নিজস্ব প্রতিবেদক।।
চিকিৎসক লতা আক্তার নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিজ বাসার কক্ষে বসে পড়ছিলেন। অন্য কক্ষে মা দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত ছিলেন। হুট করেই লতার সাবেক স্বামী কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর তিনি লতাকে জাপটে ধরে গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। নিজের গায়েও আগুন ধরান। মুমূর্ষু অবস্থায় লতা নিজেই স্বজনদের এসব জানিয়েছেন বলে জানান তার ফুফাতো ভাই সজীব আহমেদ। তিনি জানান, প্রতিবেশীরা দরজা ভেঙে দগ্ধ অবস্থায় দুজনকে দেখতে পান।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি)সজীব আহমেদের সঙ্গে কথা হয় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চতুর্থ তলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সামনে দাঁড়িয়ে। আইসিইউর ১৫ নম্বর শয্যায় লতা চিকিৎসাধীন। তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। আইসিইউর পাশে থাকা অপেক্ষাকক্ষে স্বজনেরা উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা নিয়ে দুই দিন ধরে পালা করে অবস্থান করছেন। ওই সময় স্বজনদের মধ্যে ছিলেন লতার ফুফাতো ভাই সজীব আহমেদ।
চিকিৎসকদের ভাষ্য, লতার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। তাঁর শরীরের ৮০ শতাংশের বেশি দগ্ধ হয়েছে।
গত রোববার বেলা পৌনে একটার দিকে রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের ব্রাহ্মণের টেক গ্রামে গায়ে আগুন লাগানোর এ ঘটনা ঘটে। লতার সাবেক স্বামী মো. খলিলুর রহমান (৩৫) সোমবার দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
লতার পরিবার ও পুলিশের ভাষ্য, খলিলুর রহমান পেশায় গাড়িচালক ছিলেন। প্রেম ও বিয়ের সময় পেশার কথা গোপন করেন খলিলুর। বিয়ের পর তা জানতে পেরে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটান লতা। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে লতার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন এবং নিজের গায়েও আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেন খলিলুর।
গ্রামের বাড়িতে লতা ও তাঁর মা বাস করেন। তাঁর বাবা মারা গেছেন। বড় দুই ভাই–বোন ইতালিপ্রবাসী। রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে লতা নারায়ণগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত। মারা যাওয়া খলিলুর রহমানের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকায়।
এদিকে, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন নরসিংদীর সাবেক স্বামীর পেট্রোলের আগুনকান্ডে মারাত্মক দগ্ধ আহত চিকিৎসক ডা. লতা আক্তারের চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থার সরেজমিন খোঁজ নিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
মঙ্গলবার বিকেলে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে উপস্থিত হয়ে চিকিৎসাধীন ডা. লতা আক্তারকে দেখেন এবং তার চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থার খোঁজ নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ চিকিৎসাধীন ডা. লতা আক্তারের শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয় বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবগত করেন। ডা. লতা আক্তারের শরীরের নব্বই ভাগ পুড়ে গেছে বলে এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ।
পুরো ঘটনা শুনে এবং ঘটনার তীব্রতা অনুভব করে ঘটনাটিকে অত্যন্ত দু:খজনক বলে অভিহিত করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রী বলেন, “এই ঘটনাটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক, হৃদয়বিদারক ও দু:খজনক। এমন ঘটনায় আসলে কেউই লাভবান হয় না, শুধু নিজেদেরই ক্ষতি হয়। পেট্রোলে পুড়ে যাওয়া আমাদের এই চিকিৎসক রোগীর প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তাকে সুস্থ করা বেশ কঠিন হয়ে গেছে। তবে, রোগীকে সুস্থ করতে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সব ধরনের চেষ্টাই আমাদেরকে অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা আমাদের সাধ্যের শেষ বিন্দু দিয়ে চাই এই রুগী দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসুক।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে নরসিংদী থেকে ডা. লতা আক্তার নামে একজন চিকিৎসক রোগী ভর্তি হন। তার বার্নের পরিমাণ বর্তমানে ৯০%। তার সাবেক স্বামী খলিলুর রহমান রোগীর গায়ে আগুন দিয়েছেন বলে রোগী জানিয়েছেন। রোগীর ডায়িং ডিক্লারেশন নেয়া হয়েছে। রোগী বর্তমানে মেকানিকাল ভেন্টিলেশনে আইসিইউ ১৫ নং বেডে আছেন। শাহাবুদ্দিন মেডিকেল থেকে পাশ করা। উক্ত নারীর গায়ে আগুন দেয়ার পর তার স্বামী নিজের গায়েও আগুন দেয় এবং তিনি গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
চিকিৎসাধীন রোগীকে দেখার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর আহমেদুল কবীর, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের পরিচালক রায়হানা আউয়াল সহ অন্যান্য চিকিৎসকগণ উপস্থিত ছিলেন।