রোগীর পেট থেকে করা হলো কলম-বাঁশের কাঠি-বেল্ট-সুচ, বিস্ময় চিকিৎসকরা

by glmmostofa@gmail.com

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি।। 

সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আব্দুল মোতালেব নামে এক রোগীর পেট থেকে তাঁতের কাজে ব্যবহৃত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্ট ও একটি কলম রেব করেছেন চিকিৎসকরা।

সোমবার (৩ জুন) ও মঙ্গলবার (৪ জুন) দুই দফায় এন্ডোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে তাঁর পেট থেকে এসব বের করেন চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, গত বছর ২০২৩ সালে এই মোতালেবের পেট থেকে দুই দফা এন্ডোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে বের করা হয়েছিল ২৩টি কলম। তখন তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন আর কখনও কলম খাবেন না। এবারও তো কলম খেয়েছেনই, সেইসঙ্গে খেয়েছেন তাঁতের কাজে ব্যবহৃত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্টও। এত ধারালো বস্তু কীভাবে গিলেছেন মোতালেব! তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে চিকিৎসক।

চিকিৎসকের মতে, পিকা সিনড্রোম নামে মানসিক রোগে আক্রান্ত মোতালেব। যে কারণে তিনি রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া কলম, লোহার সুচসহ যা পাচ্ছেন গিলে খাচ্ছেন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী, চিকিৎসা শেষ হলে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসবেন মোতালেব।

জানা গেছে, গত বছর মে মাসে পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর মহল্লার মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুল মোতালেব। ওই সময় দুই দফা এন্ডোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে একে একে বের করা হয় ২৩টি কলম। যা ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর। সেবার এন্ডোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে ২৩টি কলম বের করার পর কলম না খাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। তবে প্রতিজ্ঞা রাখেননি বিরল মানসিক রোগে আক্রান্ত মোতালেব। তবে এবার তার অবস্থা ছিল আরও ভয়াবহ।

এক বছরের ব্যবধানে চলতি বছরের মে মাসের ১৩ তারিখে আবারও পেটের তীব্র ব্যথা শুরু হয় মোতালেবের। মা লায়লি খাতুন আবারও নিয়ে আসেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শে আবারও তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক বুঝতে পারেন আবার মোতালেব কলম খেয়েছেন। কিন্তু এবার কলম ছাড়াও আরও ধারালো বস্তুর খোঁজ পাওয়া যায় মোতালেবের পেটে। পরবর্তীকালে গত সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দফায় এন্ডোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে মোতালেবের পেট থেকে লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্ট ও একটি কলম বের করা হয়।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট এবং এন্ডোস্কোপিক সার্জন মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মোতালেব পিকা সিনড্রোম নামে মানসিক রোগে আক্রান্ত। এটি একটি ব্যতিক্রম রোগ। যে কারণে তিনি কলম কুড়িয়ে খাচ্ছে। এবার কলম তো খেয়েছেনই সঙ্গে খেয়েছে তাঁতের কাজে ব্যবহৃত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্ট ও একটি কলম। এত ধারালো বস্তু কীভাবে গিলেছেন তা চিন্তা করাও কঠিন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা শেষ হলে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসবে।’

মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, ‘সব সময় তো ওর সঙ্গে থাকা হয় না। আবারও কলম খাই, এটি জানতাম না। চুপি চুপি হয়তো খেত। গত মাসে হঠাৎ করে পেটের ব্যথা আবারও শুরু হয়। নিয়ে আসি মনসুর আলী হাসপাতালে। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেন আবারও কলম খেয়েছে মোতালেব। মোতালেবের বাবা নাই। আমাকেই সংসার চালাতে হয়। ওর চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। সরকারি সহায়তা পেলে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারতাম।’

প্রসঙ্গত, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মোতালেব হোসেন। সে ২০০০ সালে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হন। এরপর থেকেই সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে কুড়িয়ে পাওয়া কলম খেতে শুরু করেন। ২০২৩ সালের গত ১৬ মে মোতালেবের পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি হন। এ সময় সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা এন্ডোস্কোপিক করে পেটের ভেতরে বেশ কয়েকটি কলম শনাক্ত করে। পরে দুই দফায় তাঁর পেটের ভেতর থেকে এন্ডোস্কোপিক মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই ২৩টি কলম বের করেন ডাক্তাররা।

 

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com