রাজশাহী প্রতিনিধি।।
অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে চার দিনের ব্যবধানে দুই শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ খুঁজতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেছেন ঢাকা থেকে আসা আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল।
ঢাকার মহাখালীর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলটি সোমবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। এ সময় তারা সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং শিশু দুটির বাবা-মা এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা চারঘাটের রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের উদ্দেশে রওনা দেন। তবে এ সময় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
প্রতিনিধিদলের তিন সদস্য হলেন আইইডিসিআরের মেডিকেল অফিসার ক্য থোয়াই প্রু প্রিন্স, এফইটিপি-বি ফেলো মো. মাইনুল হাসান এবং সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
এদিকে দুই শিশুর বাবা-মাকে দুদিন আইসোলেশনে রাখার পর সোমবার বিকালে তাদের ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মারা যাওয়া দুই শিশু হচ্ছে মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া। ২ মার্চ দুই বছর বয়স হত মুনতাহা মারিশা এর এবং ৩০ মে পাঁচ বছর হত মুফতাউল মাশিয়ার বয়স।
তাদের বাবা মনজুর রহমান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।
পরিবার জানায়, শিশুরা কুড়িয়ে আনা বরই না ধুয়ে খেয়েছিল, তারপরই তাদের জ্বর আসে।
এ দুই শিশুর মধ্যে বড় বোন মাশিয়া শনিবার বিকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মারা যায়। চার দিন আগে বুধবার হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় মুনতাহা মারিশার।
চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণা ছিল, শিশু দুটি নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। এ ধারণা থেকেই মাশিয়ার মৃত্যুর পর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল।
রোববার আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জানান, দুই শিশু নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়নি। তারা অন্য কোনো কারণেও মারা যেতে পারে।তাদের মৃত্যুর কারণ অন্য কোনো ভাইরাস কিনা তা জানার জন্য রাজশাহীতে এসেছে আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল।
সকাল ১০টা থেকে আইইডিসিআরের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ নম্বর নিপা আইসোলেশান ওয়ার্ডে থাকা শিশুদের বাবা মনজুর রহমান ও মা পলি খাতুনের সঙ্গে কথা বলেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার মুনিরুজ্জামান বলেন, “তারা মারা যাওয়া দুই শিশু ও তাদের বাবা-মায়ের রোগের কেইস হিস্ট্রি শোনেন। পরে তারা চারঘাটে গেছেন।
এ সময় হাসপাতালের পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাও আইইডিসিয়ারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বলেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, “মৃত দুই শিশু ও তাদের বাবা-মা আসলে কোনো অজানা রোগে আক্রান্ত কি-না তার সঠিক কারণ বের করা প্রয়োজন। তাই আইইডিসিআরের তিন সদস্য অধিকতর তদন্তের জন্য রাজশাহী এসেছেন। মৃত্যুর সঠিক কারণ বের করতে তারা কাজ করছেন।”
ঢাকায় পাঠানো আগের নমুনাও পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে জানিয়ে পরিচালক বলেন, দুই শিশুর পাকস্থলীর খাবারের নমুনা হাসপাতালে সংরক্ষণ করে রাখা ছিল। এই নমুনাও তারা সংগ্রহ করেছেন।
“এটি ঢাকার ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হবে যে, খাবারে কোনো বিষক্রিয়া ছিল কিনা।”
বাবা-মাকে ছাড়পত্র
বড় মেয়ে মাশিয়া মারা যাওয়ার পর শনিবার বিকাল থেকে মনজুর রহমান ও পলি খাতুনকে হাসপাতালে আইসোলেশনে রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। যে কারণে তারা মাশিয়ার দাফন অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে পারেনি।
রোববার দুপুরে হঠাৎ করেই পলি খাতুনের জ্বর আসে। তখন চিকিৎসক তাকে ওষুধ দেন। পরে জ্বর ভাল হয়ে যায়।
হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “এর পর আর পলি খাতুনের জ্বর আসেনি। যেহেতু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন সে কারণেও জ্বর আসতে পারে।
“বিকাল ৪টার দিকে তাদের হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তারা বাড়ি চলে গেছেন।”
মনজুরের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে।