মেনিনজাইটিস হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন

by hmmkfyt@gmail.com
মেনিনজাইটিস

অধ্যাপক ডা. হারাধন দেবনাথ ।। 

মেনিনজাইটিস প্রাথমিক লক্ষণের ভিত্তিতে শনাক্ত করা কষ্টকর। শনাক্ত করা গেলেও প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়। আর এ রোগে ২০ শতাংশ রোগী বেঁচে গেলেও প্রতিবন্ধিতা বরণ করতে বাধ্য হয়।

আমাদের মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ডের চারদিকে যে সূক্ষ্ম টিস্যুস্তরের আবরণ রয়েছে, তাকে মেনিনজেস বলে। এ টিস্যু স্তরের আবরণে সংক্রমণের ফলে যে প্রদাহ হয়, তাকে বলে মেনিনজাইটিস। সাধারণত অণুজীবের সংক্রমণে এমনটি হয়।

মেনিনজাইটিস নানা রকমের হয়, যেমন ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস, নিসেরিয়া মেনিনজাইটিস, ভাইরাল মেনিনজাইটিস ইত্যাদি। ভাইরাল মেনিনজাইটিস নানা ধরনের ভাইরাসের কারণে হয়। এগুলো হাঁচি, কাশি ও অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্যবিধির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

প্যারাসাইট বা পরজীবী দিয়েও মেনিনজাইটিস হতে পারে। যেমন অ্যামিবিক মেনিঙ্গোএনসেফালাইটিস (পিএএম) প্যারাসাইট মেনিনজাইটিসের একটি বিরল রূপ, যা প্রাণঘাতী সংক্রমণ সৃষ্টি করে। ফাঙ্গাল বা ছত্রাকজনিত মেনিনজাইটিসও বিরল। এটি মেনিনজেসে রক্ত দিয়ে বাহিত হয়। এইডস, ডায়াবেটিস বা ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী, যাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল, তাঁদের এ ধরনের মেনিনজাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

অসংক্রামক মেনিনজাইটিসও আছে। অসংক্রামক মেনিনজাইটিস হওয়ার কারণগুলো হলো ক্যানসার, সিস্টেমেটিক লুপাস এরিথিমেটোসাস (লুপাস), কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ, মাথায় আঘাত বা অস্ত্রোপচার। ৫ বছরের নিচের বয়সের শিশু ও ১৫ থেকে ১৯ বছরের কিশোর-কিশোরীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি।

এ রোগের প্রধান লক্ষণ হলো তীব্র মাথাব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, স্মৃতিবিভ্রম, বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব, আলোর দিকে তাকাতে না পারা, অস্বস্তি, শরীরে বিশেষ দাগ, মূর্ছা যাওয়া, প্রচণ্ড ঘুম পাওয়া, শরীরে ভারসাম্য হারানো ইত্যাদি।

রোগ শনাক্ত

রক্ত পরীক্ষা: রক্তে কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কি না, তা দেখা হয়।

লাম্বার পাংচার: মস্তিষ্কসুষুম্না তরল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া সিটি স্ক্যানের প্রয়োজন হয়।

করণীয়

লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একজন নিউরোলজিস্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মেনিনজাইটিসের সঠিক কারণ নির্ণয় করে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়:

১. ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস: এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত অ্যান্টিবায়োটিক ভালো কাজ করে।

২.   ভাইরাল মেনিনজাইটিস: এটি ব্যাকটেরিয়া মেনিনজাইটিসের মতো প্রাণঘাতী নয়। এটিতে শুধু সহায়ক থেরাপি প্রয়োজন।

৩.   ফাঙ্গাল মেনিনজাইটিস: ক্রাইপ্টোকক্কাল বা কোক্সিডায়োডস মেনিনজাইটিসের মতো ফাঙ্গাল মেনিনজাইটিসের চিকিৎসায় উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিফাঙ্গাল দীর্ঘদিন ব্যবহার করা হয়।

মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস এমন একটি রোগ, যা চিকিৎসার জন্য ২৪ ঘণ্টারও কম সময় পাওয়া যায়। তাই এর প্রতিরোধে মেনিনগোকক্কাস ভ্যাকসিন গ্রুপ-এ, সি, ডব্লিউ-১৩৫ এবং ওয়াই টিকা নেওয়া উচিত।

লেখক : নিউরোসার্জন, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com