‘ভুলের কারণে বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে’

বেসরকারি মেডিকেলের মানোন্নয়নের তাগিদ 

by glmmostofa@gmail.com
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পদ্ধতিগত ভুলের কারণে দেশের বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তিতে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। অটোমেশনের নামে প্রাইভেট মেডিকেল সেক্টর ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে। একইসঙ্গে দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো চরম শিক্ষার্থী সংকটে ভুগছে বলে জানিয়েছে মেডিকেল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। এ অবস্থার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অটোমেশন নীতিকে দায়ী করছেন তারা। তবে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা শুধুমাত্র অটোমেশনকে শিক্ষার্থী না পাওয়ার কারণ হিসেবে মানতে নারাজ জানিয়ে বেসরকারি মেডিকেলের মানোন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
শনিবার  (২৫ মে) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিপিএমসিএ আয়োজিত ‘বেসরকারি স্বাস্থ্য শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ভর্তি প্রক্রিয়ায় চলমান শিক্ষার্থী সংকটের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’ শীর্ষক আলোচনা সভায়  স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এই তাগিদ দেন ।
সভায় বেসরকারি মেডিকেল মালিকরা বলছেন, চলতি বছর বেসরকারি মেডিকেলে কলেজগুলোতে এক হাজার ২০০ সিট খালি রয়েছে। গত দুইবছর মেডিকেলগুলোর ২০ শতাংশ উপর সিট খালি ছিল। এমনকি গরিব ও মেধাবী কোটাতেও শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না। একই কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে।
তবে মালিক পক্ষের এ দাবির সঙ্গে পুরোপুরি একমত প্রকাশ না করে অটোমেশনের পাশাপাশি শিক্ষার্থী কমার অন্য কারণ রয়েছে বলেও মত দেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা। তিনি বলেন, অটোমেশন নতুন কিছু নয়। এটি আগেও ছিল। আমি নিজে ঢাকা মেডিকেলে আবেদন করতে পারিনি। কারণ আমার রেজাল্ট কিছুটা কম ছিল।
ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, আমাদের মেট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েটর রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে ভাইবা হতো। তাই শুধু অটোমেশনের জন্য শিক্ষার্থী আসছে না, তা হতে পারে না। এর অন্য কোনো কারণ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী আমি তাদের ঘাটতিগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য কাজ করার পরামর্শ দেব।
মানোন্নয়নের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বেসরকারিতে মানুষ কোয়ালিটি চিন্তা করে। কারণ তারা এখানে অর্থ ব্যয় করছে। কোয়ালিটি মেইনটেইন না হলে কাজ করার প্রয়োজন নেই। সেটা যে সেক্টরেই হোক না কেন। এই কোয়ালিটি আমি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক দুই ক্ষেত্রেই চাই।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি মেডিকেল করতে হলে আগে হাসপাতাল তৈরি করতে হবে। রোগীরা মেডিকেল শিক্ষার্থীর শিখার ল্যাবরেটরি। হাসপাতাল ঠিকমতো রান করলে পরে মেডিকেল কলেজের অনুমতি হওয়া উচিৎ। যাদের পড়াবো তারা মানসম্মত চিকিৎসক তৈরি হবে কি না তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন,বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ সেক্টর ধ্বংস করার নীলনকশা করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে-প্রতিষ্ঠান গড়া কঠিন, ধ্বংস করা সহজ। প্রাইভেট সেক্টরে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীরা নিজের চয়েজমতো ভর্তি হবেন। কিন্তু অটোমেশনের কারণে তারা তা পারছেন না। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সবাই হতাশ। হাত-পা বেঁধে পানিতে সাঁতার কাটতে দেওয়ার মতো অবস্থায় অটোমেশন। যার জন্য এই পেশায় আসতে শিক্ষার্থীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। অটোমেশনের নামে এই সেক্টরকে ধ্বংস করার অপপ্রয়াস চলছে।
সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ হাবিবুল হক বলেন, অটোমেশন পদ্ধতিটি অন্য দেশ থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটি নিজেদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের বিষয়ে অন্য দেশের পরিস্থিতি আর আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়নি। অন্য দেশে এক আসনের বিপরীতে ১০ জন পরীক্ষা দেয়। সেখানে অটোমেশন প্রয়োজন। আমাদের দেশে তো সে রকম না। এখানে কয়েকটা সিটের বিপরীতে একজন আগ্রহী।
সভায় বিপিএমসিএ  নেতারা বলেন, সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের ব্যবস্থাপনাও চাহিদার তুলনায় সীমিত। এই সুযোগে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলকে দুষ্টচক্র ভুল বুঝিয়ে অটোমেশন চালু করেছে। শিক্ষার মান রক্ষায় নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি অনেক নামীদামী বেসরকারি হাসপাতাল আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে মেডিকেলে ভর্তিতে অটোমেশন পদ্ধতির কারণে দেশের সকল বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীসহ কলেজ কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, চলতি ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশের ৬৭ টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দেশী বিদেশী শিক্ষার্থীর ৬২০৮ টি আসনের মধ্যে প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ আসন এখনো শুণ্য আছে।
এ সময় বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষায় নানা সমস্যা ও করণীয় নিয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে এম আব্দুল মোমেন, সাবেক মুখ্য সচিব আব্দুল করিম, বিপিএমসির সাধারণ সম্পাদক ড. আনোয়ার হোসেন খানসহ  বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের প্রতিনিধি, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মালিকরা।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com