ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৯৮৬ মৃত্যুর মধ্যে ১২৭ জনই শিশু

বেশিভাগই মারা গেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এবং গুলিতে 

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘিরে সহিংসতায় দেশজুড়ে ৯৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এবং  গুলিতে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছেন। নিহতদের ৮৬৮ জনের নাম-পরিচয় জানা গেলেও ১১৮ জন অজ্ঞাতপরিচয়। এছাড়াও  নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কমপক্ষে ১২৭ শিশু, ৬ সাংবাদিক, ৫১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং ১৩ মেয়েশিশু ও নারী রয়েছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরেছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

 বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগী পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল ও জাতীয় দৈনিকগুলোর সূত্র থেকে এসব মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া গণমাধ্যম, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ‘যেসব বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যাচ্ছে’, সেটির ওপর ভিত্তি করে সংগঠনটির অনুমান নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১২০০ হবে।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, শিশু ও নারী এবং রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক রয়েছেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এইচআরএসএসের তথ্যমতে, ৯৮৬ জনের মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪৬ জন এবং ৪ আগস্ট থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৬৪০ জন নিহত হয়েছেন। শুধু সাত দিনে (১৮-২০ জুলাই ও ৪-৭ আগস্ট) ৮৫২ জন নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট কমপক্ষে ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট সারা দেশে কমপক্ষে ৭৭২ জন নিহত হয়েছেন। ৬-৮ আগস্ট যখন দেশে কোনো সরকার ছিল না, তখন কমপক্ষে ১৬৪ জন নিহত হয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ৯ আগস্ট থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৯ জন মারা গেছেন। যাঁদের অধিকাংশই পূর্ববর্তী ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এইচআরএসএস বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৮৭৯ জনের মৃত্যুর ধরন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৭ শতাংশ (৬৭৯ জন) গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ১০ শতাংশ (৯১ জন) আগুনে পুড়ে এবং ১০ শতাংশের (৮৪ জন) মৃত্যু হয়েছে পেটানোর কারণে। অন্যান্য কারণে ৩ শতাংশের (২৫) মৃত্যু হয়েছে।

মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করার কথা জানিয়ে এইচআরএসএস বলেছে, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ৬৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের হাতে ৫১৮ (৭৮%) জন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ৫২ জন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হাতে ৫২ জন এবং গণপিটুনিতে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে এইচআরএসএস বলেছে, ৯৮৬ জনের মধ্যে ৭৬০ জনের বয়স সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪ বছরের আহাদ, ৬ বছরের রিয়া গোপসহ প্রায় সব বয়সী মানুষই রয়েছেন। ৭৬০ জনের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু ১২৭ (১৭%), তরুণ বয়সী ৪১৮ (৫৫%), মধ্যবয়সী ১৮১ (২৪%) ও বয়স্ক ব্যক্তি আছেন ৩৪ (৪%) জন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের বয়স জানা গেছে, তাঁদের ৭২ শতাংশের বয়স ৩০–এর মধ্যে।

পেশাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৫৬ জনের পেশা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে এইচআরএসএস। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ২৬৫ (৪৮%), শ্রমজীবী ১৩৩ (২৪%), আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ৫১ (৪%), বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী ৪১ (৭%) জন এবং অন্যান্য পেশায় রয়েছেন ৬৬ (১২%) জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৭১ শতাংশের বেশি।

এইচআরএসএস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ৯৮৬ জনের মধ্যে ১৬ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত ৩৪৬ জন এবং ৪ আগস্ট থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৬৪০ জন নিহত হয়েছেন।

বিভাগভিত্তিক মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে এইচআরএসএস বলছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে সংঘর্ষে ৬১৪ জন, চট্টগ্রামে ১০৪, খুলনায় ৮০, রাজশাহীতে ৬৫, ময়মনসিংহে ৪৪, রংপুরে ৩৫, সিলেটে ২৩ এবং বরিশাল বিভাগে আছেন ১২ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে ৬১৪ জন এবং সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে ১২ জন।

এর আগে গত ৭ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানান,আন্দোলনে ৭৩৭ জন নিহত হয়েছেন। তবে এটা ভেরিফায়েড না।আর

 ২৩ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এই তালিকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫৮১ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়ার কথা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে  জানিয়েছেন।।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com