চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (সিএমসি) হাসপাতালের শিক্ষার্থী নির্যাতনসহ নানা অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে ১৪ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ ৭৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। সতর্ক করে মুচলেকা নিয়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে আরও ১১ শিক্ষার্থীকে।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন গণমাধ্যম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ, বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে। তাঁদের বিস্তারিত অনুসন্ধান শেষে সোমবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ডা. মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, এসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অন্য শিক্ষার্থীকে মারধর, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে বাধা প্রদান, আবাসিক হলে বিশৃঙ্খলা তৈরিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সেসব অভিযোগ তদন্ত শেষে যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সিএমসির অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন ও সিএমসি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগের কারণে ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তের কাজ সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়ে গত ২৭ অক্টোবর দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভা কলেজ সম্মেলন কক্ষে (নতুন একাডেমিক ভবন, ৩য় তলা) অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত সম্মানিত সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়। যা ২৮ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’
এতে আরও বলা হয়, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, গোয়েন্দা তথ্য যাচাই ও অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পরিলক্ষিত হয় যে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের যথেচ্ছাচারী আচরনের কারণে কলেজের সুষ্ঠ শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। তাঁরা সঙ্গবদ্ধ হয়ে কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাস সমুহে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ইতিপূর্বে কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলাকায় সংঘটিত সংঘাতের কারণে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও ছাত্র রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে একক কর্তৃত্ব, গোষ্ঠীগত আধিপত্য এবং ব্যক্তিগত হিরোইজম প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন নিষ্পনীয় ঘটনা ঘটায়।
‘এমতাবস্তায় ৭৫ জনের বিরুদ্ধে ছাত্রাবাসে অবৈধ অনুপ্রবেশ, অবৈধভাবে রুম দখল, অঙ্গীকার ভঙ্গসহ কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট, মারধর ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের যুক্ত থাকা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো। সেইসঙ্গে ফাইনাল প্রফেশনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সিএমসি হাসপাতালের পরিচালক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন’ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় ।