নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সরকারি নেত্রকোনা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সদ্য প্রয়াত অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র রায়ের দান করা কর্নিয়ায় চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন দুজন। অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র রায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কাছে মরণোত্তর দেহদান করেন। এরপর তার কর্নিয়া দুজনের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়।
বুধবার বিএসএমএমইউর অ্যানাটমি বিভাগের প্লাস্টিনেশন ল্যাবে এই মরণোত্তর দেহ গ্রহণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ উপাচার্য এই ধরনের মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা এবং মরণোত্তর দেহদানকারী সুভাষ চন্দ্র রায়ের বড় ছেলে তিতাস রায় এবং ছোট ছেলে পিয়াস রায়সহ পরিবারের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুভাষ চন্দ্র রায় সচেতন নাগরিক ছিলেন। তাই তিনি মরণোত্তর দেহদান করে গেছেন। তার দুটি কর্নিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করে এরই মধ্যে দুজনের চোখে প্রতিস্থাপন করে আলো ফিরিয়ে দিয়েছেন। তার পরিবারে অন্য চার সদস্যও এর আগে মরণোত্তর দেহদান করেছেন। তাদের মতো অন্যরাও সচেতন হলে ভবিষ্যতে অঙ্গসংযোজনের সমস্যা থাকবে না। তিনি দেশের সব মানুষের প্রতি এমন মহতী কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
গত ১৯ জানুয়ারি সিভিয়ার অ্যানিমিয়া স্ট্রোক ইরোসিভ গ্যাসট্রাইটিস সমস্যার কারণে সুভাষ চন্দ্র রায়ের স্বজনরা তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করান। এরপর ২০ জানুয়ারি মারা যান তিনি। সুভাষ চন্দ্র রায় এবং তার পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য নিজের দুটি কর্নিয়া এবং আইবল দান করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সুভাষ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্য তার দুটি কর্নিয়া সংরক্ষণ করেন।
এরপর ২১ জানুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে কর্নিয়া দুটির একটি বিএসএমএমইউর কমিউনিটি অফথালমোলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শীষ রহমান নেত্রকোনার ৬২ বছর বয়সী সুবের আলীর চোখে প্রতিস্থাপন করেন। অপর কর্নিয়া পটুয়াখালীর ৫২ বছরের জাহাঙ্গীর আলমের চোখে প্রতিস্থাপন করেন বিএসএমএমইউর চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাস।
অ্যানাটমি বিভাগে মরণোত্তর দেহদানকালে সুভাষ চন্দ্র রায়ের বড় ছেলে তিতাস রায় এবং ছোট ছেলে পিয়াস রায়সহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সুভাষ চন্দ্র রায়ের মরদেহ বিএসএমএমইউর অ্যানাটমি বিভাগে সংরক্ষণ, শিক্ষণ- প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের অনুমতিপত্র অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়েছে। মরদেহের এমবামিং প্রক্রিয়া শুরুর আগে অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানুর পরিচালনায় এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা এবং অ্যানাটমি বিভাগের সব শিক্ষক, কর্মচারী ও রেসিডেন্টদের অংশগ্রহণে মরদেহের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়।