নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ভারতসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব ভেরিয়েন্ট, বিশেষ করে অমিক্রন এলএফ. ৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১ এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।পাশাপাশি বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া না দেশের বাইরে না যাওয়া ও বিষয়ে সতর্ক করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়াও করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং ও নজরদারি বাড়াতেও বলা হয়েছে। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আবারো মাস্ক পড়া ও নির্দেশনা ও স্থলবন্দরে সর্তকতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংক্রমণ মোকাবেলায় টেস্টিং কিট সংগ্রহ, হাসপাতালের আইসিইউ রেডি রাখাসহ সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, “আমরা কোভিড মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছি। আজ রেড ক্রিসেন্ট থেকে কিছু টেস্টিং কিট সংগ্রহ করেছি এবং আগামীকাল আরও কিট সংগ্রহ করা হবে।”
তিনি বলেন, এখনো কোনো অঞ্চলে অ্যালার্মিং পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, তবে পাশ্ববর্তী দেশে রোগী বাড়ায় দেশের জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে।
“নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্য আলাদা ভ্যাকসিন নেই। আমরা পুরোনো ভ্যাকসিনই পুনরায় দেয়ার পরিকল্পনায় রয়েছি। এ বিষয়ে আজ রাতেই আমাদের কমিটির বৈঠক রয়েছে,”— বলেন তিনি। ঢাকায় ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি, টেস্টিং ল্যাবগুলো পুনরায় কাজ শুরু করছে এবং আগামীকাল থেকে কাউকে টেস্টে ডিক্লাইন করা হবে না।
আইইডিসিআর পরিচালিত সর্বশেষ কোভিড-১৯ সার্ভিলেন্স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাসে দেশে করোনা সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। মে মাসে ১,৪০৯ জন সম্ভাব্য কোভিড-১৯ রোগীর নমুনা পরীক্ষায় ১৩৪ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন, যা ৯.৫১ শতাংশ এবং জানুয়ারি ২০২৩ থেকে মে ২০২৫ সময়কালের মধ্যে সর্বোচ্চ হার।
আইইডিসিআর-এর ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েনজা সার্ভিলেন্স ও পিএইচওসি-এর মাধ্যমে পরিচালিত এই পরীক্ষাগুলো থেকে জানা যায়, এর আগে ২০২৩ সালের মে-আগস্ট এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি-আগস্ট সময়কালে সংক্রমণের হার ১.৫ শতাংশের বেশি ছিল। সর্বশেষ পাওয়া নমুনাগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে Omicron BA 2.86 ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, যা পূর্বেও দেশে শনাক্ত হয়েছিল।
সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদ জানিয়েছেন, কিছু অঞ্চলে করোনা কিটের সংকট রয়েছে। এজন্য বিশেষ ব্যবস্থায় কিট সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগারকেও জানানো হয়েছে। প্রতিবেশী দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে দেশের বন্দরগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। “হাসপাতালে আলাদা শয্যা প্রস্তুতের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়ালেও গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যু হার এখনো তেমন বাড়েনি। তবে যাদের কো-মরবিডিটি আছে, তারা ঝুঁকিতে আছেন।” তিনি সতর্কতা হিসেবে নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং টিকাদানের উপর জোর দেন। “হাসপাতাল থেকেই শুরু করতে হবে সচেতনতা। সেখানে যেন সব কর্মী মাস্ক পরে এবং রোগীরা সাবান দিয়ে হাত ধোয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে জুনের ১০ তারিখ পর্যন্ত ২,৩৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ২১৫ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে জুন মাসে এখন পর্যন্ত ৪৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। গত মে মাসে ৫০ জন, এপ্রিল ২৩ জন, মার্চে ২৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৭ জন এবং জানুয়ারিতে ৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়। চলতি বছরে এ পর্যন্ত একজন কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। এখন পর্যন্ত দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের। সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৪ জন।
অধিদপ্তরের দেওয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে: সাতবার প্রয়োজন মতো সাবান দিয়ে হাত ধোবেন (অন্তত ২৩ সেকেন্ড)। নাক-মুখ ঢাকায় জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন। আক্রান্ত ব্যক্তি হতে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না। হাঁচি-কাশির সময় বাহ/ টিস্যু/ কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখুন।
দেশে প্রবেশের পথের জন্য নির্দেশনা
দেশের বিভিন্ন স্থল/নৌ/ বিমান বন্দর সমূহে আইএইচআর (IHR-2005) স্বাস্থ্য ডেস্ক সমূহে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেল্যান্স জোরদার করুন। দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রি সমূহে থার্মাল স্কান্যার/ ডিজিটাল হেন্ড হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করুন। চিকিত্সা কাজে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ মাস্ক, গ্লাভস এবং রোগ প্রতিরোধী পোশাক মজুত রাখুন (পিপিই) ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রোগ প্রতিরোধ নির্দেশনা সমূহ প্রচার করুন।জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশসমূহে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্র (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম বলেন, এখন শুধু আমাদের দেশে নয় পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে করোনা রোগী বাড়ছে। আমাদের দেশে সমস্যা হলো অসুস্থ হলেও মানুষ পরীক্ষা করতে আসে না। যারা আসছে পরীক্ষা করতে, তাদের মধ্যে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে।
ডা. আহমেদ নওশের আলম বলেন, যেহেতু চারদিকে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। বিশেষ করে, বয়স্ক মানুষ, গর্ভবর্তী নারী ও দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভোগা মানুষ। যাদের শরীরে রোধপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের করোনা সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ।