বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার ৩১শতাংশ

আজ বিশ্ব রক্তদাতা দিবস 

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

রক্তদানে মানুষের মধ্যে সচেতনতা দিন দিন বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে এখন দ্রুত রক্তদাতা মিলে যাচ্ছে। বিপদেআপদে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টায় রক্তদানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন রক্তদাতা।রোগীর অস্ত্রোপচার, ট্রমা, দূর্ঘটনা, সন্তান প্রসব, শরীরে হিমোগ্লোবিন ও আয়োডিন ঘাটতির চিকিৎসাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবায় রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার মাত্র ৩১ শতাংশ। রক্তদাতার প্রধান উৎস হলোÑ রিপ্লেসমেন্ট ডোনার বা রিলেটিভ ডোনার। দেশে বছরে প্রায় ১৪ লাখ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। বিশ্বের প্রায় ৬২টি দেশে শতভাগ স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ করা হয়।

এমন পরিস্থিতিতে রক্তদান ও গ্রহণে জনসচেতনতা তৈরিতে সারা বিশ্বের মত আজ শনিবার দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস-২০২৫। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘রক্ত দিন, আশার আলো দিন: একসঙ্গে আমরা জীবন বাঁচাই’। দিবসটি উদযাপনে সরকারি-বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা  বলছেন, উন্নত বিশ্বে স্বেচ্ছা রক্তদানের হার প্রতি এক হাজারে ৪৫ জন। অন্যদিকে বাংলাদেশ তথা উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি হাজারে ৪ জনেরও কম। বাংলাদেশে ঘাটতি পূরণ ও অনিরাপদ রক্তের ব্যবহার বন্ধ করতে বর্তমানের চেয়ে বছরে মাত্র ৫ লাখ ব্যাগ অতিরিক্ত সংগ্রহ করতে হবে। বাংলাদেশের প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার তুলনায় রক্তের চাহিদা প্রতিবছর প্রায় ১৪ লাখ ইউনিট। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রক্তদাতার সংখ্যা খুব সামান্য। ৬ থেকে ৭ লাখ লোক যদি বছরে দুইবার অন্তত রক্তদান করে তাহলেই এ ঘাটতি পুরণ হয়ে যাবে। দেশে একক রক্তদাতার সংখ্যা বেশি থাকলেও বহুবার রক্ত দিয়েছেন এমন দাতার সংখ্যা অনেক কম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সেফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন অ্যান্ড থেলাসেমিয়া ম্যানেজমেমেন্ট শাখা  জানিয়েছে সারাদেশে ২০৬টি সরকারি এবং ১৭২টি বেসরকারি ব্লাড ব্যাংক বা রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দিয়ে থাকে। অধিদপ্তরের নিরাপদ রক্তপরিসঞ্চালন কর্মসূচির মাধ্যমে বিভাগ ও জেলা ও ইউএইচসি তথা উপজেলা হেলথ কেয়ারের তত্ত্বাবধানে ২০৬টি সরকারি এবং বেসরকারিভাবে ১৭২টি ব্লাড ব্যাংক রয়েছে।

রক্তরোগ বিশেষজ্ঞরা  জানান, সরকারি হাসপাতালের বাইরে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, কেয়ান্টাম, সন্ধানী, বাঁধন, রিদম ব্লাড সেন্টার, থেলাসেমিয়া ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ থেলাসেমিয়া সমিতিসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুমোদিত ১৭৩টি বৈধ বেসরকারি ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। এর বাইরে সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা অসংখ্য অনিবন্ধিত ব্লাড ব্যাংক ও প্লাজমা সেন্টার আছে। এসব জায়গা থেকে রক্ত নেওয়া নিরাপদ নয়। তারা অসহায় রোগীদের ফাঁদে ফেলে ‘লাল রক্তের কালো ব্যাবসা’ করছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর নজরদারির অভাবে ধরা-ছোয়ার বাইরে থাকছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অভিযানেও একাধিক অবৈধ ব্লাড ব্যাংক সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রক্তবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

রক্তরোগ বিশেষজ্ঞরা  আরও দেশে রক্ত চাহিদার একটা বড় অংশ প্রয়োজন হয় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্যে। হেমাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ সূত্রমতে দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছে এক কোটি ৭০ লাখের অধিক মানুষ। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রতি মাসে ১ থেকে ৩ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। থ্যালাসেমিয়া ছাড়াও রক্তস্বল্পতা, প্রসূতির রক্তক্ষরণ, অগ্নিদগ্ধ রোগী, বড় অপারেশন, দুর্ঘটনা ইত্যাদি নানা কারণে রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তের এ চাহিদা পূরণে নতুন স্বেচ্ছা রক্তদাতার কোনো বিকল্প নেই। সাধারণত ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ সক্ষম ব্যক্তি প্রতি চার মাস পরপর রক্ত দিতে পারেন।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদানের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ম্যালেরিয়া বা অপুষ্টিজনিত কারণে তীব্র রক্তাল্পতায় আক্রান্তদের জীবনরক্ষাকারী সহায়তা হিসেবে কাজ করে নিরাপদ রক্তপরিসঞ্চালন। সব দেশের  স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিরাপদ রক্তপরিসঞ্চাল অত্যাবশ্যকীয় সেবা। যা জটিল চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার সফলে সহায়তা করে, রোগীর বেঁচে থাকার হার ও জীবনমান উন্নত করে। থেলাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, সিকল সেল অ্যানিমিয়া রোগীদের নিয়মিত নিরাপদরক্তের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসাতেও রক্ত অপরিহার্য। নিরাপদ রক্তের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই স্বেচ্ছা নিয়মিত রক্তদানের একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর নির্ভর করতে হবে বলেও জানান তিনি।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com