে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ভাতা ও স্কলারশিপ প্রদানসহ সকল অনুষদের বিএসসি কোর্স চালু করে শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এসময় বক্তারা বলেন, তাদের দাবিগুলো পূরণ করা হলে, মানুষ গুণগত ও মানসম্মত স্বাশ্রয়ী স্বাস্থ্য সেবা পাবে। স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের পেশাগত মর্যাদ্য সুরক্ষিত হবে। তাই প্রধান উপদেষ্টা এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। আগামি ৭ দিনের মধ্যে দাবিগুলো পূরণের বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বৈষম্যের শিকার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ছাত্র-ছাত্রীরা সারাদেশে একযোগে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদের সদস্য সচিব মো. সোহেল রানা, মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মাসিস্ট টিচারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান, পেশাজীবী নেতা আবু বকর সিদ্দিকসহ আরও অনেকে।