নিউজ ডেস্ক।।
চলতি বছরে বাংলাদেশ ডেঙ্গুতে এখন এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৬৯৩ জনের। যা দেশের ইতিহাসে সবোর্চ্চ মৃত্যু রেকর্ড। যা এর আগে কখনো হয়নি। আর এবার চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ২০ হাজার ২৭২ জনের। তাই ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭ সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সংস্থাটির নিজস্ব ওয়েব সাইটে প্রকাশিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
‘ডেঙ্গু: বৈশ্বিক পরিস্থিতি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের সাতটি দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। ১৩ কারণে দেশগুলোতে ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ছাড়াও ডেঙ্গুর প্রকোপ তীব্র হওয়া দেশগুলো হলো: ব্রাজিল, বুরকিনা ফাসো, ফিজি, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম। কোনো কোনো দেশে ডেঙ্গু জরুরি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়াও প্রতিবেদনে বিশ্বে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির ১৩টি কারণ বলা হয়েছে। কারণগুলো হচ্ছে- ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস মশা ছড়িয়ে পড়ছে ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও মশার বসবাসের উপযোগী কর্মকাণ্ড বাড়ছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ডেঙ্গুর উপযোগী আবহাওয়া, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে থাকা ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থা, একই সাথে ডেঙ্গুর একাধিক ধরনের বিস্তার লাভ করছে, সুনির্দিষ্ট লক্ষণ না থাকায় ডেঙ্গু শনাক্তে সমস্যা, ল্যাবরেটরি ও পরীক্ষাব্যবস্থার অপ্রতুলতা রয়েছে, কোভিড-১৯সহ একই সময়ে দীর্ঘস্থায়ীভাবে চলা প্রাদুর্ভাব, ডেঙ্গুর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকা, ডেঙ্গু সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা ও আচরণ বিষয়ে তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি, কমিউনিটিকেন্দ্রিক স্বাস্থ্য উদ্যোগ ও মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি না থাকা, মশার ওপর নজরদারি ও মশা নিয়ন্ত্রণ দক্ষতার ঘাটতি, স্থায়ীভাবে অর্থায়নের অভাবসহ অংশীজনদের কাজে সমন্বয়হীনতা এবং বিশ্বব্যাপী মানুষ ও পণ্যের অবাধ চলাচল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেকটা ঘুরে ঘুরে আসে এবং প্রতি তিন–চার বছর পরপর বড় প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
বিশ্বসংস্থাটির মতে, বাংলাদেশ ও নেপালে ডেঙ্গুর সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ (পিক বা শীর্ষ) গত বছরের চেয়ে এবার আগেভাগে দেখা গেছে। ২০২২ সালে কাঠমান্ডু উপত্যকায় সংক্রমণ বেশি ছিল। এ বছর নেপালে সংক্রমণ বেশি হয়েছে দক্ষিণ–পূর্ব তরাই অঞ্চল ও গান্দাকি প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে। অন্যদিকে ভারতে এবার সংক্রমণ বেশি হয়েছে কেরালা রাজ্যে ও বাংলাদেশ সীমান্তের উত্তর-পূর্ব প্রদেশগুলোতে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সদস্যদেশগুলোকে সহায়তা করতে ৯টি উদ্যোগ নিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এগুলো হলো: কাজের সমন্বয়, প্রস্তুতি ও কর্মোদ্যোগ, বহু খাতভিত্তিক সহযোগিতা, মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, ল্যাবরেটরি স্থাপন, সরঞ্জাম সরবরাহ, রোগী ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, রোগতাত্ত্বিক নজরদারি এবং ঝুঁকি যোগাযোগ ও জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো।