নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলেন মাথায় গুলিবিদ্ধ শিশু বাসিত খান মুসাকে (৭) উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে মুসার চিকিৎসা হবে। আর মুসাকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহায়তা করেছে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই। সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশি ও দেশের সাধারণ মানুষ মুসার চিকিৎসায় অর্থসহায়তা দিয়ে পাশে থেকেছেন।
পারিবাবিক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর রামপুরার মেরাদিয়া হাট এলাকার বাসার নিচে গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয় সাত বছর বয়সী শিশু বাসিত খান মুসা। মুসাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে এবয় পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিন মাসের বেশি সময় ধরে সংকটাপন্ন মুসাকে দেশে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা মুসা বারবার সংক্রমণের সম্মুখীন হয়। শরীর অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী হয়ে যাওয়ার পর দেশে আর চিকিৎসা সম্ভব নয় বলে জানান চিকিৎসকেরা। তাঁরা সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সুপারিশ করেন। তবে এত বিপুলসংখ্যক অর্থসহায়তা কোথা থেকে আসবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দেয়।
এসময় মুসাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। তারপরই চ্যানেল আই মুসাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর জন্য বিনা মূল্যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দেয়। সরকার, প্রবাসী ও দেশবাসীও সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়ায়।
চ্যানেল আইয়ের পরিচালক জহিরউদ্দিন মামুন বলেন, সরকার চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহায়তা দিয়েছি।
মুস্তাফিজুর রহমান ও নিশামনি দম্পতির একমাত্র সন্তান বাসিত খান মুসা। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় মেরাদিয়া হাট এলাকায় নিজ বাসার নিচে মুসাকে আইসক্রিম কিনে দিতে নেমে দাদি মায়া ইসলাম (৬০) ও মুসা গুলিবিদ্ধ হয়। মায়া ইসলাম পরদিন মারা যান। আর মাথায় বুলেটবিদ্ধ অবস্থায় মুসাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সংকটাপন্ন মুসাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিএমএইচের নিউরোসার্জন বিভাগে (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য) স্থানান্তর করা হয় গত ২৬ আগস্ট। আর গত ৪ সেপ্টেম্বর তাকে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালের শিশু নিউরোলজি বিভাগে। সিএমএইচে মুসা মূলত জ্যেষ্ঠ নিউরোসার্জন অধ্যাপক কর্নেল মো. আল আমিন সালেক এবং পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তারা মুসাকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য সুপারিশ করেন।
অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ বলেন, সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকের যে দলটি মুসার চিকিৎসা করবে, তাদের একজন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে এসেছেন। তাকে মুসার চিকিৎসার সব কাগজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় আনুমানিক ৫০ দিনের জন্য চিকিৎসা হবে। মুসার সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়ে আমরা খুবই আশাবাদী।
মুসার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন মুসার মা নিশামনি। তিনি বলেন, আমার একমাত্র সন্তানকে নিয়ে কঠিন সময় পার করছি। এ অবস্থায় আমার সন্তানের প্রতি সরকার, সমাজ যে ভালোবাসা দেখিয়েছে, আর্থিক ও মানসিক সহায়তার হাত বাড়িয়েছে, তার জন্য আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কোনো ভাষা নেই। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন।