নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নতুন উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হককে বরণ করতে বৃহস্পতিবার সকাল (২৮ মার্চ) সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য আয়োজন শুরু হয়। উপাচার্যকে বরণে কেউ এসেছিলেন ফুলেন মালা হাতে, কেউ এসেছিলেন বাহারি ফুলের সমন্বয়ে সাজানো ফুলের তোড়া হাতে। এ সময় অনেকেই নাচছেন ব্যান্ড পার্টির ঢাক-ঢোলের তালে তালে।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল ছিটিয়ে ও ঢোলের বাদ্যে বরণ করে নেন নবনিযুক্ত উপাচার্যকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম কোন উপাচার্যকে এভাবে বরণ করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। সকাল ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করে এই চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহবাগ মোড় থেকে বি-ব্লকের প্রধান ফটক পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল ছিটিয়ে ও ঢোলের বাদ্যে বরণ করে নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম কোন উপাচার্যকে এভাবে বরণ করে নেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। পরে বিএসএমএমইউ’র সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ নতুন উপাচার্যের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
খ্যাতিমান চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ১২ তম উপাচার্য হিসেবে দ্বায়িত্ব নিলেন।
দায়িত্ব নিয়েই সবার উদ্দেশ্যে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে নব নিযুক্ত উপাচার্য বলেন, আমি কোনো দুর্নীতি করব না, প্রশ্রয়ও দেব না। আমি আপনাদেরই লোক, আমি বঙ্গবন্ধুর লোক, আমি প্রধানমন্ত্রীর লোক। আমাকে সবাই সহযোগিতা করবেন, ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। তবে কেউ আমাকে পিছু টানবেন না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিল্টন হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নবনিযুক্ত উপাচার্য এসব কথা বলেন।
এর আগে বেলা ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে স্বপরিবারে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এসময় শাহবাগ মোড় থেকে বি-ব্লকের প্রধান ফটক পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুল ছিটিয়ে ও ঢোলের বাদ্যে বরণ করে নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম কোন উপাচার্যকে এভাবে বরণ করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। পরে বিএসএমএমইউ’র সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ নতুন উপাচার্যের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।
বিদায়ী উপাচার্যের ‘অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. দীন মো. নূরুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কী কোনো ভালো লোক নেই? যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, আমি তাদের নিয়েই কাজ করতে চাই। আমি মনে করি, প্রত্যেকের মধ্যে ভালো সত্তা আছে। আপনারা জানেন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সিন্ডিকেট কমিটি আছে, ঊর্ধ্বতন চিকিৎসক, কর্মকর্তারা আছেন, সবার সঙ্গে কথা বলেই এটি করতে হবে। আমি তো কেবল দায়িত্ব নিয়েছি। আমাকে আগে বুঝতে হবে, দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আমার বন্ধু। তিনি আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছেন। আমি শারফুদ্দিন আহমেদকে শুভেচ্ছা জানাই। আমি চেয়ারে না বসেই জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে সম্মান জানাই। আমি মনে করি, আমার এজেন্ডা একটাই। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিশ্বের অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবো।
উপাচার্য বলেন, আমি আগেও বলেছি যে আমি সুনির্দিষ্ট কোনো গ্রুপের লোক নই। আমি আপনাদের সবার। আমার পরিচয় আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোক। আমি এদেশের সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করার লোক। আমি কোনো ধরনের গ্রুপে যেতে চাই না। এ বয়সে আমার কোনো গ্রুপিংয়ের প্রয়োজন নেই। আমাকে যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা এখানে পাঠিয়েছেন, আমি সেটাকে মূল্যায়ন করতে চাই।
উদ্বোধনের দীর্ঘ দিন পরও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু না হওয়া প্রসঙ্গে নতুন উপাচার্য বলেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমি অলরেডি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার দায়বদ্ধতা আছে। আমি বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ চিকিৎসক-ট্রেইনারদেন নিয়ে এসে আমাদের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। আশা করি সেবায় প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যতম জায়গায় অবস্থান করবে।
চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে নতুন উপাচার্য বলেন, অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেই আমি সবচেয়ে খুশি হবো। অন্যকিছু দিয়ে আমাকে খুশি করা যাবে না। কেউ দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে। যিনি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পারবেন, তিনিই দায়িত্ব নেবেন বলেও জানান উপাচার্য।
প্রসঙ্গত, দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন শারফুদ্দিন আহমেদ। এ পদের নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক।দেশব্যাপী চক্ষু রোগী ও চক্ষু বিশেষজ্ঞদের কাছে খুবই প্রিয় ও সুপরিচিত নাম অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক। চক্ষু চিকিৎসক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সর্বোচ্চ সম্মাননা ডা. আলিম মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন এই চিকিৎসক। তার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার হোসেন্দী এলাকায়। তিনি পাকুন্দিয়া এলাকার মানুষের কাছে ‘ননী ডাক্তার’ নামে পরিচিত। অত্র অঞ্চলের সবাই ননী ডাক্তার হিসেবেই চেনে তাকে।