জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকা, গুজব না ছড়ানোর নির্দেশ 

 টিকা নিয়েছেন ১৮ লক্ষাধিক, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ২৭১ শিক্ষার্থীর

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি)  টিকা নেওয়ার পর ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার এক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া বা অসুস্থ হওয়ার যে খবর ছড়িয়েছে, তার সঙ্গে এইচপিভি টিকার কোনো সংশ্লিষ্টরা নেই। এ বিষয়ে গুজব না ছড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বুধবার  রাজধানীর মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরে এইচপিভি টিকা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু জাফর এ তথ্য জানিয়েছেন।

সম্প্রতি জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে এইচপিভি ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার। এ কর্মসূচি ঘিরে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় টিকা দেওয়ার সময় আতঙ্কে কিছু শিক্ষার্থী জ্ঞান হারান। এ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে নানা গুজব।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়,  দেশে জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) চলমান টিকা কার্যক্রম গত পাঁচ দিনেই ১৮ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন। গ্যাভি, ইউনিসেফ এবং ডাব্লিউএইচও’র সহায়তায় পরিচালিত এই টিকা কার্যক্রমে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির ছাত্রী এবং স্কুলের বাইরে থাকা ১০ থেকে ১৪ বছরের কিশোরীরা বিনামূল্যে পাচ্ছে।

এসময় জানানো হয়, দেশের ৭টি বিভাগে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ জন শিক্ষার্থীকে এইচপিভি টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা সরকারের। এরমধ্যে স্কুল পর্যায়ে এই টিকা পাবে ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৯১৮ জন, বাকিগুলো স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এইচপিভি টিকা নেওয়ার লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত ৩৪ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৮ জন শিক্ষার্থী অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে ১৮ লাখ ১৭ হাজার ৩২৬ জন শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, ১৮ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৭১ জনের সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, এর পয়েন্ট দশমিক ১৪ শতাংশ। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে যা একেবারেই নগন্য। শতকরা ৪ থেকে ৫ জন আক্রান্ত হলে তখন সেটিকে সরাসরি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

ভোলার ঘটনা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, সেখানে দুজন শিক্ষার্থীকে প্রথমে টিকা দেওয়া হয়। টিকা নেওয়ার পর কিছুটা অসুস্থ অনুভব করলে তাদের একটি কক্ষে নিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থা দেখে সেখানকার অন্য শিক্ষার্থীরাও জ্ঞান হারায়। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে টিকা দেওয়া হয়নি। তাই প্রাথমিকভাবে এটিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সাধারণত এইচপিভি টিকা দিলে জ্বর, শরীর ব্যথার মতো কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। তবে এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ দেখা না দিলে শরীরে টিকা কার্যকর হয়েছে কি না, সেটাও বোঝা যায় না বলে জানান স্বাস্থ্যের ডিজি।

এসময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর আমাদের অসংখ্য মায়ের মৃত্যু হয় ক্যান্সারে। পৃথিবীতে এসব ক্যান্সারের মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রকোপ অনেক বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রতিবছর ৬ লাখ ৬০ হাজার নারী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে ৫০ ভাগই মৃত্যুবরণ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অত্যন্ত নিরাপদ এইচপিভি টিকার সঙ্গে বন্ধ্যাত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। সারভাইকাল ক্যানসার প্রতিরোধে এই টিকা অত্যন্ত কার্যকর এবং নিরাপদ। গ্লোবাল অ্যাডভাইজারি কমিটি অন ভ্যাকসিন সেফটি (জিএসিভিএস) তথ্য বিশ্লেষণ করে মতামত দিয়েছে যে, এইচপিভি টিকার সঙ্গে বন্ধ্যাত্বের কোনো সম্পর্ক নেই।

জিএসিভিএস জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ৯টি আর্টিকেল পেপার, রোগ নিরীক্ষণ কর্মসূচির রিপোর্ট এবং রোগতাত্ত্বিক তথ্য বিশ্লেষণ করে টিকার কার্যকারিতা এবং গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে। ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে গবেষণা করে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এইচপিভি টিকার সঙ্গে গুরুতর কোনো বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্পর্ক নেই।

সংবাদ সম্মেলনে টিকা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সহকারী পরিচালক ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ। এসময় তিনি জানান, গত ২৪ অক্টোবর শুরু হওয়া এক ডোজের এ টিকার ক্যাম্পেইন চলবে ১৮ দিন। এই ক্যাম্পেইনে ৬২ লাখ ১২ হাজার ৫৫৯ কিশোরীকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য আমাদের। এই মুহূর্তে সরকারের হাতে ৭৯ লাখ ৪৭৮ লাখ ডোজ টিকার মজুত রয়েছে।

 

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com