নিজস্ব প্রতিবেদক।।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ১১ রোগীর মধ্যে ছয় জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫ জনের অবস্থা গুরুতর। তাদের চিকিৎসায় ১৭ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
শনিবার (২ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রোগীদের দেখতে এসে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি জানান, চিকিৎসাধীন ১১ রোগীর মধ্যে ৬ জনের অবস্থা কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তাদের বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন স্বজনরা। তবে অন্য ৫ জন এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। তাই তাদের ভর্তি রাখা হয়েছে। তাদের চিকিৎসার জন্য ১৭ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকালের (শুক্রবার) আলাপের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আমাকে ডেকে নিয়ে বলেছেন, এসব রোগীদের বিশেষভাবে কেয়ার নেওয়ার জন্য। তাদের চিকিৎসার খরচ প্রধানমন্ত্রী নিজে বহন করবেন।
অন্যদিকে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলাম জানান, এই আগুনের ঘটনায় নিহত হওয়া সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজালাল উদ্দিন, তার স্ত্রী গৃহিণী মেহেরুন্নেছা জাহান হেলালী ও তাদের সাড়ে ৩ বছরের মেয়ে ফায়রুজ কাশেম জামিরার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত নারী শিশুসহ ৪৩ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৩টি মরদেহ ময়নাতদন্তের পর ডিএনএ নমুনা মিলিয়ে তাদের দাবিদারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকার বেইলি রোডে বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নারী-শিশুসহ এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০টি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬টি মরদেহ ছিল।
এদিকে, শনিবার সকালে ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটি আয়োজিত ২৩তম আন্তর্জাতিক সায়েন্টিফিক সেমিনারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমার মনে হয়, রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত। সামান্য একটা ভুলের জন্য ৪৫টা প্রাণ চলে গেল, এর থেকে মর্মান্তিক আর কিছু হতে পারে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আরও বেশি অভিযান পরিচালনা করা উচিত। এই দুই প্রতিষ্ঠান আরও বেশি সতর্ক হলে অগ্নিকাণ্ড সামনের দিনে কমে আসবে।
হাসপাতালে সব ধরনের অনিয়ম বন্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযান চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, অতীতে কী হয়েছে সেগুলো মনে রাখা যাবে না। ইচ্ছা করলেই অনিয়ম করে আর হাসপাতাল খোলা যাবে না। অভিযান লাগাতার চলবে।
ডা. সামন্ত লাল বলেন, আমি বাংলাদেশের সব হাসপাতাল বন্ধ করার পক্ষে না। হাসপাতাল থাকবে, সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালও থাকবে। কিন্তু সে হাসপাতালগুলোকে নিয়ম মেনে যা যা ক্রাইটেরিয়া দরকার সেগুলো মেনে চলতে হবে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বেইলি রোডে বহুতল ভবনে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগে।আগুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার (১ মার্চ) দিবাগত রাতে রমনা মডেল থানায় এসআই (নি.) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।