নিজস্ব প্রতিবেদক।।
দেশের শহরকেন্দ্রিক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ব্যতিক্রমী ফটোভয়েস প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। অভিনব এবং অংশগ্রহণমূলক ফটোভয়েস পদ্ধতি ব্যবহার করে নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা তুলে আনাই ছিল এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য এই প্রদর্শনী উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর সফিউদ্দিন শিল্পালয়ে কানাডা সরকারের অর্থায়নে ও হেলথব্রিজ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় আইপাস বাংলাদেশ এবং এর সহযোগী সংস্থার আয়োজনে ‘সাইলেন্ট ফ্রেমস লাউড ভয়েসেস : এক্সপ্লোরিং এসআরএইচআর থ্রু কমিউনিটি লেন্স’ শীর্ষক এই ফটোভয়েস প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্টের অতিরিক্ত সচিব ও পরিচালক এএফএম আলাউদ্দিন খান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য (সার্ভিসেস) পরিচালক ডা. মো. মুনীরুজ্জামান সিদ্দীকী।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (সিসিএসডিপি) ডা. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সিরাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত, হাইকমিশন অফ কানাডা ইন বাংলাদেশের হেড অফ কো-অপারেশন জো গুডিংস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. সাইদ রুবায়েত।
প্রদর্শনীতে প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা সিরাক বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২৫ জন তরুণ স্বেচ্ছাসেবীর (প্রজনন স্বাস্থ্যবন্ধু) সংগৃহীত ২৬টি ছবির গল্পের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার নিম্ন আর্থ-সামাজিক এলাকায় বসবাসকারী নারী ও কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার বিষয়ক সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর আলোকপাত করেন। প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত ছবির গল্পগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, মাসিক নিয়মিতকরণ, গর্ভপাত পরবর্তী সেবা, প্রজননে জবরদস্তি, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং নারী ও কিশোরীদের অধিকার ভঙ্গসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এসব বিষয়ে আরও বৃহত্তর পর্যায়ের আলোচনা এবং কমিউনিটির ঐক্যবদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টি করাই এই ফটোভয়েস প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য।
প্রদর্শনীর গ্যালারি ঘুরে এএফএম আলাউদ্দিন খান বলেন, ছবিগুলো নীরব কিন্তু কিছু না বলেও এই ছবিগুলো আমাদের অনেক বার্তা দেয়, যা সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে পার্থক্যগুলোকে তুলে ধরে। ছবি ও গল্পগুলোর মাধ্যমে আমাদের সামাজিক অবস্থান, শিক্ষার অবস্থা ও অসঙ্গতিগুলো উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তনগুলো অবশ্যম্ভাবী, কিন্তু সঠিক শিক্ষা ও তথ্যের অভাবের কারণে তারা নানান ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় এবং ফাঁদে পড়ে। তারা বেশিরভাগ সময়েই থাকে কল্পনার জগতে। তাই আমাদের দেশের কিশোর-কিশোরীদের জন্য এই প্রদর্শনীর মতো উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যা তাদের প্রয়োজন ও চিন্তাভাবনার বিষয়টিকে বিবেচনা করে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।
জো গুডিংস বলেন, এই প্রদর্শনীর ছবিগুলো দেখে যদি অনুভব করা যায়, তবেই প্রকৃত দৃশ্যপট বোঝা সম্ভব। এভাবে যদি সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা যায়, তবে, সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াটাও সহজ হবে।
এই উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, এই প্রদর্শনীটি আমাদের ভাবতে বাধ্য করেছে যে আমাদের আসলে কী পরিবর্তন আনতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. সাইদ রুবায়েত বলেন,আমরা আমাদের সমাজের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্যই গবেষণা করি। ‘ফটোভয়েস ইনিশিয়েটিভ’ আজকাল প্রতিকূলতা এবং অজ্ঞতাকে মোকাবিলা করার জন্য একটি হাতিয়ারের মতো কাজ করে। আমরা এই প্রদর্শনীতে ‘ফটোভয়েস’ পদ্ধতিই ব্যবহার করেছি যেখানে সরাসরি ভুক্তভোগী এবং তাদের ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে প্রকৃত গল্পগুলো আমরা শুনতে পেরেছি। আপনাদের উপস্থিতির মাধ্যমে আমাদের এই অনুষ্ঠানটিকে আরও অর্থবহ করে তোলার জন্য আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
ফটোভয়েস প্রদর্শনীসহ এই উদ্যোগের কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে আইপাস বাংলাদেশ এবং মাঠপর্যায়ে উদ্যোগটি সিরাক বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছে ।