ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হলো রমজান মাসের রোজা। আর প্রত্যেক মুসলমান রোজা রাখবেন- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের দেশে রমজান মাস এলেই খাওয়া-দাওয়ার ধুম পড়ে যায়। মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে কী খাবে, কী খাবে না এসব নিয়ে। তাই রোজায় রকমারি খাবারের আয়োজন বেড়ে যায়, যা কি না স্বাস্থ্য উপযোগী নয়। তবে দৈনিক চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখেই খাদ্য নির্বাচন করা দরকার। যেহেতু এগার মাস পর রোযা আসছে তাই খাদ্যভাসে কিছুটা পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক। যদিও ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে হয়ে ঠিক যাবে। যারা তরুণ এবং ইয়ং তারা তো সুন্দরভাবে রোযা রাখতে পারবেন তাদের কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যারা রোগী আছেন তারাও কিছু নিয়ম-নীতি ও পরামর্শ অনুসরণ করলেই রোজা পালন করতে পারেন। তবে রমজানে বিশেষ বয়স্ক মানুষ কিংবা ডায়াবেটিস রোগী, পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার, হার্ট ও স্ট্রোক রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, অ্যাজমা রোগী , কিনডী এবং ক্যান্সারের রোগীরা প্রায়ই রোজা রাখবেন কি রাখবেন না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। তবে তাদের অসুখ যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোযা রাখতে পারবেন। আর গর্ভবতী মায়ের যদি শারীরিক কোনো জটিলতা না থাকে, তাহলে রোজা থাকতে কোনো বাধা নেই। রোজা রাখবেন কি রাখবেন না, তার জন্য ডাক্তারের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করা উচিত। রোজা রাখলে যদি মা বা সন্তানের কারও ক্ষতি হয় বা এ ব্যাপারে যদি ডাক্তারের কোন নিষেধাজ্ঞা থাকে, তবে রোজা না রাখাই ভালো।
তবে রোযা রাখলে অবশ্যই খাওয়ার দাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ রমজান মাস এলে বিকেল থেকেই ইফতারের জন্য নানা খাবার তৈরি ও বিক্রির হিড়িক পড়ে। হরেক রকম ইফতারির পসরা সাজিয়ে দোকানিরা রাস্তার ধারে, ফুটপাতে, অলিগলিতে, হাটবাজারে সাজিয়ে রাখেন। এসব ইফতারির মধ্যে রয়েছে ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনি, ডালবড়া, সবজিবড়া, আলুর চপ, খোলা খেজুর, হালিম, জালি কাবাব, জিলাপি, বুন্দিয়া ইত্যাদি। আরও রয়েছে বিভিন্ন ফল ও ফলের রস, আখের গুড়ের শরবত, নানা রং মিশ্রিত বাহারি শরবত। বিরিয়ানি ও তেহারি তো আছেই। সাধারণত এসব খাবার মানসম্মত তেলে এবং সঠিক নিয়মে ভাজা হয় না, তাই এসব স্বাস্থ্যসম্মত নয়। পারতপক্ষে দোকানের তৈরি ইফতার ও সেহরিসামগ্রী না খাওয়াই ভালো। সুস্থ, স্বাস্থ্যবান রোজাদারের জন্য ইফতারে খেজুর বা খোরমা, ঘরের তৈরি বিশুদ্ধ শরবত, কচি শসা, পিঁয়াজু, বুট, মৌসুমি ফল থাকা ভালো। ফলমূল খেলে ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং সহজে তা হজম হয়।
দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকার কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে এবং পানিশূন্যতার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই পরিমাণমতো বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। ইফতার ও সেহরির সময়ে অতিভোজন থেকেও বিরত থাকুন। বরং মাত্রাতিরিক্ত খেলে ক্ষতির শঙ্কাই বেশি। খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে ধীরে ধীরে খান, যা আপনার হজমে সহায়ক হবে। রমজান মাসে ৩টি কাজের কথা মনে রাখতে হবে। এগুলো হলো সবসময় সুষম পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা এবং সেহরি বা ইফতারের সময় তৈলাক্ত বা ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলা। খাদ্য তালিকায় কাঁচা লবণ খাওয়ার পরিমাণ যতটা সম্ভব কম রাখা। রোজা রাখা অবস্থায় সকালে ব্যায়াম না করে ইফতারের পর ব্যায়াম করা উচিত। সম্ভব হলে শারীরিক পরিশ্রম কম করুন। আর তাই যারা নিয়মিত রোজা রাখেন, তাদের খাদ্য গ্রহণ ও স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
লেখক: বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ।