নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ক্যান্সারের কারণে বিদেশে চিকিৎসা করতে গিয়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টা বিএসএমএমইউ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত র্যালিপূর্ব সমাবেশে এ আশঙ্কার কথা জানান উপাচার্য। এসময় জানানো হয়, ২০২১ সালের ক্যান্সার স্টাডি অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে সারাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।
‘দূর হোক ক্যান্সার চিকিৎসার সকল অন্তরায়’ প্রতিপাদ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনকোলিজ বিভাগ আয়োজিত বর্ণাঢ্য র্যালি উদ্বোধন করেন ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ফোয়ারা থেকে শুরু হয়ে বটতলা প্রদক্ষিণ করে এ-ব্লক, টিএসসি, ডি ব্লক, জামে মাসজিদ পার হয়ে ক্যান্সার ভবন এফ ব্লকে গিয়ে শেষ হয়।
র্যালিপূর্ব সমাবেশে অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ বর্তমান সময়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়। দিনে দিনে ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখনই জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
ভিসি বলেন, ক্যান্সারের কারণে বিদেশে চিকিৎসা করতে গিয়ে মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। ক্যান্সার রোগীরা মৃত্যুর পর তার সন্তানদের জন্য আর কিছুই রেখে যেতে পারেন না। তাই দেশেই ক্যান্সারের সর্বোত্তম চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিএসএমএমইউয়ে ক্যান্সারের আক্রান্ত গরীব রোগীদের বিনামূল্যে পরীক্ষার সেবা প্রদান ও ওষুধ সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও ক্যান্সারের চিকিৎসা কার্যক্রম জোরদার করতে সার্জিক্যাল অনকোলোজি, ক্লিনিক্যাল অনকোলোজি, অকুলোপ্লাস্টি অনকোলোজি, ইএনটি অনকোলোজি, ইউরো অনকোলোজি, গাইনোকোলোজিক্যাল অনকোজি, শিশু হেমাটোলোজি অনকোলোজি, হেমাটোলোজি, হেপাটোলোজিক্যাল অনকোলোজি, রেসপাইরোটারিক্যাল অনকোলোজি, ম্যাক্সিলোফ্যাসিয়াল অনকোলোজিসহ সকল ধরনের ক্যান্সারের বিভাগ ও ইউনিট নিয়ে অনকোলোজি অনুষদ খোলার যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেন উপাচার্য।
ডা. শারফুদ্দিন বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসার দেশব্যাপী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সচল রাখতে হবে। বিএসএমএমইউয়ে ক্যান্সার চিকিৎসার বিদ্যমান সুযোগ সুবিধার সাথে সাথে বিশ্বের সর্বশেষ প্রযুক্তি সংযোজনের মাধ্যমে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
অন্য বক্তারা ক্যান্সার রোগীদের শুরুতেই শনাক্ত করার উপর জোর দেন এবং দেশে ক্যান্সার রোগীদের সঠিক সংখ্যা নিরুপণে স্ক্রিনিংসহ দেশব্যাপী রেজিস্ট্রির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
র্যালিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, অনোকলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. নাজির উদ্দিন মোল্লাহ্, হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন শাহ, শিশু অনকোলোজি হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমান, অনকোলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা.সারোয়ার আলম, অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ, অধ্যাপক ডা. জিল্লুর রহমান ভূইয়া, সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাদিয়া শারমিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশিদ, পরিচালক (সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল) ব্রি. জে.(অব.) ডা. আব্দুল্লাহ আল হারুন, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রি.জে. ডা. রেজাউর রহমান, অতিরিক্ত পরিচালক ডা. পবিত্র কুমার দেবনাথসহ অনেকে ।
এদিকে, রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এভারকেয়ার হাসপাতাল আয়োজিত ক্যানসার সচেতনতামূলক বিশেষ গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী আছে ২২ লাখ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী আছে ২২ লাখ। প্রতি বছর মারা যাচ্ছে দেড় লাখ রোগী। ২০৩০ সালে যখন এসডিজি অর্জন করব, তখন বিশ্বের ৭৭ শতাংশ ক্যানসার রোগী হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। আর বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ রোগী থাকবে এই অঞ্চলে। সুতরাং আমরা খারাপ অবস্থায় আছি।
খারাপ অবস্থার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা অবহেলা করি রোগকে। কিংবা আমাদের রোগ আছে, তবু আমরা এড়িয়ে চলি। এমনকি আমরা ব্রেস্ট ক্যানসারের রোগীকে চতুর্থ স্টেজে নিয়ে আসি। যাকে আর বাঁচানো যায় না। অথচ আর্লি ডায়গোনোসিস নিজেই করতে পারে। সেটা যদি আমরা শেখাতে পারতাম, তাহলে অনেক রোগীকে বাঁচাতে পারতাম।
উপাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রী তিনটি রোগ কিডনি, হার্ট ও ক্যানসারকে প্রাধান্য দিয়ে আট বিভাগে আটটি হাসপাতাল তৈরি করে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আমরা বিভাগ অনুযায়ী রোগীদের চিকিৎসা দিতে পারব। কিন্তু দুই লাখ রোগীর জন্য আমাদের দুটি রেডিওথেরাপি সেন্টার থাকার কথা, সেদিকে গেলাম না। আমাদের দরকার ৭০টা সেন্টার, আছে ৩৫টা। মানে ৫০ শতাংশ সেন্টার আছে।
আস্থাহীনতার জন্য রোগীরা চিকিৎসার জন্য পাশের দেশে চলে যায় উল্লেখ করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, আমাদের দেশে যা হতো, সেখানে গেলেও একই অবস্থা হয়। কিন্তু ওই দেশে চিকিৎসার পর তাদের আর কোনও অর্থ থাকে না। এ জন্য আমাদের আর্লি ডায়গোনোসিস করা প্রয়োজন। রোগীদের বোঝাতে হবে যে যেখানেই যাওয়া হোক, চিকিৎসা একই হবে। এতে বাইরে যাওয়ার প্রবণতা কমত। আর আমরা যদি বাইরে যাওয়া রোধ করতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যতে দেশের আর্থিক ক্ষতি হবে।
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবির, বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিয়েশন অনকোলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. কাজী মোশতাক হোসেন ও এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বক্তব্য দেন।