ঢাকা মেডিকেলে ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্য পুলিশ গঠনের দাবি

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে ১০০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন,অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের নির্দেশে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে ১০০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরের দিকে ঢামেক হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছে তিনি। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আশরাফুল আলম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারির প্রধান অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম, নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নুরুল ফাত্তাহ রুমী, সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ইমতিয়াজ ফারুক, হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে এ পর্যন্ত যারা আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন,অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের নির্দেশে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে ১০০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড স্থাপন এবং বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ।
২. পুরোনো কেবিনগুলো সংস্কার করা।
৩. হাসপাতালের আইসিইউয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
৪. হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
৫. হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা।
৬. হাসপাতালে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এবং বহিরাগত দালালদের প্রবেশ করতে না দেওয়া।
৭. হাসপাতাল চত্বরে বেসরকারি অ‍্যাম্বুলেন্স সরিয়ে সেই জায়গায় রোগী এবং রোগীর স্বজনদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা।
৮. হাসপাতালে রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট এবং এক্সরে, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি হাসপাতালেই বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা।
৯. রোগীদের টিকিটিং ব্যবস্থার ডিজিটাল কার্যক্রম জোরদার করা।
১০. হাসপাতালে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া।
১১. হাসপাতালে বিভিন্ন দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যক্রম ব্যবস্থা জোরদার করা।
১২. রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসক নার্স এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সম্পর্ক উন্নয়নে বিভিন্ন পরিবর্তন নিশ্চিতকরণে উদ্যোগ নেওয়া।
১৩. হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম জোরদারে উদ্যোগ নেওয়া।
১৪. হাসপাতালে অভ্যর্থনা/তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা।

ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রোগীদের সঙ্গে আচরণগত পরিবর্তন নিশ্চিত করতে ক্রমাগত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও বেশি রোগীদের সেবার পরিকল্পনা মাথায় রেখে মেগা পরিকল্পনার ভিত্তিতে ২৭টি ভবন নতুন করে নির্মিত হবে। এর মধ্যে ছয়টি হাসপাতাল হবে ১৭তলা বিশিষ্ট এবং বাকিগুলো হবে ২০তলা বিশিষ্ট।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন এটি ২৬০০ বেডের হাসপাতাল হলেও এখানে চার হাজার রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। হাসপাতালে কোনোভাবেই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের বারবার বলার পরেও তারা সরে না যাওয়ায় সেনাবাহিনী দিয়ে সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারা এখন হাসপাতালের বাইরে অবস্থান করছে, সেখানে আমরা মালিকদের সাথে কথা বলেছি। নামমাত্র মূল্যে তাদের একটি জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে তারা একই সাথে ২০০ গাড়ি রাখতে পারবে। হাসপাতালে যারা স্পেশাল ডিউটি করত, তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে বৈধভাবে যারা আছেন, তারাই শুধু ডিউটি করবেন।

ডাক্তারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের এখানে যেসব প্যাথলজিক্যাল টেস্ট হয়, সেগুলো এখানেই করতে হবে। যেগুলো এখানে হয় না সেগুলো অন্য জায়গায় যেতে পারে। কিন্তু যেগুলো এখানে হয়, সেগুলোর সাথে চিকিৎসকরা অন্যগুলোও বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, এটি কোনোভাবে বরদাস্ত করা হবে না।
ব্লাড ব্যাংকে রক্ত নেওয়ার বিষয়ে পরিচালক বলেন, এখানে অনেক গ্রুপের রক্তই থাকে না। আমরা বলে দিয়েছি রোগীদের সাথে যে গ্রুপের রক্তই থাকুক, সেই গ্রুপের রক্ত ব্লাড ব্যাংকে জমা দিয়ে আপনার চাহিদা অনুযায়ী রক্ত নিয়ে যাবেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ক্যাজুয়ালটি, নিউরো সার্জারি, অর্থপেডিক্সসহ সব বিভাগ থেকে আহতদের আলাদা চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিএমএইচ হাসপাতালে ২৬ জন ও বিজিবি হাসপাতালে ১৯ জনকে স্থানান্তর করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৭২ জন মারা গেছেন।
এদিকে, চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্য পুলিশ গঠনের দাবি উঠেছে। অন্তর্র্বতী সরকারের সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান্নোনয়নে ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণাকালে এ দাবি তোলেন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার ঢামেক হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের উপস্থিতিতে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ব্লকের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সুবিনয় কৃষ্ণ পাল চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবি তুলে ধরেন।
ডা. সুবিনয় কৃষ্ণ পাল জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ১৫ জুলাই থেকে ক্যাজুয়ালিটি ব্লকের চিকিৎসকরা রোগীদের সর্বাত্মক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যেটা এখন পর্যন্ত চলমান। এত কষ্ট করার পরও গত পরশু রাতে চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে বিভিন্ন লোকের হাতে হেনস্তার শিকার হন এবং তাদের হুমকিও দেওয়া হয়। এজন্যই চিকিৎসকরা তাদের নিরাপত্তার জন্য কর্মবিরতির চিন্তাভাবনা করেছিলেন, কিন্তু দেশের স্বার্থে রোগীদের কথা চিন্তা করে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

তিনি বলেন, আমাদের আহ্বান হচ্ছে, চিকিৎসকদের নিরাপত্তার জন্য স্বাস্থ্য পুলিশের ব্যবস্থা মানে আর্মড পুলিশের চিন্তাভাবনা করা উচিত। কারণ দেশের অনেক জায়গায় নিরাপত্তার জন্য পুলিশ থাকে।

সুবিনয় কৃষ্ণ পাল বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আহত রোগীদের শুধু ক্যাজুয়ালিটি ব্লকে নয়, সামগ্রিকভাবে আই বিভাগ, অর্থোপেডিক বিভাগসহ সব বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com