বিদেশে চিকিৎসা নিতে বছরে দেশের মানুষের খরচ ৪ বিলিয়ন ডলার

দেশের ৪৯ শতাংশ মানুষ মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ মানুষই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায় না। আর দেশে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় ও ডাক্তারের ওপর আস্থা না থাকায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে প্রতিবছর দেশের মানুষ ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। স্বাস্থ্যেসেবার উন্নয়ন না হলে এর পরিমাণ দিন দিন আরও বাড়বে।  স্বাস্থ্যর খাতের উন্নয়নে সরকারের ব্যয় কম হওয়া এ সমস্যার বড় কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (২৩ নভেম্বর)  ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি’ বিষয়ক সেমিনার বক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন।

স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ডব্লিউটিওর তথ্য মতে বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ মানুষই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায় না, সেই সঙ্গে স্থানীয় সেবায় প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক মান না থাকায় বিদেশে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার প্রবণতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ খাতের উন্নয়নে বিশেষকরে উন্নত অবকাঠামো ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বাজেট সহায়তা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক হাসপাতলসমূহের চেইন কার্যক্রম বাংলাদেশে চালুকরণসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি।

মূল প্রবন্ধে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মাথাপিছু ব্যয় ১১০ মার্কিন ডলার, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ব্যয় হয় ৪০১ মার্কিন ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার ১২৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে এবং ২০১২ সালে বিদেশে স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ায় বাংলাদেশিদের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

উন্নত স্বাস্থ্যসেবার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে অবকাঠামোর স্বল্পতা, দক্ষ ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানের অভাব, সরকারি হাসপাতালে সেবা প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা, উন্নত সেবার জন্য ইন্স্যুরেন্স কভারেজের অনুপস্থিতি প্রভৃতি অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।

জাতীয় অধ্যাপক এ কে খান আজাদ বলেন, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা স্বল্পতা, চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থার স্বল্পতা, সর্বোপরি কমফোর্টের অভাবে অসংখ্য লোক দেশের বাইরে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে, এগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের মাধ্যমে রোগীদের বিদেশমুখীতা হ্রাস করা সম্ভব। দেশে পরিচালিত ল্যাবরেটরিসমূহের মান উন্নয়নের ওপর তিনি জোরারোপ করেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ডা. মো. লিয়াকত হোসাইন বলেন, ‘বিদ্যমান সমাধানে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা একটি কার্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতকরতে পারি, যার মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমবে পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ের মাধ্যমে রিজার্ভ বৃদ্ধি সম্ভব। উন্নত সেবা প্রদানে রোগীদের প্রতি ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিকতা পরিবর্তন একান্ত অপরিহার্য।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিকসেরের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ আকাশ সমাধান, যা নিরসনে দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতের বিদ্যমান ব্যবস্থাপনার আমূল সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। জনগণের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পেতে ডাক্তার ও হাসপাতাল নির্বাচনে প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ অ্যাপস চালুর ওপর তিনি জোরারোপ করেন।’ একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতি দ্রুত একটি মেডিকেল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রসূতি ও স্ত্রীরোধবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, ‘আস্থা এই সেক্টরের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই আমাদের স্বাস্থ্যসেবাকে স্বাস্থ্যসেবা পর্যটনে রূপান্তর করতে হবে। বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গ্রামীণ পর্যায়ে আরও বেশি মানের হাসপাতাল স্থাপন করা উচিত।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্সের সেক্রেটারি ডা. আবুল বাসার মো. জামাল বলেন, বাংলাদেশ এখন ওষুধ উৎপাদনকারী দেশ এবং আমরা বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করি, কিন্তু চিকিৎসা যন্ত্র উৎপাদনে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। এমতাবস্থায় এ খাতে আরও ভালো করতে হলে জোর দিতে হবে দক্ষ জনশক্তি ও প্রশিক্ষণের ওপর ।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com