বিএসএমএমইউর গ্রন্থাগার বন্ধ, বিঘ্নিত চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ 

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও বন্ধ রয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। ফলে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। প্রশিক্ষণার্থীরা জানান, চিকিৎসা সেবাসহ সকল কিছুতে রেসিডেন্ট, নন-রেসিডেন্ট চিকিৎসকরা সম্পৃক্ত থাকলেও গ্রন্থাগারে সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে তাঁদের প্রশিক্ষণ বিঘ্নিত হচ্ছে। সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখে গ্রন্থাগার বন্ধ রাখার যৌক্তিকতা জানতে চান তারা।

আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কোটা আন্দোলন ঘিরে গ্রন্থাগারে অনাকাঙিক্ষত একটি ঘটনা ঘটেছে। এ কারণে নিরাপত্তা বিবেচনায় এটি বন্ধ রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব খোলে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রেসিডেন্ট চিকিৎসক মেডিভয়েসকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সব কিছু চালু আছে। রেসিডেন্ট, নন-রেসিডেন্ট চিকিৎসকরাও কাজ করছেন।

সময়টা পরীক্ষার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বছরে দুই সময়ে বিএসএমএমইউতে পরীক্ষা হয়। একটা জুন সেশন, আরেকটা জানুয়ারি সেশন। জুন সেশনের পরীক্ষা জুলাইয়ে হয়, আর জানুয়ারির পরীক্ষা জানুয়ারির শেষ ও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে। এই সময়টায় আসলে সবারই পড়াশোনার চাপ থাকে এবং সবাই লাইব্রেরিমুখী হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘পরীক্ষা আপাতত স্থগিত আছে, কিন্তু যে কোনো সময় নোটিস হতে পারে। এজন্য আমাদের প্রস্তুতি স্থগিত রাখার সুযোগ নেই। যেহেতু বিএসএমএমইউ সব কার্যক্রম চলছে, সেহেতু লাইব্রেরি বন্ধ রাখার তো কোনো যৌক্তিকতা নেই।’

জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট)  বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ তো, এই হিসেবে এটা বন্ধ রাখা হয়েছে। লাইব্রেরিয়ানের সঙ্গে আলাপ করে দেখি, কত তাড়াতাড়ি খোলা যায়।’

প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা যেহেতু সেবাসহ অন্যান্য সকল প্রশিক্ষণে সম্পৃক্ত রয়েছেন, সেহেতু তাদের গ্রন্থাগারে সুযোগ দেওয়া হবে না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএসএমএমইউতে সব কিছু চলছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একটু ঝামেলা হয়েছিল। কেউ কেউ মিটিংয়ের মতো কিছু করেছিল। যে কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। আর শাহবাগ তো একটা হটস্পট।’

জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর গ্রন্থাগারিক অধ্যাপক ডা. মো. হারিসুল হক আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে  বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে কর্তৃপক্ষ বন্ধ রাখতে বলেছে। তাই বন্ধ রাখা হয়েছে। যখন বলবে, খুলে দেওয়া হবে। এখানে আমার হাতে কোনো এখতিয়ার নেই। ৪/৫ দিন আগে কোনো এক বিকেল বেলায় গ্রন্থাগারে একজন সন্দেহভাজনকে পাওয়া যায়, যাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তারা জানালো, সহিংসতায় জড়িত একজনকে পাওয়া গেছে। মহামুশকিল,  ছাত্ররা পড়তে আসবে, আর পুলিশ সন্ত্রাসী বলে ধরে নিয়ে যাবে, সে আরেক বিপদে পড়বে। এজন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চলমান কোটা আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার আলোকে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কোনো ঝামেলা হলে বলা হবে, কেন খোলা রাখলেন? তখন আমরা ফ্যাসাদে পড়ে যাবো।’

‘সরকার যেহেতু সাধারণ ঘোষণা দিয়ে সমুদয় ক্লাস, লাইব্রেরি, অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। আমি কেন খোলা রাখবো?’—যোগ করেন অধ্যাপক হারিসুল হক।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতার কারণে দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গত ১৭ জুলাই কমিশনের দেওয়া এ নির্দেশনায় শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে বাস্তবায়নের উল্লেখ করা হয়।

এর আগের দিন ১৬ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

একই দিন রাতে অধিভুক্ত সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময়ে আলাদা আলাদা নোটিসে স্থগিত করা হয় সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের বিভিন্ন দিনের পরীক্ষা।

তবে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জরুরি চিকিৎসা চলমান রাখার বাধ্যবাধকতা থাকায় বিএসএমএমইউসহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলো সচল রয়েছে। বিএসএমএমইউ ও অধিভুক্ত মেডিকেলে চিকিৎসকরা সেবাসহ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com