নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সামাজিক কুসংস্কার বা স্টিগমার প্রভাব অনেক প্রভাব রয়েছে যক্ষ্মায় । এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যক্ষ্মার কারণে বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। দেখা গেছে , প্রায় ২৮ শতাংশ যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি তাদের চিকিৎসা গ্রহণ ও সেবাচক্রের প্রথম তিনটি পর্যায়ে কুসংস্কারে প্রভাব অনুভব করেন। আর তাদের পরিবারের প্রায় ২২ শতাংশস দস্য কুসংস্কারের সম্মুখীন হন। এছাড়াও ১৪ ভাগ যক্ষ্মা রোগী ও তাদের পরিবারের ১১ ভাগ সদস্য বাড়িতেও কুসংস্কার অনুধাবন করেন বলেও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর) এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানী মহাখালীর আইসিডিডিআরবির সাসাকাওয়া মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে যক্ষ্মা-সম্পর্কিত স্টিগমার অবস্থা’ শীর্ষক গবেষণার ফল প্রকাশে আয়োজিত সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম এবং ঢাকা জেলার শহর ও গ্রামীণ এলাকায় পরিচালিত এই সমীক্ষায় স্টপ টিবি পার্টনারশিপের ‘টিবি স্টিগমা অ্যাসেসমেন্ট ডেটা কালেকশন টুল’ ব্যবহার করা হয়। এতে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন গত পাঁচ বছরের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্য, কমিউনিটি প্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠানে সমাজের স্টিগমা কাটিয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহ্বান জানান গবেষক ও বক্তরা।
গবেষণা থেকে জানা যায়, যক্ষ্মাসংক্রান্ত স্টিগমা নারীদের বেশি প্রভাবিত করে। এতে সামাজিকভাবে অসম্মান, হয়রানি ও আর্থিক অসুবিধায় পড়েন তারা। এমনকি স্টিগমাকে প্রায়শই এমন একটি সামাজিক আচরণ হিসাবে দেখা হয়। যেখানে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। অপমানজনক ও নেতিবাচক আচরণের শিকার হন তারা।
গবেষণায় বাংলাদেশে যক্ষ্মা-সংক্রান্ত স্টিগমার ব্যাপক প্রভাবকে তুলে ধরে এটিকে যক্ষ্মার সেবা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসাবে চিহ্নিত করেছে। স্টিগমার কাঠামোগত এবং সামাজিক কারণগুলো মোকাবিলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। যার লক্ষ্য মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, যক্ষ্মাসহ বিভিন্ন রোগের বিষয়ে স্টিগমা সবসময়ই ছিল। এর কারণ শিক্ষার অভাবের পাশাপাশি মন-মানসিকতার উপরেও নির্ভর করে। ফলে চিকিৎসকরা স্টিগমামুক্ত কি না সেটাও নিশ্চিত নয়। আমাদের কেয়ার প্রোভাইডাররাও অনেক সময় রোগীদের দূর থেকে করণীয় বলে দেন। যেটা অনেক সময় দুঃখজনক অবস্থায়ও পৌঁছায়।
তিনি আরও বলেন, টিবি নিয়ন্ত্রণে সরকার কী করতে পারে, সে ফর্মুলা দিলে সরকার অবশ্যই তা বাস্তবায়ন করবে। আমাদের নলেজ বেইজড পরামর্শ থেকে সমাধানমূলক পরামর্শ দেওয়া প্রয়োজন। টিবি নিয়ন্ত্রণে আমরা অনেক অর্জন করেছি তবে আমাদের আরও অনেক দূরে যেতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, একসময় মানুষ যক্ষ্মা নিয়ে কথা বলতে ভয় পেত, তবে এখন দেশের যেকোনো প্রান্তে গেলেই যক্ষ্মার নাম শোনা যায়। এটা হয়েছে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সফল উদ্যোগের কারণে। যক্ষ্মার কঠিন চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হলে আমাদের এভাবেই যৌথভাবে কাজ করে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে গবেষণ ফলাফলের উপর আলোকপাত করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো টিটু মিয়া, জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর মো. মাহাফুজার রহমান সরকারসহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ ।