নিউজ ডেস্ক।।
গণমাধ্যমকর্মী হাসান মাহামুদ। তিনি দুরারোগ্য বিরল রোগ স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি (এসএমএ) সমস্যা ভুগছেন। আর এই রোগ নিয়েই বেলজিয়ামে অনুষ্ঠিত ৪র্থ আন্তর্জাতিক সায়েন্টিফিক কংগ্রেস যোগ দিয়েছেন । গত ১৪ থেকে ১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত এই উচ্চপর্যায়ের ‘এসএমএ ইউরোপ’ কনফারেন্সে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন ।
জানা গেছে, বেলজিয়ামের ঘেন্ট শহরের আইসিসি ঘেন্ট আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই কনফারেন্সের উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের নামকরা বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী পেশাদারদের একটি আন্তর্জাতিক এবং বহু-শৃঙ্খলা গোষ্ঠীকে একত্রিত করা।
এসএমএ একটি দুরারোগ্য বিরল রোগ। পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এই রোগে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এই রোগে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ টেস্ট এবং চিকিৎসায় আওতায় আসছে না। ফলে চিকিৎসার অভাবেই অসংখ্য শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। এই রোগের চিকিৎসায় আরো নতুন পদ্ধতির ব্যবহার করে প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি করা এবং যুতসই চিকিৎসা সর্ম্পকে অভিজ্ঞতা বিনিময় ছিল এই কনফারেন্সের অন্যতম লক্ষ্য।
কনফারেন্সে বিশ্বব্যাপী নন্দিত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রোশ গ্লোবাল, নোভার্টিস, বায়োজেন ফার্মার প্রতিনিধিরা তাদের আগামীদিনের ওষুধ এবং কর্মসূচি তুলে ধরেন। বিভিন্ন দেশের চিকিৎসক, গবেষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসকরা তাদের গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। এতে সারাবিশ্বের প্রায় এক হাজারের বেশি চিকিৎসক ও পেশেন্ট অ্যাডভোকেট অংশ নেন।
কনফারেন্সটির বিষয়ে এসএমএ ইউরোপের সভাপতি নিকোল গাসেট বলেন, আমাদের বৈজ্ঞানিক কংগ্রেসের লক্ষ্য হলো বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের একটি আন্তর্জাতিক ও বহু-শৃঙ্খলা গোষ্ঠীকে একত্রিত করা। আমরা তাদের জন্য একটি ফোরামের মাধ্যমে এসএমএতে তাদের যুগান্তকারী ধারণা উপস্থাপন এবং বিনিময় করেছি। বিশেষ করে, যাতে রোগীদের প্রতি তাদের ফলাফলের প্রাসঙ্গিকতা এবং নতুন সহযোগিতাকে উদ্দীপিত করে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বৈজ্ঞানিক কংগ্রেস প্রতিভাবান তরুণ গবেষকদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম। এতে এসএমএ সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য নতুন উন্নয়ন এবং অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা, বিতর্ক এবং ব্যবচ্ছেদ করে। বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং ক্লিনিক্যাল অভিজ্ঞতা বিনিময় করার সুযোগ প্রদান করে। আমরা বিশ্বাস করি যে সম্মেলনটি এসএমএ-এর সঙ্গে বসবাসকারী রোগীদের জন্য সর্বদা উন্নত চিকিৎসা এবং যত্নের দিকে নিয়ে যাবে।
কিউর এসএমএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে কনফারেন্সে অংশ নিয়ে গণমাধ্যমকর্মী হাসান মাহামুদ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। এসএমএ রোগীদের কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দেশে নেই। ‘কিউর এসএমএ বাংলাদেশ’র কাছে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। সংগঠনটির হিসাবে, দেশে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত রোগী ১৬৩ জন। দেশের বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ফার্মাসিউটিক্যালের কাছ থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে সংগঠনটি এই পরিসংখ্যান তৈরি করেছে।
তবে সংগঠনের সদস্যরা বলছেন, এটি দেশের প্রকৃত চিত্র নয়। উন্নত বিশ্বে প্রতি ১০ হাজার জনে একজন এসএমএ আক্রান্ত রোগী রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে আত্মীয়তার মধ্যে বিয়ে বেশি হয়। তাই এই সংখ্যা এ অঞ্চলে বেশি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ, এই রোগ সাধারণত জীনগত সমস্যার কারণে হয়। আর এই জীনগত সমস্যা রক্তের সর্ম্পকের আত্মীয়তার বিয়ের হলে সেসব পুরুষ-মহিলার থেকে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যার অন্যতম কারণ ধরা হয় আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হওয়া। সে হিসাবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু টেস্ট করার সুযোগ কম থাকায় এটি নির্ণয় দুরূহ বিষয় হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি এসএমএ টেস্ট সহজ ও কম খরচে করা সম্ভব হতো; তাহলে দেখা যেত, বাংলাদেশে মহামারি আকারে এটি ছড়িয়ে আছে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ষড়ঋতুর দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে এতো বেশি নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু থাকার কথা নয়। এসব পেশেন্ট অ্যাডভোকেটদের ধারণা, দেশের নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের একটি বড় অংশ এসএমএ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। কেবলমাত্র টেস্টের মাধ্যমে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব।
প্রসঙ্গত, হাসান মাহামুদ সরকারের নিবন্ধিত নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম-এর প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এর বাইরে তিনি বাংলাদেশে এসএমএ রোগীদের কল্যাণে কাজ করা একমাত্র নিবন্ধিত সংস্থা কিউর এসএমএ বাংলাদেশের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।