গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুই চিকিৎসকের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুদকে অভিযোগ

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধেসমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা  আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা  হলেন হাসপাতালের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান ডা. মনজুর কাদির আহমেদ। আর এ অভিযোগ এনে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় তেজগাঁও কার্যালয়ে ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান বরাবর আলাদা দুইটি চিঠি দিয়েছেন ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাসরিন বেগম। যদিও  টাকা  আত্মসাতের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত ওই দুই চিকিৎসক।
জানা গেছে, জার্মানিতে পিএইচডি করতে গিয়ে বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটেছিল গবেষক সাবরিনা কামাল তন্বীর। যে টাকা দিয়ে তার চিকিৎসা করানোর কথা ভাবা হয়েছিল, সেই টাকা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার না করে দরিদ্রদের চিকিৎসায় ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেন তন্বীর মা ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নাসরিন বেগম।  সেই মোতাবেক সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ৫ শয্যাবিশিষ্ট নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করতে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তবে সেই ৫০ লাখ টাকা অনুদান গ্রহণ করলেও শুধু নামকাওয়াস্তে আইসিইউ রাখা হয়েছে।  আইসিইউ উদ্বোধন করার পরও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয় ও দুদকে লিখিত অভিযোগে অধ্যাপক নাসরিন বেগম বলেন, আমার বড় কন্যা সাবরিনা কামাল তন্বী উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ মে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। যে টাকা দিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করাতাম সেই টাকায় গরীব  মানুষের চিকিৎসা করা হলে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে, সেই ভাবনা থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করি। তারা বলেন, সাভার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ নাই সেখানে আইসিইউ প্রতিষ্ঠা করবেন।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মানবতার ফেরিওয়ালা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাতে সাংবাদিক সম্মেলনে ২ টি চেকের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা আইসিইউ অনুদান হিসাবে প্রদান করি। অর্থ হস্তান্তর সভায় প্রধান আলোচক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অর্থ দাতা হিসাবে আমি বক্তব্য রাখি।
অধ্যাপক নাসরিন বেগম বলেন, আমি টাকা প্রদানের পর থেকে বহুবার আইসিইউ স্থাপন ও কাজের অগ্রগতির বিষয়ে ফোন করে জানতে চাইলে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার ও গণস্বস্থ্য কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান ডা. মনজুর কাদির আহমেদ সময়ক্ষেপণ ও টাল-বাহানা শুরু করেন। এক পর্যায়ে আমি ৬ মাস পর আগস্ট মাসে ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করে কাজের ধীরগতির কারণ জানতে চাই।  তিনি তাৎক্ষণিক এক মাসের মধ্যে আইসিইউ স্থাপন ও উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারনের জন্য মুহিব উল্লাহ খোন্দকারকে কড়া নির্দেশ দেন। আমি গণস্বাস্থ্য ধানমন্ডি অফিস থেকে চলে আসার ৫ মিনিট পর ডা. মনজুর কাদির ফোনে আমাকে রূঢ় ভাষায় জিজ্ঞেস করেন আমি কেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে আইসিইউ নিয়ে বিচার দিলাম। উত্তরে আমি বলি আপনি জাফরুল্লাহ ভাইকে জিজ্ঞেস করেন। তার ২ মাস পর ‘সাবরিনা কামাল তন্বী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র’ আইসিইউ উদ্বোধন হয়।
আইসিইউর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ।
এ বিষয়ে অধ্যাপক নাসরিন বেগম অভিযোগ করেন, ডা. জাফরুল্লাহ কেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেই এমন প্রশ্নের জবাবে আমাকে ডা. মুহিব উল্লাহ বলেন, জাফর ভাই অসুস্থ তাই আসেন নাই। অথচ সেদিন রাতে টেলিভিশন ও পত্রিকার নিউজ এ দেখতে পেলাম ঐ সময়ে তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখছেন। আমি মনে করি, আইসিইউর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে অনুপস্থিত রাখার অন্যতম কারণ দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেওয়া।
অভিযোগে অধাপক নাসরিন বেগম বলেন, এই কেন্দ্রটি স্থাপনে অতিরিক্ত যে অর্থ প্রয়োজন হবে তা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রদান করবে যা চুক্তিনামায় ছিল। অথচ তারা সেই অর্থ তো দেয়নি উল্টো সাভারে থাকা ডায়ালাইসিসের বেড ও  ঢাকা নগর হাসপাতাল আইসিইউ থেকে ৩টি কার্ডিয়াক মনিটর এনে এবং ডায়ালাইসিসের রোগীদের আইসিইউ সিটে রেখে কোন রকমে উদ্বোধন নাটক করেন। লিখিত অভিযোগে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন যুক্ত করে দেন অধ্যাপক নাসরিন বেগম।
তবে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দুই চিকিৎসক। এ ব্যাপারে সাভারের  গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার  বলেন, এই সব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। তিনি  এর চেয়ে  বেশি কথা বলতে রাজি হননি।
আরেক চিচিৎসক ডা. মনজুর কাদির আহমেদ  বলেন, আমাদেরকে হেয় করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে এবং বিভিন্ন ধরনের যড়যন্ত্র হচ্ছে।  আর টাকা আত্মসাৎ করার কোন প্রশ্নই উঠে না। আমরা যখন দ্বায়িত্বে ছিলাম তখনই আইসিইউ চালু করতে যন্ত্রপাতি কেনা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজও হয়েছে। আর এখানে এককভাবে কিছু করার সুযোগ নেই। সবই ট্রাস্ট্রির মাধ্যমে হয়। তাই আত্মসাৎ করার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি যদি টাকাই আত্মসাৎ করতাম তাহলে তো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ব্যবস্থা নিতো। কিন্তু আমি এখনও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রর অন্য বিভাগে কাজ করছি। কিন্তু তাহলে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com