নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ (আইএফআরসি) এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) যৌথ আয়োজনে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে ৩৪তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে (সংবিধিবদ্ধ) জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান (বিডিআরসিএস) মেজর জেনারেল (অব.) মো. রফিকুল ইসলাম।
সোমবার বিকালে এক সংবাদ বিডিআরসিএসর জাতীয় সদর দপ্তরের প্রশিক্ষণ কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ড. কবির এম. আশরাফ আলম এনডিসি, উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ ও আইএফআরসি’র হেড অব ডেলিগেশন আলবার্তো বোকানেগ্রা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে গত অক্টোবরে এ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ও আইএফআরসি’র গভর্নিং বোর্ডের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. রফিকুল ইসলামে নেতৃত্বে ৪ সদস্যের প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ড. কবির এম. আশরাফ আলম এনডিসি, উপ-মহাসচিব সুলতান আহমেদ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক আরিফা এম সিনহা।
সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের ১৯১টি সদস্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রতিনিধিদল জাতীয় সোসাইটির প্রতিনিধিত্ব করে। এ বছর সম্মেলনে ৯টি প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং মূল প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল। প্রস্তাবনায় প্রয়োজনীয় মানবিক সংকট মোকাবিলায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেয়া হয়। একইসাথে দুর্যোগে সুরক্ষা ব্যবস্থা বৃদ্ধি, আগাম সতর্কতা, মানবিক সাড়াদান পদ্ধতি উন্নত করা এবং অভিবাসন কৌশল ২০২৪-২০৩০ গ্রহণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিশ্বব্যাপী মানবিক সমস্যা মোকাবিলায় আন্দোলন, ঐক্য ও সমন্বয় বৃদ্ধিতে কাউন্সিল অফ ডেলিগেটস রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্টের জন্য একটি কৌশলগত প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে। ৩৪তম আন্তর্জাতিক সম্মেলন এমন একটি মঞ্চ যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে মূলধারার মানবিক কর্মকান্ড বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে চেষ্টা করা হয়।
জেনেভায় জাতিসংঘের কার্যালয় ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে কাউন্সিল অব ডেলিগেটস এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও আর্থ-সামাজিক সংকট ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিগত সাত বছর ধরে বাংলাদেশ ১২লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদান করছে বলে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন তারেক মো. আরিফুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল (অব.) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জনসংখ্যাকে সাহায্য করার জন্য সম্মিলিত দায়িত্বের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরে এ বিষয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে সমাধানের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছি। এছাড়াও মায়ানমারে বাস্তুচ্যুতদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তাদের কষ্ট লাঘবে বিশ্বব্যাপী রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট কর্ণধার, উপস্থিত সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি ও উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক অনুদানসহ সব ধরণের সহায়তা অব্যাহত রাখতে অনুরোধ জানিয়েছি।
একইসাথে বিডিআরসিএস’র মানবিক প্রচেষ্টার জন্য অর্থায়ন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করারও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সংবিধিবদ্ধ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন (আইএইচএল) মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা, এর প্রয়োগ জোরদার করে মানুষের দুর্ভোগ হ্রাস করার লক্ষ্যে আইএইচএল সমুন্নত রাখার জন্য রাষ্ট্রগুলোর অঙ্গীকার পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে। সশস্ত্র সংঘাতের সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) অপপ্রচার থেকে বেসামরিক নাগরিক এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করা, এই নতুন গৃহীত রেজুলেশনটি একটি শক্তিশালী বার্তা প্রেরণ করে, যা আইসিটি নেতিবাচক কার্যক্রম থেকে বেসামরিক জনগণকে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।সুসংহত আইনি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামোর মাধ্যমে দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবেলাকে আরও শক্তিশালী করে তোলা, এটি নিম্ন থেকে মধ্যম আয়ের দেশগুলির উপর বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ক্রমবর্ধমান বিপজ্জনক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে দুর্যোগ আইন ও নীতিগুলির চলমান বিশ্বব্যাপী শক্তিশালীকরণ নিশ্চিত করবে। নিম্ন থেকে মধ্যম আয়ের দেশগুলির উপর বিশেষ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং আইএফআরসির নতুন দুর্যোগ ঝুঁকি পরিচালনা নির্দেশিকা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নীতিগত মানবিক কর্মকাণ্ডে স্থানীয় নেতৃত্ব, সক্ষমতা ও বিতরণ এবং স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করা, এই রেজুলেশনটি সমর্থন বাড়ানোর লক্ষ্যে আন্দোলনের মধ্যে স্থানীয়করণের দিকে মনোনিবেশ করবে। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, জলবায়ু অভিযোজন, মহামারী প্রস্তুতি এবং সংকট পুনরুদ্ধারে কাজ করবে। জলবায়ু এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাব থেকে মানুষকে রক্ষা করা, জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয় এবং মানবিক চ্যালেঞ্জগুলির উপর নেতিবাচক প্রভাবের আলোকে, এই রেজোলিউশনটি রাষ্ট্রীয় পক্ষগুলো এবং রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মধ্যে সহযোগিতার জন্য কাঠামো প্রদান করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সাধারণ পরিষদ, কাউন্সিল অব ডেলিগেটস এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন ছাড়াও, বিডিআরসিএস প্রতিনিধিদল আইএফআরসি’র সভাপতি কেট ফোর্বস, মহাসচিব জাগান চাপগাইন, আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেভিযার কাস্তেলানোস মস্কেরা সহ আমেরিকান রেড ক্রস’র প্রেসিডেন্ট এবং সেক্রেটারি জেনারেল, ব্রিটিশ, সুইডিশ, ড্যানিশ, কাতার এবং নরওয়েজিয়ান রেড ক্রস সোসাইটির প্রধানদের সাথে বেশ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করা হয়।