নিউজ ডেস্ক।।
ইউরোপের ইংল্যান্ডে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্তদের শীর্ষে রয়েছেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পুরুষরা। এরপরেই রয়েছে মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের হার সবচেয়ে বেশি। এর পরেই রয়েছে ইউরোপীয়, চাইনিজ ও ক্যারিবীয়রা। সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগের অভাবের ফলে বাংলাদেশিদের মধ্যে এই উচ্চহার দেখা গেছে।
সম্প্রতি ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ-ইউরোপ জার্নালে প্রকাশিত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এসব চিত্র উঠে এসেছে। লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে।
গার্ডিয়ান বলছে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নাফিল্ড ডিপার্টমেন্ট অব প্রাইমারি কেয়ার হেলথ সায়েন্সেসের একদল গবেষক এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন। এতে ২০০৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে এক কোটি সাত লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্য রেকর্ড এবং ৮৪ হাজার ফুসফুস ক্যান্সারের ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গবেষণার শিরোনাম ছিল ‘এথনিক ডিসপ্যারিটিজ ইন লাঞ্জ ক্যান্সার ইন্সিডেন্স অ্যান্ড ডিফারেন্সেস ইন ডায়াগনোস্টিক ক্যারেস্টারিস্টিকস: আ পপুলেশন বেজড কোহোর্ট স্টাডি ইন ইংল্যান্ড’।
গবেষণায় দেখা গেছে, ফুসফুস ক্যান্সারের সবচেয়ে উচ্চ হার রয়েছে বাংলাদেশি পুরুষদের মধ্যে, যাদের পরেই রয়েছে সাদা, চাইনিজ ও ক্যারিবিয়ান পুরুষরা। এ ছাড়া, ইংল্যান্ডের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকার মানুষদের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের হার অন্যান্য এলাকার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি; যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যকে সামনে আনে।
গবেষক দল বলছে, ফুসফুস ক্যান্সারের ক্ষেত্রে জাতিগত পটভূমি এবং সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারের হার বেশি হওয়ার পেছনে শুধু ধূমপান নয়, বরং সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগের অভাবও একটি বড় কারণ।
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ব্রিটেনের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকায় পুরুষদের মধ্যে প্রতি এক লাখে ২১৫টি ক্যান্সারের ঘটনা ঘটে। বিপরীতে সবচেয়ে ধনী এলাকাগুলোতে এই সংখ্যা ৯৪। মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই বৈষম্য দেখা গেছে, যেখানে দরিদ্র এলাকায় এক লাখে ১৪৭টি ক্যান্সারের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ধনী এলাকায় সেটি ৬২টি।
গবেষক দলের প্রধান ড. ড্যানিয়েল যু-হুয়ান চেন বলেন, ‘শুধু ধূমপান নয়, আমাদের গবেষণাটি দেখায় যে জাতিগত পটভূমি এবং সামাজিক অবস্থা ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি এবং কিভাবে এটি বিকাশ লাভ করে, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
গবেষণার ফলাফলে আরও দেখা যায়, দক্ষিণ এশীয়, ক্যারিবীয় ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত নারীরা এডিনোকারসিনোমা ধরনের ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার দ্বিগুণ ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষত বাংলাদেশি পুরুষদের মধ্যে এই ধরনের ক্যান্সারের হার অনেক বেশি।
এদিকে অক্সফোর্ডের এই গবেষণাটি ইংল্যান্ডে চালু হওয়া ফুসফুস ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের সাথে সম্পর্কিত। এই প্রোগ্রামটি ৫৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সী ধূমপায়ী ব্যক্তিদের ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য আহ্বান করবে, যাতে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পড়তে পারে এবং সময়মতো চিকিৎসা করা সম্ভব হয়।
গবেষণার সহযোগী লেখক অধ্যাপক জুলিয়া হিপপিসলি-কক্স বলেন, ‘আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, আমাদের ক্যান্সার সেবাগুলো সব সম্প্রদায়ের কাছে কার্যকরভাবে পৌঁছাচ্ছে এবং সবার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক নির্ণয়ের সমান সুযোগ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই বৈষম্যগুলো মোকাবিলা করা শুধুমাত্র ফুসফুস ক্যান্সার সম্পর্কিত বিষয় নয়; যখন আমরা স্বাস্থ্যসেবা অ্যাক্সেস এবং সামাজিক দরিদ্রতার মৌলিক অসমতাগুলো সমাধান করতে পারব, তখন অন্যান্য অনেক রোগের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য ফলাফল উন্নত করতে সক্ষম হবো বলে জানান তিনি।