বিসিএস পরীক্ষা: সবার বয়স বাড়লেও চিকিৎসকদের সুখবর নেই

সরকার চাইলে বিসিএসে চিকিৎসকদের বয়সসীমা বাড়াতে পারে: পিএসসি

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সর্বোচ্চ বয়স বাড়িয়ে ৩২ বছর নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু বাদ দেওয়া হয়েছে চিকিৎসকদের অতিরিক্ত দুই বছরের সুবিধা। ফলে সাধারণ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের তুলনায় দুই থেকে তিন বছর অতিরিক্ত সময়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর অসম এক প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে তাদের।

২৮ নভেম্বর ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি)। এতে মোট তিন হাজার ৪৮৭টি ক্যাডার পদের বিপরীতে স্বাস্থ্য ক্যাডারে পদ রয়েছে এক হাজার ৩৬১টি। বিজ্ঞপ্তিতে এই বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণে প্রার্থীর সর্বোচ্চ বয়স রাখা হয়েছে ৩২ বছর। চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে পৃথক কোনো সুবিধার কথা এতে উল্লেখ করা হয়নি।

চিকিৎসকরা বলছেন, এর আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর থাকলেও এমবিবিএস উত্তীর্ণ চিকিৎসকদেরকে দুই বছর অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হতো। বিজ্ঞপ্তিতেও বিষয়টি উল্লেখ থাকতো। কিন্তু এবার এই সুযোগটি রাখা হয়নি।

এদিকে বর্তমান প্রজ্ঞাপনের আলোকে চিকিৎসকদের অংশগ্রহণের বয়স বাড়িয়ে ৩৪ বছর করার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের কাছে আবেদনও করেছেন তারা।

যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠানো আবেদনে সাধারণ এমবিবিএস চিকিৎসকদের পক্ষে পাঁচজনের সই রয়েছে। তারা হলেন ডা. আব্দুল হাকিম, ডা. রুহুল আমিন, ডা. মাহফুজুল হক চৌধুরী, ডা. মো. মঈন উদ্দিন চিশতি, ডা. গোলাম ছামদানী।

আবেদনপত্রে বলা হয়েছে, ‘আমরা দেশের সাধারণ এমবিবিএস চিকিৎসক। আমরা জেনেছি ৪৭তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপনে সকল আবেদনকারীদের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩২ করা হয়েছ, যা বিপ্লবোত্তর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদার ও বৈষম্যহীন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক এবং এই সরকার এই কারণে আপামর সকল নবীন এবং প্রবীনদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘অন্যান্য বিসিএস আবেদনকারীর স্নাতক শেষ করতে যেখানে নূন্যতম ৪ বছর লাগে সেখানে সকল চিকিৎসকদের এমবিবিএস স্নাতক ও ইন্টার্ণশিপ শেষ করতে নূন্যতম ৭৮ মাস বা সাড়ে ৬ বছর লাগে, তাই পূর্ববর্তী সকল সাধারণ বিসিএস আবেদনকারীদের যেখানে বয়সসীমা ৩০ বছর ছিল সেখানে চিকিৎসকদের বয়সসীমা ৩২ ছিল। তাই একই কারণে উদার ও বৈষম্যহীন ন্যায় প্রতিষ্ঠায় চিকিৎসকদের বয়সসীমা পূর্বের ন্যায় ২ বছর বৃদ্ধিপূর্বক ৩২ এর পরিবর্তে ৩৪ করার আবেদন করছি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রেসিডেন্ট (জেনারেল সার্জারি) ডা. রুহুল আমিন  বলেন, ‘আগে সবার বয়স ৩০ বছর ছিল, কিন্তু ডাক্তারদের দীর্ঘ সূত্রিতার কারণে ২ বছর বেশি ছিল। অর্থাৎ চিকিৎসকদের বয়সসীমা ছিল ৩২ বছর। কিন্তু এখন সবার বয়স বাড়লেও আমাদের বাড়ে নাই, ৩২ই থেকে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন যদি সমন্বয় করতে হয়, তাহলে ডাক্তারদের বয়স আসে ৩৪। এ নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও দুই স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আবেদন জানিয়েছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’

এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনূসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস গ্র্যাজুয়েট ডা. মো. মঈন উদ্দিন চিশতি  বলেন, ‘বিগত সময়ে যতগুলো বিসিএস পরীক্ষা হয়েছে, সেগুলোতে এমবিবিএস গ্র্যাজুয়েট বা চিকিৎসকরা দুই বছর করে অতিরিক্ত সময় পেয়েছে। কিন্তু এবারের বিজ্ঞপ্তিতে সে সুবিধাটি উল্লেখ করা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা বা ইন্টার্নশিপ শেষ করার ক্ষেত্রে সাধারণত ন্যূনতম ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর লেগে যায়। অন্যরা এক্ষেত্রে চার বছরেই শেষ করে ফেলে। অর্থাৎ, আমাদের গ্র্যাজুয়েশন অতিক্রম করতে দুই বছর অতিরিক্ত সময় লাগছে।’

এজন্য দুই বছর অতিরিক্ত সময়ের ধারাবাহিকতা চেয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল না। কারণ, তাদেরকে দ্রুত সময়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হয়েছে। এটি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে আমাদের আবেদন।’

বয়সসীমার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম মেডিভয়েসকে বলেন, ‘চিকিৎসকদের জন্য আগে ৩২ বছর রাখা হয়েছিল, কিন্তু সেটি এখন সবার জন্যই প্রযোজ্য।’

এতে অন্যরা চিকিৎসকদের তুলনায় বেশি সুবিধা পাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মোটেও না। তাদের (চিকিৎসক) বয়স তো কমিয়ে দেওয়া হয়নি। ৩২ বছর ৩২ই আছে। ওটা এখন ৩৬ করতে হবে নাকি? ৩২ ইজ ফাইন।

এ ছাড়া ‘বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়তে যতটা লাগে, বাইরের দেশে ডাক্তারদের পড়াশোনা আরও বেশি সময় করতে হয়’ বলেও মন্তব্য করেন পিএসসি চেয়ারম্যান। চিকিৎসকরা গড়ে ২৪ বছর বয়সে এমবিবিএস পাশ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২৪ থেকে ৩২ আট বছর হয়। আট বছর ধরে আপনি চাকরিতে চেষ্টা করবেন, এর বেশি আপনাকে দেওয়া হবে কেন?’

অন্যরা সেখানে ১০ বছর পাচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম বলেন, ‘আমার মনে হয়, ওদের (চিকিৎসক) পড়াশোনার ধরণটিই তো আলাদা। এখন যদি সরকার মনে করে এটি বিবেচনায় নেওয়া দরকার, তাইলে সেটা হতেই পারে। তবে সাধারণত আমরা ১৮ বছর বয়সে আন্ডারগ্রাজুয়েট শুরু করি। সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে ৪ বছর লাগে, তাদের ৬ বছর। ডাক্তার হওয়ার জন্য তারা এই স্যাক্রিফাইসটি করেন। কিন্তু ৩২ বছরের মধ্যেই যত খুশি ততবার বিসিএস দেওয়া যাবে। ফলে আমার কাছে মনে হয়, এটি সবাইকে উদ্দেশ্য করেই করা হয়েছে।’

চিকিৎসকদের তুলনায় অন্যরা বিসিএসে অংশ নিতে অতিরিক্ত সময় পাচ্ছেন, এ বিষয়টিকে বৈষম্য বলে মনে করছেন না এই শিক্ষাবিদ। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না এটি বৈষম্য। একেকটি পড়াশোনার ধরণ তো একেক রকমের। চিকিৎসকরা জেনেশুনেই আসেন যে এখানে শুধু তত্ত্বীয় পড়াশোনা হয় না, প্র্যাকটিক্যালিও পড়াশোনা করতে হয়।’

এ ছাড়া ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে চিকিৎসকদের অতিরিক্ত দুই বছর বয়সের বিষয়টি আলোচনায় রাখা হয়নি বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসকদের বয়সসীমা বাড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘একজন চিকিৎসক বিসিএসে অংশ নিতে গড়ে আট বছর সময় পান। অন্যরা পাচ্ছেন দশ বছর। সে হিসাবে সরকার চাইলে তাদের বয়সসীমা আরও বাড়ানো যেতে পারেন।’

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com