নোয়াখালী প্রতিনিধি।।
ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি-নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগে নোয়াখালীতে হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যা ৭ টায় জেলার মাইজদী আধুনিক হাসপাতালে রোগীর স্বজনরা এ ঘটনা ঘটায়।
মৃত প্রসূতি শারমিন আক্তার (২১) নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের জহির উদ্দিনের স্ত্রী ও নোয়াখালী পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. হারুনের মেয়ে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রসূতি শারমিন আক্তারকে ডা. আশেকা কবিরের তত্ত্বাবধানে সিজার করানো হয়। সিজারের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। নবজাতকের অবস্থা ভালো না বলে আইসিইউ হাসপাতালে রেফারের পাশাপাশি প্রসূতির রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না বলেও আইসিইউ হাসপাতালে রেফার করেন।
শনিবার চট্রগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালে নবজাতক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি মারা যায়। এরপর স্বজনরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভাংচুর করে। এতে হাসপাতালের হুইল চেয়ার, গ্লাস, রোগীর বেডসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে সুধারাম মডেল থানার পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থানে হাজির হয়। পরে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের প্রতিনিধি দলও হাসপাতাল পরিদর্শন করে।
রোগীর চাচা স্বপন আহমেদ বলেন, গতকাল শুক্রবার ১১ টায় আমার ভাতিজির সিজার হয়। তারপর বলে নবজাতকের অবস্থা ভালো না। আইসিইউতে রাখতে হবে। চট্রগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালে আমরা নিয়ে যাই। রাত আটটায় তারা বলে নবজাতকের মায়ের অবস্থা ভালো না আইসিউতে রাখতে হবে। তারা বলেছে, অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। আপনারা ঢাকায় নিয়ে যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করালে ৩ ঘণ্টার মাথায় প্রসূতি মারা যায়। সকালে নবজাতক মারা যায়।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন রয়েল ঢ বলেন, রোগীটা আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক তানজিনা সুলতানার আন্ডারে ছিল। তার বাচ্চার হার্টবিট কম ছিল। তারা বহির্বিভাগে অক্সিজেন দিয়ে বাসায় নিয়ে যায়। শুক্রবার সকালে রোগীকে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তারপর দুপুরে আশেকা কবির তার সিজার করান। তবে নবজাতকের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আমরা আইসিইউ-এর জন্য ঢাকায় রেফার করি। তারা চট্রগ্রামে নিয়ে যায়। আজ চট্রগ্রামে নবজাতক ও ঢাকায় প্রসূতি মারা যায়। সন্ধ্যায় নিহতের স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভাংচুর করে। এতে হাসপাতালের হুইল চেয়ার, গ্লাস, রোগীর বেডসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল বারী বলেন, প্রসূতি নারী ও নবজাতক কেউই আমাদের হাসপাতালে মারা যায়নি। আমাদের হাসপাতাল থেকে যাওয়ার সময় প্রসূতি আমার সাথে কথা বলে গেছে। তারপরও স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালে হামলা ও ভাংচুর করে। এতে হাসপাতালের প্রায় পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল ও জিনিসপত্রের ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাইমা নুসরাত জাবীন বলেন, মৌখিক অভিযোগ পেয়ে আমরা হাসপাতালে যাই এবং কর্তপক্ষের সাথে কথা বলি। এসময় ডা. আশেকা কবিরসহ অপারেশনের সাথে সংশ্লিষ্ট কাউকে আমরা পাইনি।
তিনি আরও বলেন, আগামীকাল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সিভিল সার্জন অফিসে আসতে বলা হয়েছে। যদিও আমরা এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।