নিজস্ব প্রতিবেদক।।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরে পতিত আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের প্রেতাত্মাদের এখনও রাজত্ব করে চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। একইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া চিকিৎসকদের মধ্য থেকে সহকারী স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে কমপক্ষে দুই জনকে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন
সংগঠনের নেতারা।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বৈষম্য ও নিপীড়নমুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার লক্ষ্যে’ এনডিএফ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে দাবিগুলো তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহতদের চিকিৎসা সেবা নিয়ে কিছু বেসরকারি হাসপাতাল যেখানে বিল বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছিল, তখন এনডিএফের চিকিৎসকরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। এমনকি তাদের মালিকানাধীন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিনামূল্যে ওষুধ-অ্যাম্বুলেন্সসহ হতাহতদের নানা ধরনের সেবা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের চিকিৎসকরা টানা তিন সপ্তাহ খেয়ে না খেয়ে আন্দোলনে আহত রোগীদের সেবা দিয়েছে। এছাড়াও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আহতদের জন্য রক্ত সংগ্রহ, ওষুধের ব্যবস্থা, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ব্যবস্থাও আমরা করেছি। আমাদের বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুরের শিকার হয়েছে। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেও আমরা ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পেইন করেছি, এমনকি সবমিলিয়ে ছয় শতাধিক ব্যাগ ব্ল্যাড ম্যানেজ করে রোগীদের সরবরাহ করেছি। নিজেদের পকেট থেকে টাকা দিয়েও রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করেছি।
ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সংকটময় সেই পরিস্থিতিতে কাজ করতে গিয়ে এনডিএফের চিকিৎসকরা আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসরদের হামলাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে। তারপরও চিকিৎসকরা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সারা বাংলাদেশে পুলিশ ও আওয়ামী গুন্ডাবাহিনী দ্বারা হাজার হাজার আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসা, জরুরি অপারেশন ও পরবর্তীতে পুনর্বাসনে আর্থিক ফান্ড গঠনসহ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে, যা এখনও চলমান রয়েছে।
এনডিএফের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন বলেন, অন্য মন্ত্রণালয়ের তুলনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এখানো কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়। স্বৈরাচারের দোসর দুই সচিব, সচিবালয়ের অন্যান্য কিছু কর্মকর্তা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা তাদের পদে বহাল থেকে এখনও ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দুর্বৃত্ত মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মে স্থবিরতা ও বিশৃঙ্খলা এনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার এক অন্তর্ঘাতী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। ছাত্র-জনতার আশা, আকাঙ্খা ও আন্দোলনের ফসল এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ষড়যন্ত্র রুখে না দেওয়া হলে তারা যেকোনো সময় স্বাস্থ্য খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলবে।
তিনি স্বাস্থ্যে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। অন্তর্র্বতী সরকার গঠনের পর স্বাস্থ্য খাতের পাঁচটি সংস্কার নিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। এসব সংস্কার মেনে নিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। কেননা, আওয়ামীপন্থিদের বদলি করে আওয়ামীপন্থিদেরই পদায়ন করা হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আন্দোলনও করছেন চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনগুলো।