নিজস্ব প্রতিবেদক।।
রাজধানীর শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে সম্প্রতি ৬৫ জন চিকিৎসকের নিয়োগকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের বঞ্চিত ও সাধারণ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, এ নিয়োগ রাতের আঁধারে ভোটের মতোই। কারণ স্বৈরাচার সরকারের আমলেও এমন নিয়োগ হয়নি।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, পরীক্ষা গ্রহণ, খাতামূল্যায়ন, মেধাক্রম অনুযায়ী ফল প্রকাশ ও প্রজ্ঞাপন ছাড়া চিকিৎসক নিয়োগের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজধানীর শ্যামলীতে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন।
এ সময় চিকিৎসকরা বলেন, কোনো বিশেষ অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতালে এভাবে চিকিৎসক নিয়োগ (এডেহক ভিত্তিতে) হতে পারে। তবে সরকারি হাসপাতাল বা স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে এমন নিয়োগ দেয়া যায় না। কোনো ধরনের সার্কুলার বা নিয়োগ পরীক্ষার তোয়াক্কা না করে লোকচক্ষুর অন্তরালে এ নিয়োগ নিয়োগ হয়েছে। এখানে যত জন আবেদন করেছেন, ততজনেরই নিয়োগ হয়েছে। তাও হয়েছে অন্ধকারে।
নিয়োগপ্রাপ্তরা নিজেদের বৈধ দাবি করছেন, আপনারা কেন বিরোধিতা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বঞ্চিত চিকিৎসকরা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আমলেও এমন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারাও তাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) নিয়োগকে বৈধ বলেছে, বর্তমান নিয়োগপ্রাপ্তরাও সে রকমই বৈধ দাবি করছেন। আমাদের দায়িত্ব এই অনিয়মের কথা মানুষের সামনে তুলে ধরা। এমন একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের নিয়োগ কেনো হবে? যেখানে সুযোগ আছে সার্কুলার দিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া সেটাই করতে হবে।’
যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে কিনা, জানতে চাইলে ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা বলেন, ‘টেবিলের নিচে লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ হলে, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই যোগ্যতার প্রশ্ন ওঠে। তারা যোগ্য হলে লড়াই করে এই পদে আসতেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফার্টিলিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এসএম খালিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা অবশ্যই পরিচালক প্রশাসনকে দায়ী করছি, নিয়োগ বোর্ডের যারা সাইন (স্বাক্ষর) করেছেন তাদের দায়ী করছি। আমরা আবারও বলছি, এই হাসপাতালের একজন চিকিৎসককে ( হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. এমএম আজিজ) জাতির সামনে বিপর্যস্ত হতে হয়েছে; অসম্মানিত, লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। আমরা এই প্রশাসনের শ্রদ্ধেয় স্যারদেরকে অতীব বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, আপনারা এগুলো দেখে শিক্ষা নিন। জাতির কাছে, চিকিৎসক-ছাত্রদের কাছে শ্রদ্ধার আসনে থাকার চেষ্টা করেন। কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করে বা কোনো পক্ষে গিয়ে অসম্মানের ভাগিদার বা ভবিষ্যতে একটা কালো অধ্যায়ের সাক্ষী না হওয়ার অনুরোধ করবো।’
এ নিয়োগ বাতিল করে নতুন নিয়োগের আহ্বান জানিয়ে ডা. এস এম খালিদুজ্জামান। বলেন, ‘আমরা চাই, এই নিয়োগ বাতিল করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আবার নিয়োগ দেওয়া হোক। মেধার ভিত্তিতে জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক।’
এ সময় চিকিৎসকরা স্লোাগান তুলেন, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘নব্য ফ্যাসিস্টদের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও।’ তারা বলেন, ‘কোনো প্রকার পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়াই ৬৫ জন নিয়োগ হয়েছে, যা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের মতো এমন একটি প্রতিষ্ঠানে এভাবে স্বচ্ছতা ছাড়া নিয়োগ কোনোভাবে কাম্য নয়। এটা অনেকটা কোটায় নিয়োগের মতো। আমরা আমাদের সম্মানিত শিক্ষকদের অনুরোধ করবো, যাতে চিকিৎসক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হয়- সে ব্যাপার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তারা।