নিজস্ব প্রতিবেদক।।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দিনদিন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়ছে, তবে স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিতে এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেশ অনেকটাই পিছিয়ে আছে। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য সেবার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট দূরীকরণে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে। এই অবস্থায় আমাদের চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেলিটি, এবং সর্বোপরি কোয়ালিটি আনতে হবে।
তিনি বলেন, এখনকার সময়ে আমাদের স্বাস্থ্য সেবার কোয়ালিটি কেমন, আপনারা সবাই জানেন। এটা নিয়ে এই মুহূর্তে আমি কিছু বলবো না। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে কোয়ালিটি ছাড়া শুধু কোয়ানটিটি দিয়ে আমরা আমাদের চিকিৎসা শাস্ত্রকে এগিয়ে নিতে পারবো না। চিকিৎসা পেশাটাকে বলা হয় নোবেল প্রফেশন। কিন্তু কেন? কারণ হলো, হিপোক্রেটিস নামক একজন চিকিৎসক ছিলেন, তার বাবা ছিলেন ধর্মযাজক। তখন চিকিৎসা হতো ধর্মীয় উপাসনালয়ে, যারা যাজক তারাই চিকিৎসা করতেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বিগত ১৪ বছরে স্বাস্থ্য খাতে আমাদের সফলতা অনেক বিস্তৃত। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে, তাও অনেক স্বল্পমূল্যে। যেসব রোগের জন্য আগে রোগীরা বিদেশে ছুটে যেতেন, বর্তমানে সেসব রোগের চিকিৎসা দেশেই দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে রোগীদের অর্থ ও সময় ব্যয় করে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে হচ্ছে না।
স্পিকার বলেন, আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছে, চিকিৎসকদের দক্ষতাই এর বড় উদাহরণ। অসংখ্য ব্যয়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেশে স্বল্পমূল্যে করা হচ্ছে। বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা, শত শত জটিল অপারেশন দেশেই করা হচ্ছে। এমনকি, কিডনি, লিভার, বোনমেরো ট্রান্সপ্লান্ট, হৃদরোগের বাইপাস ও নিউরোসার্জারিসহ অনেক চিকিৎসা এখন নিয়মিত দেশেই হচ্ছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে ৬ শতাধিক হাসপাতাল নির্মাণ, হৃদরোগ, ক্যান্সার, নিউরো সায়েন্সসহ বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। যেখানে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির সভাপতি, কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন হোসেন বলেন, আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি আমরা ডাক্তারদের কাছে ঋণী হয়ে থাকি। ডাক্তাররা আমাদেরকে ভাল রাখে। কখনো নতুন জীবন দেয়। সনাতনরা বলতেন বৈদ্যি রূপী নারায়ন। পশ্চিমে বলে সেকেন্ড গড। কথাটা কিন্তু সত্য। আমার জীবনে এরকম কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। ছোটবেলায় আমি একবার ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। সবাই ধরে নিয়েছিল আমি হয়ত বাঁচবো না। কিন্তু আমি বেঁচে আছি। একজন দেবতুল্য ডাক্তার ছিলেন আমার সেই বেঁচে থাকার নেপথ্যে।
তিনি বলেন, আমার বয়স হয়েছে। এখনো আমাকে ডাক্তারদের সেবা, পরামর্শ নিতে হয়। আমার দিন কাটে ডাক্তার, নার্স আর নানারকম ওষুধ পথ্যের সান্নিধ্যে। ডাক্তাররা ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট। মানুষের জীবন মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়াবার সৌভাগ্য সবার হয় না। প্রকৃতি যাকে যোগ্য মনে করে সেই পায় এই সৌভাগ্য। তিনি আরো বলেন, ডাক্তাররা শুধু চিকিৎসাই দেন তা নয়। আমাদের সকল জাতীয় আন্দোলনে তাঁরা ছিলেন অগ্রভাগে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়লেও স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেশ অনেকটাই পিছিয়ে। তাদের মতে, দিনদিন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বাড়ছে, তবে স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিতে এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেশ অনেকটাই পিছিয়ে আছে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য সেবার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট দূরীকরণে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সচিব এবং বিএসএমএমইউ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য জাকিয়া সুলতানা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, বর্তমান উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ শিকদার প্রমুখ।