‘কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল মেডিকেলে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’

by glmmostofa@gmail.com

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:

দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ ইকরামের র‍্যাগিংয়ের অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতা-কর্মীরা।

বুধবার (১মে) দুপুরে মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন হলের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবি জানান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজোয়ানুল ইসলাম (স্বনন) ও হৃদয় কান্তি বিশ্বাস তীর্থ। এ সময় র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্ত ওই মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র জয়, শাফীন, তাহের, লিমন এবং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাফি, সৌরভ পাল, নাফিজ, অনিমেষ, তাবিব, অনিক ও শাওন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওই মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোবারক মিয়া, মারুফ, সাদিত, অভীক ও হাসান।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৪ এপ্রিল রাত দেড়টার দিকে ফয়সাল আহমেদ ইকরাম ছাত্রাবাস থেকে বের হয়ে যান এবং সারা রাত বাইরে থেকে ভোর সাড়ে ৫টায় ছাত্রাবাসে ফেরেন। ফয়সাল ভোরে তাঁর ৩০১ কক্ষে এসে নক করেন এবং দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় তাঁরই রুমমেট সৌরভ পালের ওপর ক্ষিপ্ত হন এবং আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। এ রকম ঘটনা আগেও বহুবার তিনি ঘটিয়েছেন। সৌরভ পাল বিষয়টি আমাদের জানালে সমাধানের জন্য দ্রুত তৃতীয় তলায় যাই। কারণ আগেও ফয়সাল আহমেদ ইকরাম তাঁরই ব্যাচমেট রাফিকে মারধর করেছিলেন। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে জন্য ভোর ৬টার দিকে তৃতীয় তলায় ফয়সালের কক্ষে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা ইকরামের রুমমেট মাহাদী ও মুস্তাফিজকে বাইরে যেতে বলি। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ঘটনাটি সৌরভ ও ফয়সালের মাঝেই সমাধান হোক।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, একপর্যায়ে সৌরভ পালকে ভেতরে আসতে বলি। কিন্তু সৌরভকে দেখে আবারও ক্ষিপ্ত হন ফয়সাল। ঘটনাটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আমরা সৌরভকে বেরিয়ে যেতে বলি এবং ফয়সালের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু ফয়সালের উগ্র আচরণ দেখে এক মিনিট পর আমরা ৩০১ নম্বর কক্ষ থেকে নিজেদের মান-সম্মান রক্ষার্থে বের হয়ে চলে যাই। কারণ ফয়সালের ভাষ্য ছিল, তার মতোই চলবেন, তার মতোই থাকবেন। তিনি লোকাল, তিনি কাউকে মানবেন না এবং হোস্টেলের নিয়মকানুন এবং শিক্ষকদের কোনো তোয়াক্কা তিনি করেন না। চলে যাওয়ার সময় আমরা ইকরামের ব্যাচমেটদের বলে আসি যে, তোমাদের ব্যাচের সমস্যা তোমরা নিজেদের মাঝে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করো। যদি না পারো তবে অধ্যক্ষ স্যার এবং শিক্ষকবৃন্দ এবং তাঁর পরিবারকে জানাও। আমরা ফয়সালের কক্ষে মাত্র দুই মিনিট অবস্থান করি। যা সিসিটিভি ফুটেজেও দৃশ্যমান। এ সময় মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোনো গালাগালির ঘটনাও ঘটেনি।

লিখিত বক্তব্যে তাঁরা বলেন, এর মধ্যে ফয়সাল একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলায় মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার অভিনয় করে। নাটকের শেষ পার্ট হিসেবে হাতলায় মাথা ইমার্জেন্সিতে গিয়ে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। যেহেতু ফয়সাল ইতিপূর্বে শিক্ষক, সিনিয়র ও ব্যাচমেটদের সঙ্গে খুবই বাজে আচরণ করে আসছিলেন। শিক্ষক ও পরিবারকে তাঁর আচরণ সম্পর্কে অবহিত করার কথা শুনে তিনি এক নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফয়সাল অভিযোগ করেন যে, তাঁকে ৩০ মিনিট ধরে ২০ জন মিলে মারধর করে। এ ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য এই যে, তাঁর শোল্ডার ডিজলোকেশন হয়েছে। কিন্তু ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ও অর্থোপেডিকস স্যারের এক্সামিনেশনে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি যা হাসপাতালের ভর্তির কাগজে উল্লেখ আছে।

ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে এটি প্রমাণিত যে, তাঁর রুমে আমরা মাত্র দুই মিনিটের মতো অবস্থান করি। গত ২৪ এপ্রিল ভোরে ফয়সাল ৩০১ নম্বর কক্ষ থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যান। এ সময় এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর চলাচলে কোনো অসংগতি দেখা যায়নি। তাঁর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক। কারণ ভর্তির সময় ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার তাঁর গায়ে কোনো ধরনের মারামারির চিহ্ন পাননি। মেডিসিনের ডাক্তাররাও তাঁকে পরীক্ষা করে মারামারির চিহ্ন পাননি। সিসি টিভি ফুটেজ এবং তাঁর হাসপাতালে ভর্তির কাগজ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, তাঁর পুরো ঘটনাটিই সাজানো নাটক।

এরআগে, লিখিত অভিযোগে ফয়সাল আহমেদ ইকরাম বলেন, ‘বিনীত নিবেদন এই যে, আমি মো. ফয়সাল এসএন-১২তম ব্যাচ, রোল-০৬, সেশন ২০২২-২৩ অত্র কলেজের একজন নিয়মিত ছাত্র। বিগত ২২ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কলেজ মাঠে বহিরাগতদের অনৈতিক কার্যক্রম দমনের উদ্দেশ্য এসএন-১০ এর ভাইদের সাথে আমরা এসএন-১২ মাঠে উপস্থিত হই। আমি মাঠে উপস্থিত হতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় এসএন-১০ এর আসাদুজ্জামান ফয়সাল ভাই আমার মা-বাবাকে নিয়ে গালিগালাজ করেন। এই ক্ষেত্রে আমি ভাইকে মা নিয়ে গালিগালাজ করতে নিষেধ করি এবং তৎক্ষণাৎ বিষয়টা ভাই বেয়াদবি হিসেবে নিয়েছেন বুঝতে পেরে তার কাছে ক্ষমা চাই এবং ভাইকে বিষয়টা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ জানাই।

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com