রোগীদের দিনভর ভোগান্তি দিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন চিকিৎসকরা। এর আগে বুধবার ১২ মার্চ চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কর্মবিরতির কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলোতে বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। তাই দিনভর চরম ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে রোগী এবং স্বজনদের। দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো রোগী ও তাদের স্বজনদের কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে। এসময় মুমূর্ষু রোগী অসুস্থ শিশু ও প্রসূতিদের নিয়ে অসহায় সময় পার করতে দেখা গেছে স্বজনরা।
এদিকে, রোগীদের দিনভর ভোগান্তি দিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার চিকিৎসকরা। বুধবার রাত সাড়ে ১১টা র দিকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং চিকিৎসকরা। রাতে ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের (ডিএমজে) নেত্রী নাজিয়া আলী এ তথ্য জানান।
তিনি আরও জানান, মোট ১৯টি চিকিৎসক সংগঠন মিলে সারাদেশের কর্মবিরতি পালন করেছে। ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের রায় আসার পর ১৮টি সংগঠন কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে পাঁচ দফা বাস্তবায়নের জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি ব্যানার থেকে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় রাজু ভাস্কর্যে সাংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইফতারের আগে কিছু চিকিৎসকদের ওপর আক্রমণ করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চলবে বলেও জানান তারা।
বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কর্মসূচির কথা জানা না থাকায় সকাল থেকেই রোগী ও স্বজনরা ভিড় করেন। কিন্তু ধর্মঘটের কথা জানতে পেরে এবং সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনেকেই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন ,তারপর চলে যান, আবার অনেকেই সেখানেই ঘোরাঘুরি করেন কখন কর্মসূচি প্রত্যাহার হবে সেই আশায়। রোগীদের অনেকেই ছিলেন অস্ত্রেপাচারের রোগী। তাই তারা চিকিৎসা না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দৌড়ঝাপ করেন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু কোন সাড়া মেলেনি। চিকিৎসকদের সাড়া না পাওয়ায় অনেকে বাড়িতে রওয়ানা হন। অনেকেই দিনভর চিকিৎসকদের আশায় ওয়ার্ডের বারান্দায় সময় পার করতে দেখা গেছে।
রোগীদের জিম্মি করে চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কর্মসূচিকে অমানবিক বলছেন ভুক্তভোগীরা। যদিও আন্দোলনত চিকিৎসকরা বলছেন, জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ণ এবং স্বাস্থ্যখাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং চিকিৎসা পেশার মর্যাদা রক্ষায় পাঁচ দফা দাবির বাস্তবায়ন জরুরি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আমলাতান্ত্রিক কূটকৌশলের’ প্রতিবাদে তারা কঠোর কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। তবে আইসিইউ, সিসিইউসহ জরুরি চিকিৎসা বিভাগ চালু ছিল।
এর আগে দুপুরে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে এক দফা দাবি পূরণ হলেও বাকি চার দফা দাবি আদায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা করেন চিকিৎসকরা। তাদের এই পদযাত্রা দোয়েল চত্বরে যেতেই বাধা দেয় পুলিশ। তবে সেখান থেকে বাধা উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগুতে থাকেন চিকিৎসকরা। পরে হাইকোর্ট মোড় হয়ে শিক্ষাভবনের সামনে গেলে সেখানে আগে থেকেই দেওয়া পুলিশের ব্যারিকেডে আটকে যায় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের পদযাত্রা। তখন পুলিশ তাদের অনুরোধ করে, সবাই না গিয়ে প্রতিনিধি পাঠাতে। পরে ১৫ সদস্যদের প্রতিনিধিদলকে সচিবালয়ে পাঠানো হয়। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব ছিলেন ডক্টরস মুভমেন্ট ফর জাস্টিস নামক চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. হাবিবুর রহমান সোহাগ।
এর আগে হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়, এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি) ও বিডিএস (ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি) ডিগ্রি প্রাপ্ত ছাড়া অন্য কেউ তাদের নামের আগে ডাক্তার পদবি ব্যবহার করতে পারবেন না।
বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে গিয়ে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখা হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। পরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরাও পাল্টা আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা হাসপাতালে পরিচালকের কাছে যান। সেবা বন্ধ থাকায় পরিচালকের রুমের সামনে সাধারণ রোগীরা বাগবিতণ্ডা শুরু করেন।
নরসিংদী থেকে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রাবেয়া বেগম বলেন, বেশ কিছুদিন যাবৎ শরীর ব্যাথায় ভুগছিলেন। আজকে সকালে নরসিংদী থেকে ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকা মেডিকেল আসেন। এসেই পড়েন বিপাকে। টিকিট পাইলেএ ডাক্তার দেখাতে পারেননি। ডাক্তার না দেখায়েই চলে যেতে হচ্ছে। আগে থেকে জানলে আমরা তো আসতাম না।
হাজারীবাগ থেকে আশা শাফিন আলম বলেন, বেশ কিছুদন ধরে ঠান্ডা জ্বরে ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসে দেখেন টিকিট কাউন্টার সহ চিকিৎসকদের কক্ষ বন্ধ। ডাক্তার না দেখিয়েই চলে যেতে হচ্ছে। এরকম অনেকেই ফেরত যাচ্ছেন।
