নিজস্ব প্রতিবেদক।।
এইচএসসি শিক্ষার্থী অভিজিত হাওলাদারের ‘ভুল চিকিৎসায়’ মৃত্যুর পর ১০ হাজার টাকা দিয়ে ধামাচাপা চেষ্টার অভিযোগে পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটক আটকে ভাঙচুর করেছে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুর পৌনে ১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বিক্ষুদ্ধরা সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজেও হামলা-ভাঙচুর চালায়। এসময় দুই কলেজের শতাধিক পরীক্ষার্থী ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন।এ সময় অন্য শিক্ষার্থীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
জানা গেছে, মাহবুবুর রহমান কলেজ, ধনিয়া কলেজসহ আশপাশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দুই থেকে আড়াই হাজার শিক্ষার্থী হাসপাতালের সামনে জড়ো হন। এসময় তারা স্লোগান দিয়ে হাসপাতালের নামফলকসহ গেট ভাঙচুর করেন। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থানে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার (২৪ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে ঢাকার ৩৫টিরও বেশি কলেজের শিক্ষার্থী ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে জড়ো হন। তারা হাসপাতালের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন এবং প্রতিষ্ঠানের নামফলক ভেঙে ফেলেন।
এর আগে মুরগীটোলা মোড় এবং রায়সাহেব বাজারে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন শিক্ষার্থীরা।
পরে ন্যাশনাল হাসপাতাল ভাঙ্চুরের পর ডিএমআরসি এবং বাকি ৩৪টি কলেজের শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালান। সেসময় দুই কলেজেই স্নাতক প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান ছিল। এসময় দুই কলেজের শতাধিক পরীক্ষার্থী ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন।
ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকসহ হাসপাতালটির কর্মচারীরা বলেন, বেলা ২টার পর একদল শিক্ষার্থী কলেজের ভেতর ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে কলেজের একটি অ্যাম্বুলেন্সও।
কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক নাসির উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে এ কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা আজ বেলা একটার দিকে ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেন। এতে পুরান ঢাকার ব্যস্ত জনসন রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সাইফুল ইসলাম নামে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, তাঁদের কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়। ‘ভুল চিকিৎসায়’ অভিজিৎ মারা যায়। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার তাঁরা মেডিকেল কলেজটির সামনে বিক্ষোভ করেন।
সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, ওই দিন পুরান ঢাকার কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এর প্রতিবাদে আজ তাঁরা ন্যাশনাল মেডিকেলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় আবার পুরান ঢাকার সরকারি শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজসহ আশপাশের কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের মারামারিতে আহত কয়েকজনকে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢোকার প্রবেশপথে বিকেলেও অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাইছিলেন
এ বিষয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক রশিদুল হাসান বলেন, অভিজিতের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁদের হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। এতে হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। রোগীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজেও ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বেলা ২টার পর এ কলেজের ভেতরে ঢুকে শ্রেণিকক্ষসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
মো. রিশান নামে শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের কোনো শিক্ষার্থীকে তাঁরা মারধর করেননি। অথচ ওই কলেজসহ অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁদের কলেজে এসে ভাঙচুর চালিয়েছেন।সোহরাওয়ার্দী কলেজের মূল ফটকসহ ক্যাম্পাসে থাকা কলেজের মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কারসহ দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের ডিজিটাল নোটিশ বোর্ডটিও ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। কলেজের নিচতলা থেকে পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠে বাংলা, ইংরেজি বিভাগ ও অফিসরুমে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট করে তারা।
শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন, আকস্মিক কয়েক শ শিক্ষার্থী এসে কলেজের ১৭টি বিভাগে হামলা চালিয়েছে। তারা বিভাগগুলোর অফিসকক্ষ থেকে কম্পিউটার লুটপাট ও ভাঙচুর করেছে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছিল। হামলাকারী শিক্ষার্থীরা ওই সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে।
এই কলেজে একটি মাইক্রোবাস, একটি প্রাইভেট কার ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ।