১৩
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের নীলুফা বেগম। বয়স এখনো পেরোয়নি ৪০ এর গণ্ডি। অথচ ডায়াবেটিসে ভুগছেন ১৫ বছর ধরে। তিন মাস আগে ঘুম থেকে উঠার পর হঠাৎই চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করে সঙ্গে মাথাব্যথা। দুই চোখে একই সমস্যা হলেও বর্তমানে ডান চোখে দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন না আগের মতো। ৭০ বছর বয়সী শামসুন নাহারও বেশি কিছুদিন ধরে ভুগছেন একই সমস্যায়। তবে তার ডায়াবেটিসের পাশাপাশি রয়েছে আর্থ্রাইটিস ও উচ্চরক্ত চাপ। বর্তমানে দুই চোখেই ঝাপসা দেখেন। রয়েছে মাথাব্যথাও। চিকিসার খরচ চালাতেও হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। শুধু এই দুই রোগী নয় সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, নীরব ঘাতক ডায়াবেটিসে অন্ধত্বের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। আর দেশের ৩৪ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। একবার রেটিনোপ্যাথি দেখা দিলে তা আর আগের অবস্থায় ফেরে না। এ রোগে চিকিৎসা অনেক ব্যায়বহুল এবং এর শেষ পরিনতি অন্ধত্ব।
দেশের আট বিভাগের কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিয়ে আসা ১০ হাজার রোগীর ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গত বছরে জুলাইয়ে এ গবেষণা কাজ শেষ করে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি। ফলাফলে দেখা গেছে, ৩৪ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ যৌন অক্ষমতায় ভুগছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীরে নানা জটিলতার মধ্যে অন্যতম হলো চোখের রেটিনায় সমস্যা, যাকে বলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। রেটিনা হলো চোখের পেছনে অবস্থিত আলোক সংবেদনশীল টিস্যু, যা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই রোগে সাধারণত দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সঠিক চিকিৎসা না করা হলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। আর এ তিনটি কাজ করতে হলে প্রয়োজন দৈনন্দিন জীবনযাপনে শৃঙ্খলা।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আই.ডি.এফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ি,বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৪ কোটি মানুষ। আর বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের প্রায় অর্ধেকই মহিলা। ডায়াবেটিস আছে, এমন অর্ধেকেরও বেশি লোক জানেই না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন মহিলাই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। ডায়াবেটিস বহুলাংশেই ৭০ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য। ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরোধ না করা হয়, তাহলে এই সংখ্যা ২০৪৫ সাল নাগাদ প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশংকা রয়েছে। এ এমন প্রেক্ষাপটে ডায়াবেটিস রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সারাবিশ্বের মত আজ বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০২৪।’ এবারের প্রতিপাদ্য- সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার’। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশেষ বাণী দিয়েছেন।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ডায়াবেটিসকে নীরব ঘাতক বলা হয়। কারণ এই রোগ সারা জীবনের রোগ। একবার হলে তা কখনো সারে না। কিন্তু আক্রান্তদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানেই না যে তাদের রোগটি আছে। ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাদ্যাভাস, শারীরিক পরিশ্রম ও নিয়মিত শরীরচর্চা না করা এবং ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের মতো মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি তৈরি হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য খাওয়া, নিয়মিত রক্তপরীক্ষা জরুরি। আক্রান্তরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ ও শৃঙ্খল জীবনযাপনে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।
তারা বলেন, ডায়াবেটিস মানবদেহে কোনো কারণে ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাব বা ঘাটতি হলে কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে শরীরে ব্যবহৃত না হলে বা শরীরের ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় থাকলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এই গ্লুকোজ পরে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থাকেই ডায়াবেটিস বলা হয়।
ডায়াবেটিক সমিতির তথ্যমতে , দেশের ৬৩ লাখ ডায়াবেটিকস রোগীকে সেবার আওতায় এনেছে। এখানো ৬৮ কোটি রোগী সেবার বাইরে রয়েছে। দেশের আট মেডিক্যাল কলেজে এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট বিভাগ থাকলেও বাকি মেডিক্যাল গুলোতে এ বিষয়ে কোন বিভাগ নেই। সারােেশর সরকারি হাসপাতাল গুলোতে রোগীদের জন্য ৮০ হাজার শয্যা থাকলেও হরমোন জনিত সমস্যায় ভোগা রোগীদের জন্য রয়েছে ১২২ শয্যা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে মাত্র ৩২২ জন।
এ ব্যাপারে বাংলাশে এন্ডোক্রাইন সোসাইটি সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বব্যিালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম সময়ের বলেন, বিভিন্ন বয়সি ডায়াবেটিস আক্রান্ত পুরুষ ও নারীদের মধ্যে গবেষণা করে দেখেছি, ৩৪ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি। এ রোগটি হলে আর আগের অবস্থায় ফেরে না। চিকিৎসাও অনেক ব্যায়বহুল এবং এর শেষ পরিনতি অন্ধত্ব।
ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, প্রতি শ জনে আট জন ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক। কিডনির সমস্যা ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন এমন রোগীদের বেশিরভাগেই ডায়াবেটিস জনিত। চোখে ছানি পড়া অর্ধেকেরই কারণ ডায়াবেটিস। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি একটা বড় জনগোষ্ঠির অন্ধত্বের কারণ হয়ে দেখা েিয়ছে। এছাড়া নিসন্তান মায়েরে প্রতি দুই জনে একজনের ডায়াবেটিস রয়েছে, মানসিক অবসা থেকে শুর“ করে মানসিক চাপ এদের একটা বড় অংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আমাদের এক গবেষণা দেখা গেছে, যাদের দুই বছরে বেশি ডায়াবেটিস আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ যৌন অক্ষমতায় ভুগছে।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে ডায়াবেটিস হলো অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বাংলােেশ চোখের রেটিনোপ্যাথি স্কিনিং ব্যবস্থা উপজেলা পর্যায়ে নেই। রোগটি কারো কারো অন্ধন্তের কারণ খোঁজতে গিয়ে শনাক্ত হয়। কিন্তু তখন তিনি অন্ধ। এ চিকিৎসা শুরু থেকে ব্যায়বহুল। এক সময়ে রেটিনোপ্যাথি ইনজেকশনের মূল ছিল ১৮ হাজার টাকা এখন কমে ৬ হাজার হয়েছে। একজন রোগীকে বেশ কয়েকটি ইনজেকশন দিতে হয়। দিলে সেটি অন্ধত্বের সময় পিছিয়ে হয়। আরেকটা হলো লেজার করতে হবে। চিকিৎসা নিলে আগে পাঁচ বছরে অন্ধ হতো এখন হয়তো দশ বছর পরে হবে।
বর্তমান বিশ্বে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার ১ থেকে ২৮ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের মধ্যে এ হার ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আক্রান্তের হার ৬ থেকে ১৪ শতাংশ। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশের পরবর্তী গর্ভধারণের সময়ে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দেয়। যে সব নারীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা যায় তাদের পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি (প্রায় ৫০ শতাংশ, ১০ বছরে)। যে সব মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ছিল তাদের শিশুদেরও পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি অনেক বেশি।
এ ব্যাপারে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাশিদা বেগম বলেন, গর্ভধারণের পর যদি রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেলে সে অবস্থাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলে। এ সময়ে ডায়াবেটিস খুব ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা মা এবং গর্ভস্থ শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক আজাদ খান সময়ের আলোকে বলেন, সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস মহামারী আকার ধারণ করেছে। রোগটি ব্যক্তি এবং তাদের পরিবার, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে কিছু কিছু উন্নত দেশ সেটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। শুধুমাত্র সচেতনতাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের এক মাত্র উপায়। কিভাবে শুরুতে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেটা সবাইকে শিখিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ডায়াবেটিসের টাইপ-২ ধরনের ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই আগে থেকে সতর্ক থাকলে, শারীরিক পরিশ্রম করলে এবং খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ আনলে সুস্থ্য জীবন যাপন করা সম্ভব।
দেশের আট বিভাগের কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিয়ে আসা ১০ হাজার রোগীর ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গত বছরে জুলাইয়ে এ গবেষণা কাজ শেষ করে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি। ফলাফলে দেখা গেছে, ৩৪ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ যৌন অক্ষমতায় ভুগছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস রোগীরে নানা জটিলতার মধ্যে অন্যতম হলো চোখের রেটিনায় সমস্যা, যাকে বলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। রেটিনা হলো চোখের পেছনে অবস্থিত আলোক সংবেদনশীল টিস্যু, যা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই রোগে সাধারণত দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সঠিক চিকিৎসা না করা হলে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। আর এ তিনটি কাজ করতে হলে প্রয়োজন দৈনন্দিন জীবনযাপনে শৃঙ্খলা।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের (আই.ডি.এফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ি,বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৪ কোটি মানুষ। আর বাংলাদেশে ১ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যাদের প্রায় অর্ধেকই মহিলা। ডায়াবেটিস আছে, এমন অর্ধেকেরও বেশি লোক জানেই না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০০ জনের মধ্যে ২৬ জন মহিলাই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়, যাদের ৬৫ শতাংশই পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। ডায়াবেটিস বহুলাংশেই ৭০ শতাংশ প্রতিরোধযোগ্য। ফলে এখনই যদি এ রোগের প্রতিরোধ না করা হয়, তাহলে এই সংখ্যা ২০৪৫ সাল নাগাদ প্রায় ৭৮ কোটিতে পৌঁছানোর আশংকা রয়েছে। এ এমন প্রেক্ষাপটে ডায়াবেটিস রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সারাবিশ্বের মত আজ বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০২৪।’ এবারের প্রতিপাদ্য- সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের অঙ্গীকার’। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশেষ বাণী দিয়েছেন।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ডায়াবেটিসকে নীরব ঘাতক বলা হয়। কারণ এই রোগ সারা জীবনের রোগ। একবার হলে তা কখনো সারে না। কিন্তু আক্রান্তদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানেই না যে তাদের রোগটি আছে। ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাদ্যাভাস, শারীরিক পরিশ্রম ও নিয়মিত শরীরচর্চা না করা এবং ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের মতো মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী ঝুঁকি তৈরি হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাদ্য খাওয়া, নিয়মিত রক্তপরীক্ষা জরুরি। আক্রান্তরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ ও ইনসুলিন গ্রহণ ও শৃঙ্খল জীবনযাপনে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।
তারা বলেন, ডায়াবেটিস মানবদেহে কোনো কারণে ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাব বা ঘাটতি হলে কিংবা উৎপাদিত ইনসুলিন কার্যকরভাবে শরীরে ব্যবহৃত না হলে বা শরীরের ইনসুলিন নিষ্ক্রিয় থাকলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এই গ্লুকোজ পরে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থাকেই ডায়াবেটিস বলা হয়।
ডায়াবেটিক সমিতির তথ্যমতে , দেশের ৬৩ লাখ ডায়াবেটিকস রোগীকে সেবার আওতায় এনেছে। এখানো ৬৮ কোটি রোগী সেবার বাইরে রয়েছে। দেশের আট মেডিক্যাল কলেজে এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্ট বিভাগ থাকলেও বাকি মেডিক্যাল গুলোতে এ বিষয়ে কোন বিভাগ নেই। সারােেশর সরকারি হাসপাতাল গুলোতে রোগীদের জন্য ৮০ হাজার শয্যা থাকলেও হরমোন জনিত সমস্যায় ভোগা রোগীদের জন্য রয়েছে ১২২ শয্যা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছে মাত্র ৩২২ জন।
এ ব্যাপারে বাংলাশে এন্ডোক্রাইন সোসাইটি সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বব্যিালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম সময়ের বলেন, বিভিন্ন বয়সি ডায়াবেটিস আক্রান্ত পুরুষ ও নারীদের মধ্যে গবেষণা করে দেখেছি, ৩৪ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথি। এ রোগটি হলে আর আগের অবস্থায় ফেরে না। চিকিৎসাও অনেক ব্যায়বহুল এবং এর শেষ পরিনতি অন্ধত্ব।
ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, প্রতি শ জনে আট জন ডায়াবেটিস রোগীর মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক। কিডনির সমস্যা ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন এমন রোগীদের বেশিরভাগেই ডায়াবেটিস জনিত। চোখে ছানি পড়া অর্ধেকেরই কারণ ডায়াবেটিস। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি একটা বড় জনগোষ্ঠির অন্ধত্বের কারণ হয়ে দেখা েিয়ছে। এছাড়া নিসন্তান মায়েরে প্রতি দুই জনে একজনের ডায়াবেটিস রয়েছে, মানসিক অবসা থেকে শুর“ করে মানসিক চাপ এদের একটা বড় অংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আমাদের এক গবেষণা দেখা গেছে, যাদের দুই বছরে বেশি ডায়াবেটিস আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ যৌন অক্ষমতায় ভুগছে।
তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতে ডায়াবেটিস হলো অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বাংলােেশ চোখের রেটিনোপ্যাথি স্কিনিং ব্যবস্থা উপজেলা পর্যায়ে নেই। রোগটি কারো কারো অন্ধন্তের কারণ খোঁজতে গিয়ে শনাক্ত হয়। কিন্তু তখন তিনি অন্ধ। এ চিকিৎসা শুরু থেকে ব্যায়বহুল। এক সময়ে রেটিনোপ্যাথি ইনজেকশনের মূল ছিল ১৮ হাজার টাকা এখন কমে ৬ হাজার হয়েছে। একজন রোগীকে বেশ কয়েকটি ইনজেকশন দিতে হয়। দিলে সেটি অন্ধত্বের সময় পিছিয়ে হয়। আরেকটা হলো লেজার করতে হবে। চিকিৎসা নিলে আগে পাঁচ বছরে অন্ধ হতো এখন হয়তো দশ বছর পরে হবে।
বর্তমান বিশ্বে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার ১ থেকে ২৮ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের মধ্যে এ হার ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস আক্রান্তের হার ৬ থেকে ১৪ শতাংশ। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশের পরবর্তী গর্ভধারণের সময়ে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা দেয়। যে সব নারীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস দেখা যায় তাদের পরবর্তীকালে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি (প্রায় ৫০ শতাংশ, ১০ বছরে)। যে সব মায়ের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ছিল তাদের শিশুদেরও পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি অনেক বেশি।
এ ব্যাপারে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রাশিদা বেগম বলেন, গর্ভধারণের পর যদি রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেলে সে অবস্থাকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলে। এ সময়ে ডায়াবেটিস খুব ভালভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা মা এবং গর্ভস্থ শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক আজাদ খান সময়ের আলোকে বলেন, সারা বিশ্বেই ডায়াবেটিস মহামারী আকার ধারণ করেছে। রোগটি ব্যক্তি এবং তাদের পরিবার, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে কিছু কিছু উন্নত দেশ সেটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। শুধুমাত্র সচেতনতাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের এক মাত্র উপায়। কিভাবে শুরুতে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেটা সবাইকে শিখিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, ডায়াবেটিসের টাইপ-২ ধরনের ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই আগে থেকে সতর্ক থাকলে, শারীরিক পরিশ্রম করলে এবং খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ আনলে সুস্থ্য জীবন যাপন করা সম্ভব।