নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দেশজুড়ে চলমান সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করায় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের (সিওমেক) এনাটমি বিভাগের প্রভাষক ডা. শাকেরা নার্গিসকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) তাকে এ নোটিস দেওয়া হয়। সিওমেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শিশির রঞ্জন চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত ওই নোটিসে বলা হয়েছে, ‘যেহেতু আপনি ছাত্র-ছাত্রীদের কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সভায় অংশগ্রহন এবং বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরুপ বক্তব্য ও দেশদ্রোহী বক্তব্য প্রদান করেন।’
‘আপনার এহেন আচরনের জন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হইবে না এই কৈফিয়ত নামা প্রাপ্তির ৩ (তিন) কার্য দিবসের মধ্যে জবাব দানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হইল’—যোগ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
চলমান বিক্ষোভে সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সড়কে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ (চবি) দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। রাজধানী ছাড়াও এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য শহরগুলোতেও।
আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় সারাদেশে এখন পর্যন্ত সাতজন নিহত হয়েছেন।
চলমান আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৫ জুলাই) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢাকা মেডিকেলের এমবিবিএসের সকল বর্ষের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় সারাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল থেকেই স্ব স্ব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ শুরু করেন বিভিন্ন মেডিকেল শিক্ষার্থীরা। রাস্তায় নেমে সড়কও অবরোধ করা হয়েছে কোথাও কোথাও। এ ছাড়াও আন্দোলনের খবর পাওয়া গেছে নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদেরও।
সমাবেশ থেকে কোটা সংস্কারের পাশাপাশি ঢাকা, জাহঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়।
এদিকে আন্দোলন শুরুর পর রাজধানী ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে একাধিবার হামলার ঘটনা ঘটে। হামলা হয় নওগাঁ মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের ওপরও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে এই হামলা হয়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনরত মেডিকেল শিক্ষার্থীরা সকাল সাড়ে ১১টায় ক্যাম্পাস থেকে বের হন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ১১টা ৫১ মিনিটে তাদের ওপর প্রথম হামলা হয়। এরপর তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তখন দ্বিতীয় দফায় সাড়ে ১২টার দিকে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।
হামলায় এক নারী শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে যায়। অনেকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নারীদের ছাত্রাবাসে ঢুকে আরও ভয়াবহ হামলা এবং যৌন হয়রানির হুমকি দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।