নিজস্ব প্রতিবেদক।।
সুন্নতে খতনা করাতে এসে মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় অভিযান চালিয়ে সেটিতে তালা ঝুলিয়ে সিলগালা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই
শিশু মৃত্যুর ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। একইসঙ্গে এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার জন্য হাসপাতালের অনুমোদন প্রয়োজন হয়, কিন্তু এই হাসপাতালের শুধুমাত্র ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন আছে। যে কারণে তাদের অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে এসে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মইনুল আহসান। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শিশু আহনাফের মৃত্যুর ঘটনায় শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা জেনেছি গতকাল সামান্য একটা মুসলমানির জন্য শিশুটিকে এই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ডা. ইশতিয়াক নামক একজন এই খতনার সার্জন ছিলেন, আর ডা. মাহবুব মুর্শেদ শিশুটির অ্যানেস্থেসিওলজিস্টস ছিলেন। অভিযোগ অনুসারে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার সময় শিশুটিকে অজ্ঞান করার পর আর তার জ্ঞান ফেরেনি। পরে আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পেরেছি। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে প্রতিষ্ঠানটিতে তালা মারা হয়েছে।’
শিশুটির পরিবারের সদস্যরা জানান, খতনা করাতে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে আয়হামকে মালিবাগের ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। অ্যানেসথেশিয়া দেওয়ার পর আর জ্ঞান ফেরেনি তার। তাদের অভিযোগ, লোকাল অ্যানেসথেশিয়া দেওয়ার কথা থাকলেও ফুল অ্যানেসথেশিয়া দেওয়া হয় আয়হামকে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঘটনার পর যে চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি করা হয়েছিল, তিনি সটকে পড়েন।
আয়হামের বাবা ফখরুল আলম বলেছেন, ‘অ্যানেসথেশিয়া দিতে নিষেধ করার পরও সেটি শরীরে পুশ করেন ডা. মুক্তাদির। তাঁর অভিযোগ, এই মৃত্যুর দায় মুক্তাদিরসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে আয়হামের বাবার মামলার প্রেক্ষিতে দুই চিকিৎসককে আটক করা হয়।
এদিকে, রাজধানীর ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতালে এন্ডোস্কোপি করাতে এসে রাহিব রেজা (৩১) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। একইসঙ্গে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুন্নাতে খৎনা করাতে এসে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় অবহেলা পাওয়া গেলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বুধবার রাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এই নির্দেশনা দেন।
বিবৃতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে এন্ডোস্কপি করাতে এসে একজনের মৃত্যুর ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। এরপর গতকালই (২০ ফেব্রুয়ারি) সেখানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পরিদর্শনের জন্য একটি টিম পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিম আজ বৃহস্পতিবার পরিদর্শনের রিপোর্ট জমা দেবে। রিপোর্ট দেখে আমরা সে বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ডা. সামন্ত লাল বলেন, দোষী প্রমাণিত হলে শুধু হাসপাতাল বা ক্লিনিকের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নয়, বরং ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলাকারীদেরও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যাতে পরবর্তীতে আর কোনো প্রতিষ্ঠান এরকম গুরুদায়িত্বে অবহেলা করতে সাহস না পায়। চিকিৎসায় অবহেলা পাওয়া গেলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সুন্নাতে খৎনা করাতে এসে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেক আপ সেন্টারটির সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকালে খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মঈনুল আহসানকে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পাঠান এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেন।
এ ঘটনায় মন্ত্রী জানান, শিশু মৃত্যুর ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত। কিছুদিন আগেও এমন একটি ঘটনা আমরা লক্ষ্য করেছি। সে ঘটনায় আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থাও নিয়েছি। এরকম আর কারো কোনোরকম দায়িত্বে অবহেলা বা গাফিলতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।