নিজস্ব প্রতিবেদক।।
হঠাৎ ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল। দেশের চলমান এ বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্গতদের সহায়তায় কাজ করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস)। সংকটাপন্ন বন্যাকবলিত এসব এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রমের পাশাপাশি সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রদানে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সোসাইটির যুব স্বেচ্ছাসেবকরা। এরই মধ্যে পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ, জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও পারিবারিক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনে সহায়তাসহ প্রয়োজনীয় সতর্কবার্তা প্রচার করছেন তারা। শুক্রবার৷ (২৩ আগস্ট) রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় বৃহস্পতিবার থেকে বিডিআরসিএসের পক্ষ থেকে ফেনীতে ২টি ভ্রাম্যমাণ পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবার থেকে নোয়াখালী ও কুমিল্লাতে আরও ৩টি ভ্রাম্যমাণ পানি শোধনাগার স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে বন্যা উপদ্রুত জেলাগুলোর জন্য ২ হাজার পরিবারের জন্য ৭ দিনের ফুড প্যাকেজ (৭.৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি, ১টি লবণ কেজি, ১ লিটার সয়াবিন তেল ও ৫০০ গ্রাম সুজি) বরাদ্দ দিয়েছে সোসাইটি, যা সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়াসাপেক্ষে প্রেরণ করা হবে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করে ৩ হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার (৩ কেজি চিড়া, ১ কেজি চিনি, ২৫০ গ্রাম বিস্কুট, ২ লিটার পানি, ১০ পিস খাবার স্যালাইন, ৬টি মোমবাতি ও ১টি দিয়াশলাই) বিতরণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সোসাইটির এ ছাড়া কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম ইউনিটের নিজস্ব উদ্যোগে এবং জাতীয় সদর দফতরের সহায়তায় রান্না করা ও জরুরি শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরী জানিয়েছেন, আকস্মিক বন্যায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের প্রয়োজনীয় সহায়তা ও ত্রাণ পৌঁছে দিতে আমরা আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে আছি। এরই মধ্যে বন্যাদুর্গত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অগ্রণী ভূমিকায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন এবং বিকাশ। ভয়াবহ এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমাজের সব স্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করছি।
সোসাইটির উদ্যোগে ইতিমধ্যে ইউএসএইডের অর্থায়নে আইএফআরসির মাধ্যমে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে, যা দিয়ে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ পরিবারের মাঝে ৭ দিনের ফুড পার্সেল এবং ৩ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৬ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ছাড়া আমেরিকান রেড ক্রস ও সুইডিশ রেড ক্রস থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেছে, যা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় ১০ হাজার পরিবারের মাঝে ৭ দিনের ফুড প্যাকেজ প্রদানে সম্মত হয়েছে গ্রামীণফোন লিমিটেড। এ ছাড়া মাঠ পর্যায়ের পরিস্থিতি অনুযায়ী পানযোগ্য নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে পাঁচটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিমের জন্য প্রয়োজনীয় সব খরচ বহন করবে এই টেলিকম প্রতিষ্ঠানটি। বর্ণিত কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিডিআরসিএস প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।
চলমান বন্যায় সোসাইটির অধিকসংখ্যক বন্যার্ত পরিবারের মাঝে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে সোসাইটির পক্ষ থেকে তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই চলমান সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, দানশীল ব্যক্তিবর্গ ও প্রবাসীদের কাছে সহায়তার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। বিকাশ অথবা সোসাইটির ওয়েবসাইটের ভিজিট করে ডোনেট করা যাবে। রেড ক্রিসেন্টের বিকাশ নম্বর-০১৮১১৪৫৮৫২১ এবং ওয়েবসাইট : https://bdrcs.org/donate-online/