শিশু আয়ানের মৃত্যু: ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক ।। 

সুন্নতে খাতনা করতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকায় অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে বলে  স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছিল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কোনো নিবন্ধন ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

আদেশে বলা হয়, সাম্প্রতিককালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের (৫ বছর) মৃত্যুতে তার বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের পরিচালকের (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) নেতৃত্বে ১০ জানুয়ারি হাসপাতালটি পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রদত্ত লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়। এছাড়া দপ্তরের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা এবং পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় যে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে কোন প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিকট নিবন্ধন/লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য কখনোই অনলাইন আবেদন করেনি। প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার আইনানুগ নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স ব্যতিরেকে চিকিৎসা সেবা নির্মাণাধীন ভবনে পরিচালনা করে আসছে, যা সরকারের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে এ আদেশ জারি করা হয়।

পাঁচ বছর বয়সী আয়ানকে খতনা করানোর জন্য গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল তার পরিবার। অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার পর আর জ্ঞান ফেরেনি তার। পরে তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গত ৭ জানুয়ারি সেখানেই মৃত্যু হয় শিশুটির।

আয়ানের বাবা শামীম আহামেদ ইতোমধ্যে বাড্ডা থানায় মামলা করেছেন। ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সাইদ সাব্বির আহমেদ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবিন,অজ্ঞাতনামা পরিচালকসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। আয়ানের বাবার করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, খতনা করানোর জন্য আয়ানকে গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে নেওয়ার পর তাকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। আয়ানের স্বজনদের ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে বলা হয়। এর ঘণ্টা খানেক বাদে আরো চিকিৎসক ‘উদ্বেগ নিয়ে’ অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রবেশ ও বের হতে থাকে দাবি করে মামলায় বলা হয়, তখন বাদী ও পরিবারের সদস্যরা অস্ত্রোপচার কক্ষে প্রবেশ করে দেখেন, আয়ানের জ্ঞান ফেরেনি। চিকিৎসকরা তার বুকে চাপ দিচ্ছেন।

শিশুটির বাবা এজাহারে বলেছেন, একপর্যায়ে আয়ানকে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল থেকে গুলশানের ইউনাইটেড হসপিটালে নেয় কর্তৃপক্ষ। সেখানকার আইসিউইতে রাখা হয় তাকে। আয়ানের পরিবার তাকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলেও ইউনাইটেড হসপিটাল কর্তৃপক্ষ তা করতে দেয়নি।

মামলায় বলা হয়, এক সপ্তাহ বাদে রোববার রাত ১১টা ২০ মিনিটে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করে ইউনাইটেড হসপিটাল। এরপর চিকিৎসা বাবদ পৌনে ছয় লাখ টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়। তখন শামীম বিষয়টি ফোন করে বাড্ডা থানাকে জানান। পুলিশ গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য আয়ানের মৃতদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। চিকিৎসকদের অবহেলায় আয়ানের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করছে তার পরিবার।

শিশু আয়ানের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে এদিনই রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। জনস্বার্থে করা এই আবেদনে শিশুটির পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করা হয়েছে।

আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা আমলে নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলেছে, চিকিৎসকের অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কারণে কারও মৃত্যু বা অন্য কোনো ধরনের ক্ষতি মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ঘটনার তদন্ত করে আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com