নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ক্যান্সারের আধুনিক রোগনির্ণয় সুবিধা ও চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়েছে। ‘নেক্সট জেনারেশন সেকুয়েন্সিং’ বা এনজিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যান্সারের ডিএনএ ও আরএনএ বিশ্লেষণ করে প্রথমে রোগনির্ণয় এবং পরে চিকিৎসা- সেবা দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে বারডেমে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রথমবারের মতো ক্যান্সার ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকালে বারডেম মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এসব তথ্য জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি, জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সহ-সভাপতি আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক এম এ হাই ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক এম কে আই কাইয়ুম চৌধুরী।
ক্যান্সার চিকিৎসায় ‘নেক্সট জেনারেশন সেকুয়েন্সিং (এনজিএস)’ সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবরেটরি সায়েন্স ডিভিশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম শওকত হাসান এবং ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান ও চিফ রিসার্চ অফিসার ড. মো. সোহরাব আলম। অনুষ্ঠানে দেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞসহ দেশের খ্যাতনামা চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আলোচকরা বলেন, এখন থেকে বারডেমে ‘নেক্সট জেনারেশন সেকুয়েন্সিং’ বা এনজিএস-ভিত্তিক বিআরসিএ-১ ও বিআরসিএ-২-এর মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার ও ডিম্বাশয় ক্যান্সারের চিকিৎসা চালু রয়েছে। আন্তর্জাতিক নির্দেশিকার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বর্তমানে ফুসফুস, কোলন ও প্রোস্টেটের মতো সলিড টিউমারের ক্ষেত্রে এনজিএস-ভিত্তিক ক্যান্সার জিন প্যানেল পরীক্ষার প্রবর্তন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়,বিশেষ পরিস্থিতিতে লিকুইড বায়োপ্সির মতো অত্যাধুনিক পরীক্ষাও অবিবিলম্বে শুরু হবে। বারডেমে অত্যাধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসা ও রোগনির্ণয় সুবিধা থাকায় রোগীরা দেশেই উন্নত ক্যান্সার চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
বারডেম কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৩-১৫ লাখ, যার মধ্যে প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ নতুন ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হয়। পুরুষদের মধ্যে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হেড-নেক ক্যান্সার রয়েছে শীর্ষ স্থানে। নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ুর ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
বারডেমের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের পাঁচটি অসংক্রামক রোগের মধ্যে ক্যান্সারের স্থান চতুর্থ। পৃথিবী জুড়ে অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগ, কিডনিরোগ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগ। এসব রোগের কারণে ১৭০ লাখ মানুষের মৃত্যুর মধ্যে ৮৬ শতাংশ মানুষের মৃত্যু ঘটছে বাংলাদেশের মতো নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতেই। অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার শনাক্ত হয় দেরিতে। দেশে উপযুক্ত রোগনির্ণয়ের সুবিধা না থাকা এর মূল কারণ।