হাসপাতালের বর্হিবিভাগের ওয়ার্ডমাস্টার জিল্লুর রহমান বলেন, সকাল থেকে বেলা সারে এগারোটা পর্যন্ত সব বিভাগ খোলা ছিল। সারে ১১টার পরে হঠাৎ করে চিকিৎসকরা এসে টিকিট কাউন্টার সহ সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়। অনেক রোগী ডাক্তার না দেখেই ফেরত যেতে হচ্ছে। পরে কয়েক ঘন্টা বর্হিবিভাগের বন্ধ থাকার পর হাসপাতালের পরিচালকের অনুরোধে আন্দোলনরত মেডিকেল চিকিৎসকরা চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু করেন ।
বুধবার বেলা ১২ দিকে ঢাকা মেডিকেলের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলছে। সেখানে বিভিন্ন বিভাগের সামনে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড় করতে দেখা গেছে।
বেলা সাড়ে ১২ টিকে সেখানে কর্মরত এক কর্মচারি জানান, প্রতিদিন এ সময় অন্তত ৭০০ টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত অনলাইন ও সরাসরি মিলে ১৯০টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
এই বিষয়ে কথা বলতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বহির্বিভাগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। চিকিৎসকদের কর্মসূচির কথা জানা না থাকায় সেখানে সকাল থেকে রোগীদের ভিড় দেখা গেছে। অনেকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে চলে যাচ্ছেন, অনেকে আবার সেখানেই ঘোরাঘুরি করছেন। এক পর্যায়ে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা হাসপাতালের পরিচালকের রুমে সামনে ভিড় করে হট্রগোল শুরু করেন।
রাজধানীল মিরপুর থেকে আসা শাকিল হোসেন নামের এক ভুক্তরোগী বলেন, আমার শাশুড়ির রিপোর্ট দেখাতে এসে দেখি চিকিৎসকদের ধর্মঘট চলছে। এখন কিভাবে রিপোর্ট দেখাবো। চিকিৎসকদের এ ধরনের কর্মমূচি অমানবিক। আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কিসের জন্য তাদের ধর্মঘট পালন করতে হবে?
সোহরাওয়ার্দীর সার্জারি বহির্বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় কাজ করেন জরিনা খাতুন এসময় বলেন, এক ঘণ্টা আগে আসছি। কিন্তু ডাক্তার নাই। আগে জানলে তো আসতাম না।
সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক শরিফুল হাসান রাকিব বলেন, সকাল ৯টা থেকে তাদের কর্মবিরতি চলছে।
ঢাকার ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে সকাল ৯টা থেকে বহির্বিভাগে রোগী দেখা শুরু করার কথা ছিল। সেখানে চিকিৎসকরা রোগী দেখতে শুরু করেন পৌনে ১০টা থেকে। ফলে বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের ভিড় তৈরি হয়। শরীফুল ইসলাম নামে একজন রোগী বলেন, সোয়া নয়টায় আসছি। আধা ঘণ্টা অপেক্ষায় ছিলাম। পৌনে ১০টায় ডাক্তার রোগী দেখা শুরু করেছেন।
এই কর্মসূচিতে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তবিভাগের সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হলেও, ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, শিশু হাসপাতালসহ আরো কয়েকটিতে দেরিতে হলেও কোনো কোনো বিভাগের বহির্বিভাগে রোগী দেখা শুরু হয়।
শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগের একটি কক্ষের সামনে দায়িত্বরত একজন কর্মচারী বলেন, সকালে স্যারেরা এসেছেন কিন্তু রোগী দেখেননি। পরে সবাই পরিচালক স্যারের রুমে যান, এরপর আউটডোরে রোগী দেখা শুরু হয়।
এর আগের দিন মঙ্গলবার ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে দিনভর কর্মসূচি পালনের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলনে কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। পাঁচ দাবিতে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক নাদিম হোসাইন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বুধবার সারাদেশের মেডিকেল ও ডেন্টাল শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করবে। সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোর সেবা এবং বৈকালিক চেম্বার বন্ধ থাকবে। মানবিক বিবেচনায় আইসিইউ, সিসিইউ, ক্যাজুয়ালটি, লেবার রুমের কার্যক্রম চলমান থাকবে।
এছাড়াও বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হল। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সব শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হবেন। সেখান থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অভিমুখে লংমার্চ করবেন তারা।
জানা গেছে, এমবিবিএস ও বিডিএস ছাড়া কেউ ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবে না- এমন দাবি তুলে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবিতে সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টেইনি চিকিৎসকরা।
শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং চিকিৎসক পেশাজীবীদের ১৭ সংগঠন নিয়ে এ ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে এ ঐক্য গড়ে তোলা হয়েছে। এর অধীনে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন আর ইন্টার্নরা প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছেন।বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছেন মেডিকেল অ্যাসিন্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল বা ম্যাটস শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনের পাল্টায় কর্মসূচি পালন করছেন চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষার্থীরাও।
চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবি: এমবিবিএস/বিডিএস ডিগ্রিধারী ছাড়া অন্য কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না। আদালতে চলমান এ সংক্রান্ত আইন ও জনস্বাস্থ্য বিরোধী সব রিট আবেদন আগামী ১২ মার্চের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং বাংলাদেশে ‘ডিপ্লোমা চিকিৎসক’ নামে বিভ্রান্তিকর কোনো পদবির প্রচলন করা যাবে না, যার অস্তিত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা বিশ্বের কোথাও নেই।
‘রেজিস্টার্ড চিকিৎসক (এমবিবিএস /বিডিএস) ছাড়া অন্য কেউ স্বাধীনভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবে না’ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট কোর্স কারিকুলাম সংস্কার কমিটি গঠন করে তাদের কোর্স কারিকুলাম পুনর্র্নিধারণ এবং মানহীন সকল ম্যাটস (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) বন্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের জন্য শূন্যপদে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ এবং চিকিৎসকদের বিসিএসের বয়সসীমা ৩৪ বছরে উন্নীত করতে হবে।অবিলম্বে চিকিৎসক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) তৈরি করতে হবে।অপরদিকে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা সরকারি/বেসরকারি পর্যায়ে নতুন পদ তৈরি, অবিলম্বে দশম গ্রেডে শুন্য পদে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছে।পাশাপাশি তারা চার বছরের অ্যাকাডেমিক কোর্স বহাল রেখে কারিকুলাম সংশোধন ও ভাতাসহ এক বছরের ইন্টার্নশিপ, প্রস্তাবিত ‘অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল বোর্ড’ বাতিল করে ‘মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড অব বাংলাদেশ’ নামে বোর্ড গঠন এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও বিএমঅ্যান্ডডিসি স্বীকৃত ক্লিনিক্যাল বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার সুযোগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়েছে। বুধবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘট বিকাল সাড়ে ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ধর্মঘটের কারণে সাধারণ ওয়ার্ডের পাশাপাশি জরুরী বিভাগে সেবা পায়নি রোগীরা। এতে শত শত রোগী স্বজনরা চরম ভোগান্তি পোহান। শুধু বার্ন হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম সীমিতভাবে চালু আছে। তবে চমেক কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সেবা চালু আছে।
চমেক সূত্র জানায়, বুবার ভোর থেকে প্রতিদিনের মতো রোগীরা চমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসতে থাকেন। বহির্বিভাগের টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট না পেয়ে তারা জানতে পারেন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ধর্মঘটের কথা। এ সময় রোগীরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। স্বজনদের মধ্যে দেখা দেয় উৎকণ্ঠা।
রোগীদের অনেকেই ছিলেন অস্ত্রেপাচারের রোগী। বুধবার চিকিৎসা না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দৌড়ঝাপ করেন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু কোন সাড়া মেলেনি। চিকিৎসকদের সাড়া না পাওয়ায় অনেকে বাড়িতে রওয়ানা হন। অনেকেই দিনভর চিকিৎসকদের আশায় ওয়ার্ডের বারান্দায় সময় পার করেছেন।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা বিঘ্নিত হলেও জরুরী বিভাগে চালু আছে। সিনিয়র ডাক্তাররা সেবা দিয়েছেন রোগীদের। আইসিইউ সেবাতেও কোন সমস্যা হচ্ছে না।
বরিশাল প্রতিনিধি জানায়, পাঁচ দফা দাবিতে সারাদেশের ন্যায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও কর্মবিরতি পালন করেন চিকিৎসকরা। এতে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়েছেন বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মশিউল মুনীর।তবে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং অপারেশন থিয়েটার (ওটি) সহ অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা সেবা চালু আছে বলে জানান তিনি।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়া কর্মবিরতি শুরু করায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে বরিশালে আসা রোগীরা বিপাকে পড়েছেন।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা থেকে বরিশাল মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে এসেছেন মুনসুরা বেগম। তিনি বলেন, এত দূর থেকে এসে চিকিৎসা পেলাম না। এখন আমি কোথায় যাব।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জুয়েল চন্দ্র শীল বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দেন। প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। তবে কর্মবিরতির কারেণে আজ চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে।
কর্মবিরতির বিষয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শরীফউদ্দীন রায়হানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
রাজশাহী প্রতিনিধি জানায়, ৫ দফা দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির পাশাপাশি বহির্বিভাগের জরুরি চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ডাক্তারদের ধর্মঘট রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের গেটের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ইন্টান চিকিৎসকরা।
এদিকে, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা সাথে যোগ দেন সিনিয়র চিকিৎসকরাও।আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব ইন্টার্ন চিকিৎসক কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছে, দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।পরে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।