নিজস্ব প্রতিবেদক।।
অসংখ্য মানুষ প্রতি বছরে চিকিৎসার জন্য ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। চিকিৎসকরা রোগীদের যথেষ্ঠ সময় না দেওয়া, হাসপাতাল-ডায়গনোস্টিক সেন্টারগুলোতে সঠিক রোগ নির্ণয় না হওয়াসহ অন্তত ২১ কারণে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি অনেকে আস্থা রাখতে পারছেন না। বিশেষ করে ক্যানসার, কিডনি ট্রান্সপ্লান্টসহ তিন থেকে চারটি রোগের চিকিৎসায় বেশি পরিমাণে বিদেশ যাচ্ছেন।
রোগীদের এই বিদেশ মুখাপেক্ষিতা রোধে অন্তবর্তী সরকার ক্যানসারসহ অন্তত তিনটি রোগের অত্যাধুনিক চিকিৎসায় কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকদের প্রস্তুত করছে। এ তথ্য জানিয়েছেন অন্তববর্তী সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে শহিদ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী সভা কক্ষে স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ আয়োজিত ‘চিকিৎসা সেবা: বিদেশ মুখাপেক্ষিতা থেকে উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তেবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান এবং চিকিৎসকদের গাফিলতির বিষয়টা বেশি আলোচনা হয়। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিভাবে দ্রুত সময়ে সমাধান করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসা সেবা এবং কাঠামো রোগীদের আস্থা যথেষ্ঠ মাত্রায় অর্জন করতে পারছে না। কিছু প্রযুক্তিও পর্যাপ্ত নয়। তবে এটি একদিনে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এভাবে নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে সেবাগ্রহীতা এবং দাতার সঙ্গে আস্থার সংকট তৈরি হয়।
তিনি বলেন, এখানে বিদেশমুখীতার জন্য ২১টি কারণ আলোচনা হয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনায় আমরা তিন থেকে চারটি রোগের চিকিৎসায় বিদেশ যাওয়া রোধে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে প্রস্তুত করা করবো। এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এই তিন রোগের চিকিৎসা দেবে প্রয়োজনে তাদের ইনসেনটিভের (প্রণোদনা) ব্যবস্থা করা হবে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে খরচ সমান বা কিছুটা বেড়ে গেলে অভিযুক্ত করা যাবে না। সেটা সিস্টেমটা যেনো আধুনিক হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। এভাবে যেসব রোগে রোগীরা বেশি বিদেশ যান সেগুলোর চিকিৎসার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিদেশমুখীতা রোধে বিএসএমএমইউ সুপারস্পেশালাইজড হাসপাতালকে লিডিং হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতাল ক্যাপাসিটি ও ম্যাকানিজম বাড়ানো হবে। আর বিদেশে রোগীর চিকিৎসা নিতে টেলিভিশনে যে বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা চালানো হয় সেটি বন্ধে প্রচলতি আইন প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাধীনতার পর ছোট-বড় অসংখ্য হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। তারপরও দেশের একটি বড় সংখ্যক রোগী পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে চিকিৎসকরা রোগীদের যথেষ্ঠ সময় দেন না। কোয়ালিটি সেবাপ্রাপ্তিতে চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপর রোগীদের আস্থা কম। ডায়াগনোসিস গুণগত নয়। চিকিৎসা নিয়ে রোগ সারছে না এমন বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে। এটি থেকে উত্তরোণে আজকের আলোচনায় উঠে আসা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে।
আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইসিডিডিআরবি) চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. এহসান বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা অনেক ভালো এটি প্রথমে বিশ্বাস করতে হবে। এই মুহুর্তে বিশ্বে মেডিকেল ট্যুরিজমের পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ইন্ড্রাজস্টি। মেডিকেল ট্যুরিজমের ৪০ শতাংশ হয় এশিয়ার দেশগুলোতে। যার এক-তৃতীয়ংশ নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। আবার ভারতের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাজার বাংলাদেশর রোগী নিয়ে। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর তিন থেকে চার বিলিয়ন ডলার চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছে। রোগীদের বিদেশমুখীতা ঠেকাতে আগামি ১ থেকে দুই বছরে কি করবো এবং ৫ বছরে কি করবো সেটি নিয়ে পরিকল্পনা করে আগাতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশের চিকিৎসকদের ব্যবহারের পরিবর্তন আনতে হবে। কিছু রোগের চিকিৎসা সুপারস্পেশালিটি ব্যবস্থা ও গবেষণা বাড়াতে হবে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক শারমিন মুবিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল।
সভায় মতামত পেশ করেন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্যবিদসহ বিভন্ন প্রতিষ্ঠান ও দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা।