করোনা প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা 

জটিল ও উপসর্গ থাকা রোগীদেরই কেবল পরীক্ষা: ডিজি 

by glmmostofa@gmail.com

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

 পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। দেশেও এ ভাইরাসের নতুন একটি উপধরনে আক্রান্ত হওয়ার শষ্কা রয়েছে। তাই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাতে বলা হয়, দেশে করোনার সংক্রমণ উদ্বেগের পর্যায়ে নয়। প্রতিবেশী তিনটি দেশে সংক্রমণ কিছুটা বেশি হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

বুধবার দুপুরে বর্তমানে দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর ১১ দফা নির্দেশনা পড়ে শোনান। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদফতরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা; হাসপাতাল শাখা; রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ (আইইডিসিআর) অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তারা।

লিখিত বক্তব্যে মো. আবু জাফর বলেন, ভাইরাসজনিত সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনাভাইরাসের কয়েকটি নতুন সাব–ভ্যারিয়েন্ট এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার প্রতিরোধে দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কগুলোয় নজরদারি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়গুলো জোরদার করার বিষয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সাংবাদিকদের বলেন, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত দেশে করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন ১৫৮ জন। আর জুন মাসের প্রথম ১০ দিনে শনাক্ত হয়েছেন ৫৪ জন। এর অর্থ, সংক্রমণে উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য নেই। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংক্রমণ বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে অধিদফতরের সিডিসির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মো. হালিমুর রশীদ বলেন, থাইল্যান্ডে সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। ভারত ও মালয়েশিয়াতেও সংক্রমণ বাড়ছে।

আইইডিসিআরের প্রতিনিধি জানান, দেশে এখন করোনার যে ধরন দেখা যাচ্ছে, তা অমিক্রন বা অমিক্রনের উপধরন। এর উপসর্গ তীব্র হতে দেখা যায়নি। তবে সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই।

স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতি: এ বিষয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক জানান, তারা ইতিমধ্যে ২৮ হাজার দ্রুত করোনা শনাক্তকরণ কিট পেয়েছেন। বুধবার ১০ হাজার আরটি-পিসিআর কিট পাচ্ছেন। এসব কিট কাল-পরশুর মধ্যে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে পৌঁছানো হবে।

হাসপাতাল শাখার পরিচালক আবু হোসাইন মো. মইনুল আহসান বলেন, দেশের সব হাসপাতালকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর মহাখালীর উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে সাধারণ ৫০ শয্যা ও আইসিইউর ১৫ শয্যা শুধু করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর মুগদা ও কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৃথক শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা রোগীর জন্য খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হবে।টিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ১৭ লাখ টিকা বিভিন্ন টিকাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে আগেই। টিকা আগের নিয়মেই দেওয়া হবে। ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ, দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা মানুষ, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, এমন মানুষ টিকা পাবেন।

এইচএসসি পরীক্ষা ও রাজনৈতিক কর্মসূচি:

চলতি মাসের ২৬ তারিখ এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও কর্মসূচি বাড়বে। একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এই দুটি বিষয়ে চিন্তাভাবনা কী?

জবাবে মহাপরিচালক বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা তরুণ। তাদের শুধু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই হবে। অন্যদিকে ভিড়ভাট্টা বা জনসমাগম এড়িয়ে চলার যে বার্তা সাধারণ মানুষকে দেওয়া হয়েছে, সেই একই বার্তা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে অধ্যাপক আবু জাফর করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দেন।

সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসাধারণের করণীয়:

এর মধ্যে রয়েছে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে এবং উপস্থিত হতেই হলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার।  শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার ,হাঁচি বা কাশির সময় বাহু বা টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন।

ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন।ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন (অন্তত ২০ সেকেন্ড)। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ ধরবেন না। আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন।

সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয়: জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকুন।রোগীর নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে বলুন, রোগীর সেবাদানকারীরাও সতর্কতা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার এবং প্রয়োজন হলে কাছের হাসপাতালে অথবা আইইডিসিআর (০১৪০১১৯৬২৯৩) অথবা স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩)এর নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়।

এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০ জন। যদিও এই সময়ে কারো মৃত্যু হয়নি। এর আগের দিন মঙ্গলবার মৃত্যু শূণ্য দিনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৩ জন।

বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,   গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন দুইজন। এর ফলে এ সংখ্যা ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৮০ জনে দাঁড়িয়েছে।

মহামারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক শূণ্য ৫ শতাংশ। আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার  শূণ্য ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে  দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে মোট ২৯ হাজার ৫০০ জন। আর  এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ জনে দাঁড়িয়েছে।

 

You may also like

সম্পাদক : হামীম কেফায়েত

গ্রেটার ঢাকা পাবলিকেশন নিউমার্কেট সিটি কমপ্লেক্স ৪৪/১, রহিম স্কয়ার

নিউমার্কেট, ঢাকা ১২০৫

যোগাযোগ : +8801712813999
ইমেইল : news@pran24.com